Advertisement
Advertisement
বেঁচে উঠলেন বৃদ্ধা

স্বামীর মৃত্যুদিনে পুনর্জন্ম, ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েও বেঁচে ফিরলেন অশীতিপর বৃদ্ধা

প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই বৃদ্ধা।

An old woman survived from drowning in Burdwan's Kalna
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:September 3, 2019 8:45 pm
  • Updated:September 4, 2019 1:00 pm

রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: রাখে হরি মারে কে। মঙ্গলবার এমনই এক আশ্চর্য ঘটনার সাক্ষী থাকল কালনাবাসী। ভরদুপুরে নদীতে মানুষ ভেসে যাচ্ছে দেখে কয়েকজন ভটভটি নৌকা নিয়ে গিয়েছিল উদ্ধার করতে। কিন্তু কাছে যেতেই থ। বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন শীর্ণ এক মহিলা। গঙ্গায় ওইভাবে থুত্থুরে কোনও বৃদ্ধা যে ভেসে থাকতে পারেন, বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না উদ্ধারকারীরা। জল থেকে টেনে তোলা হয় তাঁকে। বৃদ্ধার বুক তখন ওঠানামা করছে। মুখ থেকে কোনও আওয়াজ বেরচ্ছে না। শরীর ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

তারপরের কাহিনি শুনলে মনে হবে গল্পকথা। বছর তিনেক আগে বর্ধমানের কালীবাজারের সেই মহিলার ঘটনারই যেন দ্বিতীয় পর্ব। সেবার ভরা বর্ষায় দামোদরে পড়ে গিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা, তারপর প্রায় ৭০ কিলোমিটার ভেসেছিলেন নদীতে। পরদিন তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছিল হুগলি জেলার কোনও এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে। আর এবার পূর্বস্থলী থানার নারায়ণপুরের বছর আশির লক্ষ্মী বিশ্বাস তেমনই একটি ঘটনা ঘটালেন। মঙ্গলবার ভোর থেকে প্রায় চারঘণ্টা ধরে ভাগীরথীতে মরণবাঁচন লড়াই করেন। জয়ীও হন। প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভেসে থাকেন। ঘটনাচক্রে মঙ্গলবারই ছিল বৃদ্ধার স্বামীর মৃত্যুদিনও। আর এদিনই যেন পুনর্জন্ম পেলেন লক্ষ্মী।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: বিয়ে মানেনি পরিবার, মানসিক অবসাদে আত্মহত্যার চেষ্টা যুবতীর ]

তিনি এদিন ভোরে নারায়ণপুরে ভাগীরথীর ঘাটে গিয়েছিলেন। যখন তিনি জলেও নামেন, তখন ত্রিসীমানায় কেউ নেই। অশক্ত শরীর জলের তোড় সামাল দিতে পারেনি। ভেসে যান। শুরু লড়াই। এরপরই যেন মিরাকল ঘটে। ঠিকভাবে হাঁটতে যাঁর কষ্ট হয় তিনিই কিনা প্রাণের দায়ে দিব্যি হাত-পা ছুঁড়ে ভেসে থাকার চেষ্টা করলেন আর সফলও হলেন। ওইভাবেই প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভেসে ছিলেন তিনি। ঘণ্টাচারেক পরে পাটুলিয়ার কাঠুরিয়া ঘাটের কাছে তাঁকে ভেসে যেতে দেখেন পূর্বস্থলী থানার দুই সিভিক ভলান্টিয়ার তন্ময় পাল ও পিন্টু সর্দার। তাঁরা তখন নদীতে থাকা একটি ভটভটির মাঝিকে বিষয়টি দেখতে বলেন। ভটভটির চালক ও কয়েকজন মিলে বৃদ্ধাতে নদী থেকে তুলে পাডে় নিয়ে আসেন। তখন কার্যত অচেতন বৃদ্ধা। দমবন্ধ পরিবেশ থেকে বাইরে এসে যেন প্রাণপণে শ্বাস নিচ্ছেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে পূর্বস্থলী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সুস্থ হয়ে কোনওক্রমে বাড়ির ঠিকানা বলেন। খবর পেয়ে আসেন তাঁর ছেলে তেঁতুল বিশ্বাস।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: মিড ডে মিলে মুড়ি-পিঁয়াজ বালির স্কুলে, পড়ুয়াদের কেক- বিস্কুট খাওয়ালেন স্থানীয়রাই ]

তিনি জানান, সকাল থেকেই মাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাঁরা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর নারায়ণপুর ঘাটের কাছে মায়ের লাঠিটি পান। বিপদ ঘটেছে, তখনই আঁচ করেন। ঘাটের কাছে জলে খোঁজাখুঁজিও শুরু করেন তাঁরা। ওই বৃদ্ধার জামাই সুজিত পুরোকাইত বলেন, “জলে ডুবে গিয়েছে ভেবে খোঁজাখুঁজি করি। কয়েক ঘণ্টা পরে আমরা ধরেই নিয়েছিলাম উনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু কীভাবে বেঁচে গেলেন ভাবতেই অবাক লাগছে।” তাঁর মেয়ে সোনা বিশ্বাস বলেন, “মা আগে আমাদের গল্প বলত, মা নাকি ছোটবেলা থেকে খুব ভাল সাঁতার কাটতে পারত। যার জন্য বাড়িতে অনেক বকাও খেয়েছে। এই বয়সে এসে সেই সাঁতারই আমার মায়ের জীবন বাঁচাল বলেই মনে হয়।” আর বৃদ্ধা এদিন রাত পর্যন্ত ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কোনওক্রমে বলেন, “জানি না কী হয়েছিল। জলে ভেসে যাই। তারপর আর কিছুই মনে নেই।”

ছবি- মোহন সাহা

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ