পলাশ পাত্র: মেয়ে যখন ছোট, তখন থেকেই বাবা স্বপ্ন দেখতেন, একদিন দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে তাঁর কন্যা। আর বাবার সেই স্বপ্নকে সযত্নে লালন-পালন করেছেন মেয়ে। কঠোর পরিশ্রম আর হাজার প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজ বাবার স্বপ্নপূরণ করেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও চোখের কোণে জল তাঁর। কারণ আজ তাঁর সাফল্য দেখা জন্য বাবাই যে নেই। এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয়ের পর বারবার বাবার কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে দেবশ্রী মজুমজারের।
ভুবনেশ্বরে 8 x ৪০০ রিলেতে চিনকে পিছনে ফেলে সোনা জিতেছেন দেবশ্রী। শুধু পরিবারই নয়, দেবশ্রীর এমন সাফল্যে তাঁর নদীয়ার তৈবিচারা গ্রামের বাসিন্দারাও গর্বিত। আনন্দে মেতেছেন তাঁর প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনরা। তবে এসবের মধ্যেও দেবশ্রী তাঁর বাবাকে মিস করছেন দারুণভাবে। “বাবার ইচ্ছাতেই এতদূর পৌঁছেছি। বাবা চাইতেন কিছু একটা করে দেখাই। তাই জেদটা চেপে বসত। দেশের মাটিতে প্রথমবার সোনা পেলাম। ভাল তো লাগছেই।” ভুবনেশ্বর থেকে ফোনে কথাগুলো বলতে বলতে গলা ধরে এল দেবশ্রীর।
চার বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট তিনিই। বাবা মন্মথ মজুমদার তাঁকে ছেলের মতো করেই মানুষ করতেন। তাই পরিবারে দেবশ্রী সকলের আদরের ‘ভাই’। মন্মথবাবু তাঁর আরেক কন্যা তনুশ্রীকেও অ্যাথলিট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। যদিও তনুশ্রী তেমন এগোতে পারেননি। কিন্তু বোন যাতে সফল হতে পারে, সেদিকে দিদির নজরও কিছু কম ছিল না। ছোটবেলায় ভোরে ঘুম থেকে উঠে দিদির পিছন পিছনই দৌড়তেন দেবশ্রী। এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স-এ বোনের এমন সফল্যে তাই উচ্ছ্বসিত দিদিরা। জানালেন, বোনের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। মা মেনকাদেবী বলেন, “ওর বাবা বেঁচে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। সর্বদা এই দিনটার অপেক্ষাই করতেন। ফোনে বাবার কথাই বলছিল বারবার। মা হয়ে মেয়ের এই দিনে কার ভাল লাগবে না বলুন।”
২০০৮-এ শ্রীলঙ্কা জুনিয়র সাফ গেমসে পথ চলা শুরু। ২০১৪ সাউথ কোরিয়ায় এশিয়ান গেমসে সোনা এবং ২০১৫ চিনে এশিয়ান ট্র্যাক ফিল্ডে রুপো জিতেছিলেন। ২০১৬ রিও অলিম্পিকেও অংশ নেন। তবে এসব মন্মথবাবু দেখে যেতে পারেননি। ২০০৯-এ মারা যান তিনি। আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স মহলে বর্তমানে যে বঙ্গললনারা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, তাঁদের মধ্যে দেবশ্রীও অন্যতম। বাংলার মুখ উজ্জ্বল করা অ্যাথলিট বলছেন, সবই বাবার আশীর্বাদেই সম্ভব হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.