শেখর চন্দ্র, আসানসোল: “শরীর ভাল নেই। হাতে পায়ে যন্ত্রণা। মাথায় ব্যথা। ব্যালেন্স পাচ্ছি না। সুগার ২৫০। জামিনটা দিয়ে দিন স্যার।” তিহাড় জেল থেকে আসানসোল সিবিআই আদালতের বিচারককে কাতর আরজি অনুব্রত মণ্ডলের। গত ১১ মে শেষবার তিহাড় জেল থেকে আসানসোল সিবিআই আদালতে ভারচুয়াল শুনানি হয়েছিল অনুব্রত মণ্ডল ও সায়গল হোসেনের।
ওইদিন সায়গল বাজেয়াপ্ত হওয়া গয়না ফেরতের দাবি করেছিলেন আইনজীবী মারফত। অনুব্রত ওইদিন বিচারককে জানিয়েছিলেন, তাঁর চালমিলে চুরি হচ্ছে। শ্রমিকদের টাকা দিতে পারছেন না। সিবিআই আদালতে ভোলে ব্যোম রাইসমিলের অ্যাকাউন্ট ডি’ফ্রিজের আবেদন করেছিলেন কেষ্ট। এরপর পরবর্তী শুনানির ধার্য হয় ৭ জুন। তার মাঝে গরমের ছুটি ছিল আদালতে। আদালত খোলার পর ৭ জুন অর্থাৎ বুধবার ফের আসানসোল সিবিআই আদালতে তিহাড় জেল থেকে অনুব্রত ও সায়গলের ভারচুয়াল শুনানি হয়। যদিও অনুব্রত ও সায়গলের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেননি এদিন।
অনুব্রত মণ্ডল ও বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা হয়। বিচারক প্রশ্ন করেন, “শরীর কেমন আছে অনুব্রতবাবু? শরীর খারাপ হলে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে তো?” অনুব্রত উত্তরে বলেন, “হ্যাঁ, নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে। চিকিৎসা ভাল হচ্ছে। এবার জামিন দিয়ে দিন স্যার। ৯ মাস হয়ে গেল।” বিচারক আরও বলেন, “আপনার তো হাই কোর্ট থেকে জামিন খারিজ হয়েছে। অন্য মামলায় আপনি তিহাড় জেলে আছেন। আমি চাইলেই তো জামিন দিতে পারি না। আপনার আইনজীবীকে পিটিশন জমা করতে বলুন। দু’পক্ষের কথা শুনে কিছু বলতে পারব।” এরপর শারীরিক অসুস্থতার কথা তুলে ধরে কাতর আরজি অনুব্রতর। বলেন, “স্যার, শরীর ভাল নেই। হাতে-পায়ে যন্ত্রণা। মাথায় ব্যথা। ব্যালেন্স পাচ্ছি না। সুগার ২৫০।” অসুস্থতার কথা শুনে বিচারক বলেন, “আমরা আগেও ভাল চিকিৎসার জন্য তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে বলেছি। আবারও ভাল চিকিৎসার জন্য অর্ডার কপিতে লিখে দিচ্ছি।”
[আরও পড়ুন: ‘সৃজিতের ছবিতে সিরাজ হচ্ছি না…’! সাফ জানালেন দেব, বিতর্কে ‘ফোড়ন’ বিরসারও]
অন্যদিকে, এদিন সায়গলের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত সোনা-রুপোর গয়নার কিঞ্চিত মাত্র ফেরত দিতে সম্মত হয় সিবিআই। আসানসোল সিবিআই আদালতে গরুপাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্য বাজেয়াপ্ত গয়নার তালিকা পেশ করেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীর সামনে। সেখানে গরু পাচার কাণ্ডের তদন্ত শুরু হওয়ার আগের তিনটি গয়নার উল্লেখ করে সেগুলি ফেরত দিতে সম্মতি জানায় সিবিআই। তার মধ্যে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের সোনার গয়না ও ১৭ হাজার টাকা মূল্যের রুপোর গয়না রয়েছে। ওই তালিকা থেকেই সিবিআই জানায় সায়গলের কাছ থেকে ৩৬ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭০৯ টাকার গয়না বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ফেরত দিতে চাওয়া গয়না বাদে বাকি গয়নাগুলির হয় রশিদ পাওয়া যায়নি। আবার যে রশিদ পাওয়া গিয়েছে সেগুলির অধিকাংশই ভুয়ো বলে দাবি করেছে সিবিআই। যার ফলে ওই গয়না ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।
সায়গলের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু বলেন, তাঁর মক্কেলের (সায়গল হোসেন) স্ত্রীও চাকরি করেন। দু’জনের আয় দিয়ে গয়না কেনা হয়েছে। ২০১৪’র টেট পরীক্ষা দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করেন তিনি বলে আইনজীবী দাবি করেন আদালতে। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “কেউ চাকরি করে ৬ বছরে ৩৬ লক্ষ টাকার গয়না কিনতে পারেন?” সায়গলের আইনজীবীর দাবি খারিজ হয়ে যায়। তাই আদালতের সিদ্ধান্তে মোট বাজেয়াপ্ত সাড়ে ৩৬ লক্ষ টাকা গয়নার মধ্যে শুধু ৯০ হাজার টাকার গয়না ফেরত পাবেন সায়গলের স্ত্রী।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে আদালতে। এবার তিহাড়ে সায়গল ও অনুব্রতকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই। আসানসোল সিবিআই আদালতে একথা জানান তদন্তকারী আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্য। মে মাসের শেষে তিহাড়ে দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তার নথি বিচারকের সামনে তুলে ধরেন তিনি। তখনই বিচারক সেই নথি পড়তে গিয়ে সিবিআইকে জিজ্ঞাসা করেন, ওই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে কিনা। প্রত্যুত্তরে সুশান্ত ভট্টাচার্য জানান, চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। ওই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার ফের আবেদন করা হবে বলে জানান সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক।