বাবুল হক, মালদহ: ভারতের চুরি করা মোবাইল দেদার পাচার হচ্ছে বাংলাদেশে। আর এই কারবারে ‘করিডর’ হয়ে উঠেছে মালদহ। বিএসএফের টহলদারি সত্ত্বেও চলছে চোরা কারবার বলে অভিযোগ। বিষয়টা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে একের পর এক চোরাই মোবাইল উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নামার পরই পুলিশের হাতে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সোমবার সীমান্ত এলাকা থেকে ১২৫টি দামী চোরাই মোবাইল উদ্ধার করে মালদহের ইংলিশবাজার থানার পুলিশ। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বলে খবর। এদিন পাচারের পথে দুই কারবারিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সূত্রের খবর, ধৃতরাই পুলিশের জেরায় স্বীকার করেছে চোরাই মোবাইলগুলি তারা সীমান্ত টপকে বাংলাদেশে পাচার করত। কিন্তু তার আগেই পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায়। জেলা পুলিশের গোয়েন্দারা জানান, বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় চোরাই মোবাইলের খুব চাহিদা। সেখানে চড়া দামে এই দেশের চোরাই মোবাইলগুলি বিক্রি হয়ে যায়। তাছাড়া পাচার করতেও তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয় না কারবারিদের। সীমান্তের এপার থেকে কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে মোবাইল ফোনগুলি প্যাকেটে ভরে ছুঁড়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে! টের পায় না পাহারারত বিএসএফ জওয়ানরাও। বাংলাদেশের ক্যারিয়াররা তা সহজেই কুড়িয়ে নিয়ে যায়।
[আরও পড়ুন: ‘চার পয়সার নকুলদানা! তৃণমূল পাগল কেনে না’, নওশাদকে বেনজির আক্রমণ শওকতের]
শুধু এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন বাংলাদেশে পাচারের মূল কারণটিও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। মালদহ জেলা পুলিশের তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, ভারতের যে কোনও প্রান্ত থেকে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনে বিকল্প ‘সিম’ কার্ড চালু করলেই গোয়েন্দারা টাওয়ার লোকেশন দেখে সেগুলি উদ্ধার করতে সক্ষম হন। চোরাই মোবাইলে বিকল্প ‘সিম’ চালু করলেই সঙ্গে সঙ্গে টাওয়ার লোকেশন পেয়ে যান তদন্তকারীরা। ফলে চোরাই মোবাইল ব্যবহারকারীর বা ক্রেতাদের দরজায় পৌঁছে যায় পুলিশ। আর এতেই কারবারের কৌশল বদলে ফেলেছে চোরাই মোবাইল চক্রের পান্ডারা। গোয়েন্দারা জানান, ভারত থেকে চুরি করা মোবাইল ফোন বাংলাদেশে পাচার করে দিতে পারলেই আর টাওয়ার লোকেশন ধরা পড়ার ভয় থাকে না। প্রতিবেশী দেশে গিয়ে মোবাইল উদ্ধার করা পুলিশের পক্ষেও সম্ভব হয় না। এখন তাই মোবাইল ফোন পাচারের রমরমা কারবার চলছে সীমান্ত এলাকায়। করিডর হয়ে উঠেছে মালদহ।
যদিও বিএসএফের কোনও আধিকারিক বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। অভিযোগ, মালদহের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ক্রমেই মোবাইলের চোরা কারবারিদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠছে। এদিন মেহদিপুর সীমান্ত এলাকা থেকে ১২৫টি চোরাই মোবাইল সমেত দু’জনকে ইংলিশবাজার থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধৃত মাবুদ হোসেন ও সহিদুল রহমানের বাড়ি কালিয়াচক থানার মহব্বতপুর এলাকার সীমানা লাগোয়া দুইশতবিঘি গ্রাম। বাংলাদেশে পাচারের উদ্দেশে মোবাইলগুলি নিয়ে তারা সীমান্ত এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ চোরাই মোবাইল সমেত একজনকে গ্রেপ্তার করে। কালিয়াচক থানার শেরশাহি গ্রামের বাসিন্দা ধৃত মাহিদুর রহমানের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৬৮টি চোরাই মোবাইল ফোন। যেগুলির বাজার মূল্য অন্তত ৮ লক্ষ টাকা। সীমান্ত এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার সময় তাকে আটক করে তল্লাশি চালিয়ে এই সাফল্য পায় বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশ। গত সপ্তাহে কালিয়াচক থানার পুলিশও সীমান্তবর্তী জানুটোলা এলাকার একটি বাড়িতে হানা দিয়ে ১০০টি দামি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করে। তবে ওই বাড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি। পুলিশ তার খোঁজ চালাচ্ছে।