টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ছেলে-বউমার অত্যাচারে বাড়ি ছাড়া হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেন এক আদিবাসী বৃদ্ধ দম্পতি। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার তালডাংরার বেড়াবোত গ্রামে। অভিযোগ ছেলে, বউমার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বছর খানেক ধরে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ওই দম্পতি হপন মান্ডি ও তাঁর স্ত্রী সুরজমণি মান্ডি। আপাতত আশ্রয় হারিয়ে পথে পথে ভিক্ষে করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় করছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। স্থানীয় তালডাংরা পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছেন হপনবাবু। তাঁর অভিযোগ, তাঁকে ও স্ত্রী সুরজমণিদেবীকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ছেলে গুরুপদ মান্ডি ও বউমা ছবি মান্ডি। আশ্রয় হারিয়ে এখন দিশেহারা ওই বৃদ্ধ দম্পতি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা।
[মাথার সঙ্গে আরও একটি মাথা, শিশুকন্যাকে নিয়ে দিশাহারা পরিবার]
স্থানীয় সূত্রে খবর, একসময় এই মান্ডি পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারেই ভাল ছিল না। অথচ এই আদিবাসী পরিবারের একমাত্র মেয়ে কল্পনার বিয়ে হয় ওই বেড়াবোত গ্রামেরই বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ সরেনের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথবাবু সিআরপিএফে চাকরি করেন। চাকরি সূত্রে তিনি সপরিবারে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়ান। তাই বেড়াবোত গ্রামের বাড়িটি ফাঁকা থাকায় ছেলে-বউমার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই গ্রামেই মেয়ে-জামাইয়ের বাড়িতে গিয়ে বসবাস শুরু করেন তাঁরা। অভিযোগ, গত জানুয়ারি মাসে ওই বাড়িটি থেকেও ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে মারধর করে বের করে দিয়েছে হপনবাবুর নাতি অচিন্ত্য মান্ডি। অভিযোগ, তারপর থেকেই ভিক্ষা করে দিন গুজরান করছেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। মা-বাবার এই বেহাল অবস্থার কথা কানে যেতেই মেয়ে কল্পনা সরেন তালডাংরা থানায় লিখিত অভিযোগ জানান।
কল্পনাদেবীর অভিযোগ, এ বিষয়ে স্থানীয় তালডাংরা পুলিশও নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে আছে। শুক্রবার ছেলে-বউমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে খাতড়া মহকুমা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন এই অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। মা-বাবাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করার প্রসঙ্গে ছেলে গুরুপদ মন্ডির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন। তবে এ প্রসঙ্গে গুরুপদবাবুর ছেলে অচিন্ত্য বলেন, ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখিয়ে সংসারে অশান্তি লাগাচ্ছে পিসি কল্পনা সরেন। আর কল্পনাদেবী বলেন, বৃদ্ধ মা-বাবাকে ভিক্ষা করতে বাধ্য করছে দাদা-বউদি। এটা কোনওভাবেই মানতে পারব না। হপনবাবু আর সুরজমণিদেবী বলেন, পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আদালতে দ্বারস্থ হয়েছি।
[হেঁচকির জ্বালায় হাসপাতালে নববধূ, পণ্ড হল বউভাত]
জেলায় যখন একের পর এক থানায় ঢাকঢোল পিটিয়ে অসহায় বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের সহযোগিতায় উত্তরণ প্রকল্প শুরু করছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ তখন হপনবাবুর ক্ষেত্রে পুলিশের এমন নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সামনে চলে আসায় উঠছে পুলিশের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।
ছবি – পরেশ মাইতি