সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: তখনও লকডাউন ঘোষনা হয়নি ঝাড়খন্ডের রাঁচি শহরে। কিন্তু রাঁচির করমটুলির একটি নির্মাণ সংস্থা মঙ্গলবার দুপুরেই ঘোষনা করে দেয়, তাঁরা ঝাঁপ বন্ধ করে দেবেন। সেখানে থাকতে হলে নিজের ঝুঁকিতে থাকতে হবে। করোনা আতঙ্ক তখন চেপে ধরে পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহির উসির গ্রামের ১৭ জন দিনমজুরকে। কিন্তু এত পথ পেরিয়ে তারা বাড়ি যাবেন কীভাবে? ট্রেন বন্ধ, চলছে না বাসও। শুরু করেন হাঁটা। একুশ ঘণ্টা হেটে ৭৫ কিমি পেরিয়ে বুধবার ঝালদা পৌঁছলেন তাঁরা।
বুধবার যখন তাঁরা ঝালদা পৌঁছেছেন ততক্ষণে শরীর অসাড়। শহরের বাসস্ট্যান্ডেই নেতিয়ে পড়েন ওই ১৭ জন যুবক। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই ঝালদার দুই জনপ্রতিনিধি তাঁদের পাশে দাঁড়ান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পৌঁছে দেন বাড়িতে। ঝালদা এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি শেখ সুলেমান ও ঝালদা পুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মহেন্দ্র রুংটার এই মানবিকতায় ভীষনই খুশি এলাকার বাসিন্দারা। ওই ১৪ জন দিনমজুরদের মধ্যে স্বরূপ দাস এদিন সন্ধেয় বাড়ি ফিরে বলেন, “কীভাবে যে সারা রাত হেঁটে ঝালদা শহরে এসেছি বলে বোঝাতে পারব না। মনে শুধু একটা ভয় কাজ করছিল, কিছু হয়ে যাবে না তো! সেই ভীতিতে কখন যে প্রায় ৭৫ কিমি পথ পার হয়ে এসেছি বুঝতে পারিনি। তবে ঝালদার দুই জনপ্রতিনিধি যেভাবে আমাদের সেবা করলেন তা আমরা ভুলতে পারব না।”
রাঁচির করমটুলিতে একটি নির্মাণ সংস্থায় সাঁওতালডিহির এই ১৭ জন দিনমজুর বহুদিন ধরে কাজ করছেন। তাঁরা ভাবতে পারেননি, এই বিপদের সময় ওই সংস্থা এভাবে হাত তুলে নেবে। ফলে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কার্যত অসহায় বোধ করতে থাকেন তাঁরা। তাঁদের মধ্যে রণজিৎ রাজোয়াড়, চক্রধর রাজোয়াড় বলেন, “ওই দিন দুপুর দুটো নাগাদ আমরা রাঁচি থেকে বার হই। রাস্তায় পানীয় জলের সমস্যা হচ্ছিল। দীর্ঘপথ চলতে চলতেই মুড়ি, বিস্কুট কিনে খাই।”তবে এদিন ঝালদায় পা রাখার পর আর তাদের কোনও অসুবিধা হয়নি।
ঝালদা এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ–সভাপতি শেখ সুলেমান বলেন, “আমি খবর পাওয়া মাত্রই ঝালদা বাসস্ট্যান্ডে যাই। পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়। তারপরই ওই ক্লান্ত যুবকদের খাবারের ব্যবস্থা করি।” ভাত, ডাল, তরকারি দিয়ে পেটপুরে খেয়ে তাঁরা যেন প্রাণ ফিরে পান। এরপর ওই সংস্থার দুটি অ্যাম্বুল্যান্সে করেই তাঁদের গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। ঝালদা পুর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মহেন্দ্র রুংটা বলেন, “ঝাড়খন্ডের ওই নির্মাণ সংস্থা অমানবিকতার পরিচয় দিলেও এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আমরা ওই মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
ছবি: অমিত সিংদেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.