তন্ময় মুখোপাধ্যায়: বিশ্বমঞ্চে ফের বাংলার সাফল্য। কৃত্তিবাসের রামায়ণের সাত কাণ্ড শাড়িতে তুলে এনেছেন এক বঙ্গসন্তান। সেই কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিও মিলল এবার। নদিয়ার ফুলিয়ার তাঁতশিল্পী বীরেন বসাককে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দিল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ইউনিভার্সিটি। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতবর্ষ প্রথম কেউ এমন সম্মান পেলেন।
[সবচেয়ে বড় পোস্টারের পর গ্রাফিক নভেল, ফের চমক ‘আমাজন অভিযান’-এর]
নয়াদিল্লিতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মানিত করা হয় এই তাঁতশিল্পীকে। রামায়ণের অনুবাদক কৃত্তিবাস ওঝার মতো বীরেন ফুলিয়ার সন্তান। বাংলাকে তাঁতের শাড়িতে পথ দেখানো এই জনপদের প্রতিনিধি বীরেন গতানুতিক শাড়ির পথ ছেড়ে অন্যরকম ভাবনার কাজকর্ম শুরু করেন। কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণকে শাড়ির মধ্যে নিপুণভাবে তুলে এনেছিলেন। যাকে বলা হয় ওয়াল হ্যাঙ্গিং। তসরের উপর সুতোয় এই জামদানি কাজ করা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। বিপুল কর্মকাণ্ডের জন্য সময় লেগেছিল ৩ বছর। তারপর লিমকা বুক অফ রেকর্ডে জায়গা করে নেয় তাঁর এই শিল্পকর্ম। সম্প্রতি লিমকার থেকে এই তথ্য সংগ্রহ করেছিল ওই ব্রিটিশ সংস্থা। এই নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছিল। এরপর ডক্টরেট হিসাবে ঘোষণা করা হয় এই বঙ্গসন্তানকে। আন্তর্জাতিক সংস্থার এই স্বীকৃতি উচ্ছ্বসিত ষাটোর্ধ্ব শিল্পী। তিনি মনে করেন এই সম্মান গোটা বাংলার সম্মান। বাংলার হস্তশিল্পের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। শুধু বাঙালি নয়, বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে যুক্ত ভারতবর্ষের প্রথম কেউ এই সম্মান পেলেন।
কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওয়াল হ্যাঙ্গিং উপহার দিয়েছেন বীরেনবাবু। তাঁর শিল্পকর্মের মধ্যে ছিল কন্যাশ্রীর ছবি ও তার চারপাশে কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন কবিতার লাইন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্যও অভিনব ওয়াল হ্যাঙ্গিং তৈরি করেছেন এই শিল্পী। উৎকৃষ্ট মসলিনের কাপড়ের ওপর তৈরি হয়েছে এই আশ্চর্য কাজ। এর জন্য মজুরি গিয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। বছর দুয়েক আগে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর থেকে তিনি পেয়েছেন দেশের সেরা বস্ত্রশিল্পীর পুরস্কার। যৌবনেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন গতানুগতিক তাঁত শাড়ির গণ্ডীতে থাকলে একটি জায়গায় আটকে থাকতে হবে। বাজার যা চায় তা না দিতে পারলে হারিয়ে যেতে হয়। তাই আরও কিছু করার তাগিদে জোর দেন ওয়াল হ্যাঙ্গিং-এর ওপর। কখনও এই কাজে নিরক্ষরতা দূরীকরণের নানা বার্তা উঠে আসে, কখনও নৌকাবিলাসের নানা মুহূর্ত।