সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: ব্লু হোয়েলের আতঙ্ক কাটার আগেই হাজির হয়ে গেল আরও এক প্রাণঘাতী মোবাইল গেম। মোমো চ্যালেঞ্জ। খেলার নামে এখানেও আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাজস্থানের আজমেঢ়ে যখন এই প্রাণঘাতী গেমের শিকার হল দশম শ্রেণির এক ছাত্রী, ঠিক তখনই এই রাজ্যের জলপাইগুড়ির এক কলেজ ছাত্রীও মোমো চ্যালেঞ্জের খপ্পরে।
‘আমি মরে যাব’। মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে অভিমানে হোয়াটসঅ্যাপের স্ট্যাটাসে এ কথা লেখেন জলপাইগুড়ির কলেজ পড়ুয়া। তারপরই শুরু হয় অচেনা নম্বর থেকে একের পর এক মেসেজ আসা। মারণ খেলায় সঙ্গী হওয়ার আবেদন। ভয়ে পেয়ে যান ছাত্রী। দ্রুত দাদার কাছে যান। তারপর দাদারই পরমর্শে ব্লক করে দেন ওই অচেনা নম্বরটি। অভিযোগ দায়ের করেন থানাতেও।
সোমবার রাতে জলপাইগুড়ির পিডি কলেজ ছাত্রী কবিতা রায়ের মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে এইভাবেই মেসেজ আসে মোমো গেমের নাম করে। মেসেজে বলা হয়, ‘হাই আই অ্যাম মোমো’। কবিতা জিজ্ঞাসা করেন, ‘হু?’। উত্তর আসে, ‘ইটস মাই নেম। শ্যাল উই প্লে আ গেম’।
[পথ দেখাল মল্লিকা, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ এবার উত্তরবঙ্গে]
এই মারণ খেলার বিষয়টি জানাজানি হতে সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় মোমোর বিকৃত মুখের ছবি। আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া, ব্লু হোয়েল গেমের মতোই একটি মারণ খেলা এই ‘মোমো’। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবারই আজমেঢ়ের এক দশম শ্রেণির পড়ুয়ার আত্মহত্যার খবর আসে, যে কিনা মোমোর শিকার হতে পারে। বাড়ি থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পড়ুয়ার বন্ধুদের থেকে জানা গিয়েছে, মোমো চ্যালেঞ্জের শেষ সিঁড়িতে পৌঁছে গিয়েছিল ওই ছাত্রী। বাড়ির লোকজনও প্রায়ই ওই নাবালিকাকে গেমটি খেলতে দেখেন। তবে কেউ বিষয়টি বুঝতে পারেননি। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
মোমো চ্যালেঞ্জ ইতিমধ্যেই আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর্জেন্টিনার এক ১২ বছরের কিশোরী এই গেমের প্রথম শিকার। এই রাজ্যের জলপাইগুড়ির মতো প্রত্যন্ত জেলায় মোমোর থাবা পৌঁছে যাওয়ায় উদ্বেগ আরও ছড়িয়েছে।
[মদ ছুঁলেই চরম শাস্তি, নেশামুক্তি অভিযানের আইকন বীরভূমের ‘মদের গ্রাম’]
কবিতার মোবাইলে পাঠানো মেসেজের মতোই প্রথমে খেলার জন্য আবেদন জানিয়ে পরিচয় করে মোমো। খেলতে রাজি হলে হোয়াটস অ্যাপে গেম লিঙ্ক আসে। যার নাম ‘মোমো চ্যালেঞ্জ’। একটি ধাপ উত্তীর্ণ হলে আসবে আর একটি লিঙ্ক। এ ভাবেই এগিয়ে যাবে খেলা। যার চরম পরিণতি মৃত্যু। শুধু জলপাইগুড়ির কবিতারই নয়, আরও অনেকেরই মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে ‘মোমো’ গেমের মেসেজ এসেছে বলে মঙ্গলবার রাত থেকে জানা যাচ্ছে।
জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় আইসি বিশ্বাশ্রয় সরকার জানান, ‘মোমো’র নাম করে মোবাইলে মেসেজ এসেছে। এই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেছে পান্ডাপাড়া বটতলার এক কলেজ ছাত্রী। ঘটনাটি খুবই উদ্বেগের। সাইবার সেলের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সচেতনতার জন্য প্রচারও চালানো হবে।
কবিতা জানিয়েছে, মোমো খেলার বিষয় আগেই সে জানত। এটাও সে জানত যে, এটি ব্লু হোয়েলের মতোই একটি মারণখেলা। যেখানে নানা শর্ত এবং শেষে হুমকি দিয়ে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যাবে গেমের অ্যাডমিন। বোনের সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার পর মনমরা হয়েছিল কবিতা। মা তাকে চড় মারেন। তাতেই আরও বিষাদগ্রস্ত হয়ে নিজের মোবাইলে স্ট্যাটাস বদলে দেন কবিতা।
[পিকনিক করতে গিয়ে জল ডুবে মৃত্যু যুবকের, খুনের অভিযোগ পরিবারের]