Advertisement
Advertisement

Breaking News

অন্নপ্রাশন

মেয়ে হওয়ায় জায়গা মেলেনি বাবা-মায়ের সংসারে, হাসপাতালেই অন্নপ্রাশন খুদের

এক সপ্তাহের মধ্যেই হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হবে শিশুটিকে।

Abandoned child left alone, hospital authority organished her rice ceremony
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:July 24, 2019 5:28 pm
  • Updated:July 24, 2019 5:28 pm

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: কন্যাসন্তান হওয়ায় বাবা-মায়ের সংসারে ঠাঁই মেলেনি। জন্মের পরই হাসপাতালে ফেলে বাড়ি চলে যান পরিবারের সকলে। কিন্তু পরিবার মুখ ফেরালেও ভাগ্য সহায় ছিল খুদের। তাই অন্য এক পরিবারেই বেড়ে উঠছে সে।যেখানে তাঁর জন্ম হয়েছে, সেই হাসপাতালই এখন রূপসার পরিবার। আর সেই পরিবারের তরফেই ধুমধাম করে সাত মাসের খুদের মুখে তুলে দেওয়া হল ‘মামাভাত’।

[আরও পড়ুন:‘তৃণমূল না ছাড়লে লাশ পড়বে’, কাউন্সিলরকে হুমকি পোস্টার মেমারিতে]

গত ডিসেম্বরে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভরতি হয়েছিলেন হাওড়ার শ্যামপুরের গৃহবধূ। সেখানেই ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু কন্যাসন্তানকে মেনে নিতে পারেননি বধূর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে শিশুকন্যাকে হাসপাতালে রেখে দিয়েই বধূকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। পরে হাসপাতালের তরফে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, দু’টি মেয়ে রয়েছে ফলে তৃতীয় কন্যাসন্তানের দায়িত্ব নেওয়া আর তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরপরও হাসপাতালের তরফে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয় ওই দম্পতির সঙ্গে। কিন্তু, কোনও সদুত্তর মেলেনি। পুলিশ বা প্রশাসনকে জানিয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের সকলের সঙ্গেই বেড়ে উঠতে থাকে শিশুটি।  

Advertisement

হাসপাতালের তরফেই তার নাম দেওয়া হয় রূপসা। বয়স সাত মাস হতেই মঙ্গলবার হাসপাতালের তরফে আয়োজন করা হয়েছিল অন্নপ্রাশনের। নার্সরাই বাড়ি থেকে রান্না করে এনেছিলেন ভাত, ডাল, শুক্তো, মাছ, পায়েস। আনা হয়েছিল মিষ্টিও। মেডিক্যাল কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, নার্স, কর্মী সকলেই এক এক করে রূপসার মুখে তুলে দেন ভাত। উপহার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় নতুন পোশাক, নানা ধরণের খেলনা। ছোট্ট রূপসাকে নিয়ে চলে হাসি, আনন্দ আর মজা। 

Advertisement

[আরও পড়ুন:‘মমতাকে খুন করে ফেলব’, মুখ্যমন্ত্রীকে প্রাণনাশের হুমকিতে অভিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষক]


এসবের মধ্যেই অবশ্য, আড়ালে অশ্রু লুকিয়ে ফেলার পর্বও চলেছে পুরদস্তুর। কারণ তারা জানেন আর ক’দিন বাদেই রূপসা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাবে। প্রিয়জনেদের ছেড়ে তার ঠাঁই হবে কোনও সরকারি হোমে। মেডিক্যাল কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপ্যাল ডা: রামপ্রসাদ রায় বলেন, “নিজেকে রূপসার অভিভাবক ভেবে নিয়েছি। তাই এখন অনেক দায়িত্ব। প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি যাতে সরকারি নিয়মকানুন মেনে এমন কোনও হোমে ছোট্ট রূপসাকে পাঠানো যায় যেখানে ওর আগামী সুরক্ষিত থাকবে।” অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। বলেন, “আর তো বেশিদিন নেই। সপ্তাখানেকের মধ্যেই হয়ত রূপসা চলে যাবে কোন সরকারি হোমে। ও ভাল থাকুক, এটাই প্রার্থনা করি।” আধুনিক সমাজ পুরুষের সমমর্যাদা দিয়েছে নারীকে। নানা ক্ষেত্রে পুরুষকেও পিছনে ফেলে এগিয়েছেন মহিলারা। কিন্তু এখনও সমাজের একটা অংশ রয়ে গিয়েছে অন্ধকারের গভীরে। কন্যাসন্তান আজও যে সমাজের ওই অংশের কাছে বোঝা হয়েই রয়ে গিয়েছে তা চোখে আঙুল দিয়ে আবারও দেখিয়ে দিল রূপসা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ