Advertisement
Advertisement
Durga puja

Durga Puja 2021: মেয়ের হাতেই মায়ের আবাহন, দুর্গাপুজোর আচার রপ্ত করছেন আসানসোলের বধূ

আসানসোলের বধূর পাশে গোটা পরিবার।

An Asansol housewife learning rituals of Durga Puja
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:September 17, 2021 3:16 pm
  • Updated:September 17, 2021 6:29 pm

শেখর চন্দ, আসানসোল: মেয়ের হাতে মায়ের পুজো (Durga Puja 2021)। কলকাতায় (Kolkata) হয়তো এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে প্রথা ভাঙার দৃশ্য। কিন্তু জেলায় দুর্গাপুজো করবেন কোনও ‘মহিলা পুরোহিত’, বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও তা ভাবতে পারেন না অনেকেই। তবে এবার আসানসোলে শুরু সেরকমই পুজোর প্রস্তুতি। রীতিমত সংস্কৃত চতুষ্পাঠী টোলে পাঠ নিয়ে দুর্গাপুজোর কল্প, কর্ম, আর গুণ ভেদের পাঠ নিচ্ছেন বৈশাখী চট্টরাজ। পুজোর ফলমূল কাটা বা ঠাকুরের সাজসজ্জার দায়িত্বে থাকা বৈশাখীর স্বপ্ন পুরোহিতের আসনে বসে মা দুর্গার আবাহন করা। সেলুলয়েডের গল্প সাধারণত কল্পনার জগৎকে ঘিরেই থাকে। কিন্তু সেই কল্পকথারই যেন বাস্তব রূপায়ন দেখবেন শিল্পাঞ্চলবাসী। সিনেমার শবরী(ঋতাভরী চক্রবর্তী) যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া মেয়ে নয়। গ্রামের বাড়িতে, পুরোহিত বাবার মেয়ে। ঠিক তেমনই বৈশাখী চট্টরাজও টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে। তারও পড়াশুনা গ্রামেরই স্কুলে।

 Durga Pujo 2021

Advertisement

সমাজ পুরুষতান্ত্রিক। তাই যুগ যুগ ধরে পৌরোহিত্য ও শাস্ত্রীয় আচার পুরুষরাই করে আসছেন। সমাজও সেটা মেনে আসছে। মহিলা ঢাকি, মহিলা টোটো চালক, মহিলা বাস কন্ডাক্টর-সব পাওয়ার পরেও মহিলা পুরোহিত এখনও চিন্তাতেও ভীষণ শক্ত! পুরনো প্রবাদ মতে ‘মহিলাদের তো বারো হাত কাপড়ের কাছা হয় না’। তবে এখন মেয়েরা সংস্কৃত ভাষা নিয়ে চর্চা করছে। কাজেই মেয়েরা যে এই পৌরোহিত্যের কাজ করবে না, পারবে না, সেইরকম কোনও নিয়মে আবদ্ধ নেই, বলছেন খোদ টোল পণ্ডিতও।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মালদহে জ্বরে আরও এক শিশুর মৃত্যু, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গে গেল বিশেষজ্ঞ দল]

সালানপুরের (Salanpur) এথোড়া গ্রামে চক্রবর্তীদের দুর্গামন্দির শুরু হয়েছে এই চতুষ্পাঠী টোল। ছোরা বোপদেব চতুষ্পাঠির টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বৈশাখী। টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়েরই মেয়ে বৈশাখী। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন বছর সাতেক আগে। তাঁর টোলে যেমন শিল্পাঞ্চলের পুরোহিতরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তেমনই তাঁদের পাশে বসিয়ে নিজের মেয়েকেও চণ্ডিপাঠ, দুর্গাশ্লোক, বেদ, বেদান্ত, স্মৃতি, ন্যায়শাস্ত্র, ব্যকরণ শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। বিয়ের পরেও সূদূর বীরভূম থেকেও সালানপুর ও ছোরা গ্রামে প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন বৈশাখী। তথাকথিত বীজমন্ত্র দিয়ে শিক্ষা নয়, এ যেন আবার সেই স্কুল কলেজের দিনগুলোয় ফিরে যাওয়া। ধরে ধরে সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ শেখানো, সঠিক উচ্চারণে ও উচ্চগ্রামে সেটা পড়া, এইসবই রয়েছে শিক্ষার অংশ। টোল পণ্ডিতের দাবি, মন্ত্র তো সবার, সেটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারলে সেটার প্রয়োগে এত বাধানিষেধ কেন!

Durga pujo

পশ্চিম বর্ধমানের একমাত্র চতুষ্পাঠীর টোল শিক্ষক কার্তিক মুখোপাধ্যায়। বেদ, বেদান্ত, সংস্কৃতির পাঠ ছিল তাঁর। খনিকর্মী কার্তিক পণ্ডিত শিক্ষা ছড়িয়ে দিতেই তিনি চতুষ্পাঠী টোল খুলেছেন। শুধু পুরোহিতরা নন, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, বিজ্ঞানের ছাত্ররাও ছুটে আসছেন সালানপুরের এথোড়া গ্রামে। গ্রামের মন্দিরে একটু একটু করে মা দুর্গার মূর্তি যখন মৎশিল্পীর হাতে মৃন্ময়ীরূপ থেকে চিন্ময়ীররূপ পাচ্ছেন তখন বৈশাখীরাও পাকাপোক্ত হচ্ছেন ৭ টি কল্পের প্রকারভেদের। স্নান পুজো বলি, হোমের চতুষ্কর্মীয় কর্মভেদের পাশাপাশি ‘পৌরহিত্য বার্তা’ ও চণ্ডীন্ডীপাঠের আওয়াজে গমগম করে উঠছে চণ্ডীমণ্ডপ। যেন মা কে জেগে ওঠার বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা।

[আরও পড়ুন:ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের ‘শাস্তি’, বরখাস্ত অধ্যাপককে ছাঁটাইয়ের পথে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ]

শুধু বৈশাখী চট্টরাজ নন, সারা বছর নিত্যপুজো করেন যে বাংলার পুরোহিতরা তাঁরাও মনে করছেন প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন। বিয়ে পৈতে শ্রাদ্ধ থেকে দুর্গা শ্লোক – একই ছন্দে শুনতে চাইছেন না আর কেউ। তাই সময়ের দাবি মেনে তাঁরাও এখন ছুটছেন টোল-সংস্কৃতির পাঠশালায়। পেশাদার পুরোহিতরা তো আছেনই তার সঙ্গে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, এমবিএ ছাত্র, সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে সেকেন্ড সেমিস্টারে পাঠরত বা প্রাক্তন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার। টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “চাল-কলা-বাঁধা-বিদ্যা” পৌরহিত্য থেকে বেরিয়ে সুস্পষ্ট, ব্যাকরণগত ত্রুটিহীন মন্ত্রচারণের সময় এসেছে এবার। সংস্কৃত এমন একটা ভাষা যা অতি সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। তাকে অবহেলা করাটা সভ্যতারই ক্ষতি। এই ভাবনা এখন সবার মনেই গেঁথে গিয়েছে। তাই সাড়া মিলছে।

সেই সঙ্গে টোল-সংস্কৃতির পাঠশালার বাড়তি অলঙ্কার এখন বৈশাখী চট্টরাজ। যাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্বশুর বাড়ির লোকজনও। বৈশাখীর স্বামী সুকুমার চট্টরাজ বলেন, “আমাদের ইচ্ছে বাড়ির দুর্গাপুজোয় পৌরহিত্য করুন গৃহবধূ বৈশাখী।” কানা পুরোহিতের অভিশাপের প্রতিরোধে সিনেমার শবরী যেমন পাশে পেয়েছিলেন স্বামীকে, তেমন বৈশাখীও পাশে পাচ্ছেন পেশায় শিক্ষক স্বামী সুকুমার চট্টরাজকে। পুরোহিত হিসেবে পূর্ণতা পেলেই সূদূর বীরভূমের প্রত্যন্ত কানদীঘি গ্রামের দুর্গাপুজোতেও পৌরহিত্যের আসনে দেখা যাবে গৃহবধূ বৈশাখীকে। সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয় মন্দিরে মন্দিরে বাংলার কন্যাশ্রীরাই মাতৃরূপেণ সংস্থিতার আরাধনা করবেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ