অর্ণব দাস, বারাসত: চারদিকে পাইনের বন। দুর্গম হলেও অপরূপ সৌন্দর্য টানে ভ্রমণপিপাসু প্রায় সকলকেই। সৌন্দর্যের টানে বৈসারন ভ্যালিতে গিয়েছিলেন বারাসতের নবপল্লির গুপ্ত কলোনির বাসিন্দা নবনীতা ভট্টাচার্য বাগচী, তাঁর স্বামী শান্তনু বাগচী, অর্পিতা ভট্টাচার্য ও তাঁর স্বামী সত্যব্রত ভট্টাচার্য। জঙ্গি হামলায় মঙ্গলবার দুপুরে রক্তে ভিজেছে বৈসারন। ওইদিনই বৈসারনে ছিলেন বারাসতের চার বাসিন্দা। ভয়ংকর ঘটনার মিনিট চল্লিশ আগে বৈসারন ভ্যালি ছেড়ে চলে যাওয়ায় প্রাণরক্ষা হয়েছে তাঁদের। বুধবার সকালে পহেলগাঁও থেকে শ্রীনগরের রাস্তা ধরে চারজন ফিরেছেন গুলমার্গে। শনিবার তাঁরা কাশ্মীর থেকে বারাসতের উদ্দেশে রওনা দেবেন।
একই এলাকার বাসিন্দা নবনীতা ও অর্পিতা। দু’জনেই স্কুলশিক্ষিকা। দুই দম্পতি যুগল গত ১৬ এপ্রিল কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার তাঁরা ছিলেন পহেলগাঁওয়ে। সেখানে থেকে বৈসারন ভ্যালির দূরত্ব ১৬কিলোমিটার। সকাল সাড়ে ন’টায় তাঁরা হোটেল থেকে বেরিয়ে ১০কিলোমিটার পথ গাড়িতে, বাকি পথ দুর্গম হওয়ায় ঘোড়ায় চড়ে পৌঁছেছিলেন বৈসারন ভ্যালিতে। তখন সেখানের পরিবেশ ছিল জমজমাট। একটি খাবারের স্টলে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা পানীয় এবং ভেলপুরি খেয়েছিলেন। সবকিছুই ছিল একেবারে স্বাভাবিক। তাদের মতো অন্যান্য পর্যটকরাও সুন্দর মুহূর্ত কাটাচ্ছিলেন। ছবি তুলে ফের ৬ কিলোমিটার ঘোড়া সাফারি করে দুপুরে দেড়টা-পৌনে দুটো নাগাদ পহেলগাঁও বাজারে পৌঁছে সবেমাত্র রাস্তার ধারের একটি রেস্তরাঁয় খেতে বসেন নবনীতা ও অর্পিতারা। একরাশ আতঙ্ক নিয়েই তড়িঘড়ি তাঁরা গাড়িতে ১০কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হোটেলে ফিরেন।
যাত্রাপথে ঘনঘন পুলিশ, সেনাবাহিনীর যাতায়াত, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দ শুনেই তাঁরা আন্দাজ করেছেন কতটা ভয়ংকর হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। রাস্তায় তখন আতঙ্কিত পর্যটকদের গাড়ির ভিড়। সকলেই দ্রুত ফিরতে চাইছেন হোটেলে। ফলে কিছুটা যানজট তৈরি হয়। তবে একদিকের রাস্তা ফাঁকা রাখা হয়েছিল পুলিশ, সেনাবাহিনীর গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য। বিকেলে হোটেলে ফিরে রাত পর্যন্ত আতঙ্ক নিয়েই দম্পতি যুগল হোটেলের ঘরে ছিলেন। রাতে পহেলগাঁওয়ের হোটেল মালিক থেকে স্থানীয়রা ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মোমবাতি মিছিল করেন। হোটেলের ঘর থেকে সেই স্লোগান শুনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বারাসতের নবনীতা, অর্পিতাদের। তাঁদের মুখে এখন একটাই কথা, “ভাগ্যিস মিনিট চল্লিশ আগে বৈসারন ভ্যালি ছেড়েছিলাম, নাহলে হয়তো বেঁচে ফিরতাম না।” পরিবারের সকলে উদ্বিগ্ন। বারবার তাঁদের কাছে ফোন আসে। জানতে চান, “কেমন আছেন? আটকে পড়েছেন কিনা।” টুর কাটছাঁট করে বাড়ি ফেরার পরামর্শও দেন অনেকে।
বুধবার পহেলগাঁওয়ের পরিস্থিতি একেবারেই থমথমে। সকালে সেখান থেকে রওনা দিয়ে গুলমার্গে ফিরেছেন তাঁরা। রাস্তায় ছিল সেনার কড়া প্রহরা। বন্ধ ছিল শ্রীনগরও। তবে গুলমার্গ মোটের উপর স্বাভাবিক। ফোনে নবনীতা বলেন, “মনোরম আবহাওয়া, আকাশ পরিষ্কার থাকায় বৈসরন ভ্যালিতে প্রচুর পর্যটক ছিল। আমরা বেশ খানিকটা সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। খাবারের স্টল থেকে ভেলপুরি, কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে ভাগ্যিস আগে বেরিয়েছিলাম। জঙ্গি হামলার এই ঘটনার পর পর্যটকরা কাশ্মীরে না গেলে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে।” অর্পিতা বলেন, “পুলওয়ামা হামলার কথা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছিলাম। এবার তো জঙ্গিদের টার্গেটের মুখে পর্যটকরা। এখন ভাবছি আর আধঘন্টা যদি আমরা সেখানে থেকে যেতাম, ভয়ংকর ঘটনার মুখে পড়তে হত।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.