ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: এখনও তার মুখে বুলি ফোটেনি ভাল করে। তবে হামাগুড়ি দিয়ে বাথরুমে চলে যায় একাই। গামলা থেকে মগে করে জল নিয়ে ঢালতে শুরু করে গায়ে। এক-দু’বার নয়, দশ-বারোবার। সারাক্ষণ গা ভিজিয়ে না রাখলে তিষ্ঠোতে পারে না খুদে। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুরের (West Medinipur) নোনা নারায়ণচকের বাসিন্দা তুষার দাস নামে ওই খুদে এক বিরল অসুখে আক্রান্ত।
জানা গিয়েছে, জন্মের পরই মৃত্যু হয়েছে ওই খুদের মায়ের। পিসির কোলেপিঠেই বড় হচ্ছে। একরত্তি ভাইপোর অদ্ভুত কাণ্ড দেখে হতবাক তিনি। তাঁর কথায়, “সামান্য গরম পরলেই অদ্ভুত আচরণ করত খুদে। বাথরুমে গিয়ে এক বালতি জলে নেমে দাঁড়িয়ে থাকত।” গ্রীষ্মকালেই মাথায় হাত। দুপুর হলেই ধুমজ্বর। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই জ্বর থাকত। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কাছে যায় শিশুটির পরিবার। জ্বরের সময় শুনে প্রথমটায় হতবাক হয়ে পড়েন চিকিৎসকও। তাঁর কথায়, “আমার কাছে যখন আনা হয় তার আগে টানা তিন মাস ধরে ওর জ্বর ছিল। জ্বরের স্থায়িত্বকালের সময়টা শুনেই আমার সন্দেহ হয়। শুধু দিনেরবেলা কেন? তবে কি শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে?” এই প্রশ্নের উত্তর পেতে কিছু পরীক্ষার দরকার ছিল। তৎক্ষণাৎ শিশুটিকে আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে পাঠান তিনি। সেখানেই চিকিৎসকরা প্রথমে স্টার্চ আয়োডিন টেস্ট করেন। সারা গায়ে আটা আর আয়োডিন মাখিয়ে দীর্ঘক্ষণ গরমে রেখে দেওয়া হয় বাচ্চাটিকে। দীর্ঘক্ষণ গরমে থাকলেই রোমকূপ থেকে ঘাম বেরিয়ে আসবে। আয়োডিন ঘামের সংস্পর্শে আসলেই বেগুনি রং নেবে। কিন্তু তুষারকে বসিয়ে রেখে লাভ হয়নি। ছিটেফোঁটা ঘাম বের হয়নি শরীর থেকে। ঘর্মগ্রন্থি না থাকার প্রাথমিক প্রমাণে সিলমোহর পরে। এরপর ত্বকের বায়োপসি করতেই পরিষ্কার হয়ে যায় গোটা বিষয়। জানা যায়, বিরলতম অসুখ ‘এনহাইড্রোসিস’-এ আক্রান্ত ওই শিশু। যা জিনঘটিত অসুখ। ডা. ঘটক জানিয়েছেন, “অ্যাক্রাইন গ্ল্যান্ড নেই। তাই ঘাম বের হতে পারছিল না বলেই শরীর ভিতর থেকে গরম হয়ে যাচ্ছিল। তাই জন্যেই শুধু দিনের বেলা জ্বর আসছিল। পরিবারের লোকেদের জানাই, এটি জিনঘটিত বিরল অসুখ।” স্কিন বায়োপসিতে ধরা পরে শিশুটির সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডও নেই। এই গ্রন্থি থেকে একধরনের তৈলাক্ত তরল পদার্থ বেরোয়। যা ত্বককে কোমল রাখে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, এ কারণেই তুষারের চামড়া খসখসে হয়ে গিয়েছে।
সাধারণত জিনঘটিত এমন অসুখে অন্যান্য উপসর্গও দেখা যায়। অনেক সময় বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশ ঘটে না। কারও কারও ব্যথার অনুভূতি থাকে না। কিন্তু তুষারের এসব কিছুই নেই। শুধু ঘাম হয় না এতটুকু। তবে কি এটা আইসোলেটেড এনহাইড্রোসিস? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, তা যদি হয় তবে এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম। পৃথিবীতে আইসোলেটেড এনহাইড্রোসিস নিয়ে চার, পাঁচজন বাচ্চার খোঁজ মিলেছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, “গরমকালে বাচ্চাটিকে রাখা অসম্ভব। কারণ গরমে আমাদের ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম বেরিয়ে শরীরকে ঠান্ডা রাখে। ওর এই প্রক্রিয়া কাজই করছে না। পরামর্শ দিয়েছি যে করে হোক ওর জন্যে এসির ব্যবস্থা করার।’’ কিন্তু, নিম্নবিত্ত পরিবার কিনে উঠতে পারেনি এসি। শিশুটির পিসি জানিয়েছেন, দুটো টেবিল ফ্যান সব সময় ওর মাথার কাছে রাখতে হয়। গরম একটুও সহ্য করতে পারে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.