সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়বিচারের প্রতীক জাস্টিশিয়া ভাস্কর্য নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই এবার দেশের উত্তর জনপদ বিভাগীয় শহর রাজশাহিতে একাধিক ভাস্কর্য মাটিতে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৭ ছাত্র জড়িত বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য শিক্ষার্থীরা ওই ভাস্কর্য গড়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার রাতে ভাস্কর্যগুলি ভাঙা হয়। এর মধ্যে দুজন ছাত্র ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন। তারা চারুকলায় নিরাপত্তা ঘাটতির প্রতিবাদে এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানান। তবে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও সাধারণ শিক্ষার্থী এ ঘটনার পিছনে সাম্প্রদায়িক শক্তি জড়িত বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কেননা কোনও শিক্ষার্থী এ ধরনের দাবি জানাননি কর্তৃপক্ষের কাছে।
ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে ফেলার ঘটনাটিকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যকার মলয় ভৌমিক। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তিনি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাঁর বক্তব্য নিয়ে সরাসরি সম্প্রচার করে। ওই সময় এক ছাত্র সরাসরি সম্প্রচারে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন ছাত্র তাঁকে জানান, চারুকলায় ভাস্কর্যগুলি অরক্ষিত অবস্থায় রাখার প্রতিবাদে তাঁরা এ কাজ করেছেন। ভাস্কর্য ভাঙার প্রতিবাদে সকালে মানববন্ধন শেষে সম্মেলন করে ছাত্ররা দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন। মলয় ভৌমিক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আমরা জানি। এ কাণ্ড কোনওভাবে সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। সত্যিই যদি এটা প্রতিবাদ হত, তাহলে রাতের অন্ধকারে তারা এ কাণ্ড ঘটাত না। এ কাণ্ডর মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিল ভাস্কর্য নিয়ে যা খুশি তা-ই করা যায়।’ চারুকলার শিক্ষক মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কনক কুমার পাঠক এবং গ্রাফিকস ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিরউদ্দিন জানান, শিক্ষার্থীদের গড়া এ ভাস্কর্য মাঠে রাখা ছিল। রাতে এ কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। শতাধিক ভাস্কর্য মাঠে উল্টে ফেলে রাখা হয়েছে। আর কিছু ভাস্কর্য শিক্ষকদের কক্ষের দরজার সামনে রাখা হয়েছে। মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা শরিফ আনোয়ার বলেন, ‘আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রাতে দায়িত্বে থাকা একজন নিরাপত্তারক্ষী জানান, তিনি রাত ১২টার সময়ও ভাস্কর্যগুলি ঠিকঠাক দেখেছেন।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ভাস্কর্য সরিয়ে নিতে বা ঢেকে দিতে প্রধান বিচারপতিকে সোমবারই পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাস্কর্য নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে দেশ জুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। শাসকদলের সঙ্গে শরিক ১৩ দলের রয়েছে ব্যাপক মতভেদ। হাসিনা বলেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতিকে বলেছি, সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে শাড়ি পরানো গ্রিক ভাস্কর্য সরিয়ে নিন। কেননা কাছেই রয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দান। সেখানে ঈদের নামাজ পড়া হয়।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.