কল্যাণ চন্দ্র, বহরমপুর: নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক এখন মুর্শিদাবাদ জুড়ে। বেলডাঙার সফিকুল হক কেরল থেকে জ্বর নিয়ে ফেরার পর থেকেই এই উদ্বেগ এখন বহরমপুর, ডোমকল, ফরাক্কা, কান্দিতে বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসন খোঁজখবরও শুরু করেছে। বলা হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা জ্বর নিয়ে ফিরলেই যেন খবর দেওয়া হয়। এত তৎপরতার মাঝে খোদ মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরেই নিপা ভাইরাসের আঁতুড়ঘর হয়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। মাতৃ বিভাগ বা প্রসূতি বিভাগের উলটোদিকেই গ্রুপ ডি স্টাফ কোয়ার্টারের ভিতরেই ঘুরছে শুয়োর, রাতে গাছে ঝোলে বাদুড়। চারপাশে জঙ্গল। ফলে সদ্যোজাত শিশু ও মায়েদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগে জেলার মানুষ।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে পাঁচটি স্টাফ কোয়ার্টার রয়েছে। তার মধ্যে এক নম্বর কোয়ার্টারে থাকেন ডোমরা। এই ডোমরা দীর্ঘদিন ধরেই শুয়োর পোষেন বলে অভিযোগ। বহুবারই এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশের জঙ্গলে বাদুড়ের উৎপাত দীর্ঘদিনের। এই বাদুড় এবং শুয়োর থেকেই নিপা ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে বহরমপুর-সহ জেলা জুড়ে আতঙ্ক। কারণ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সারা জেলার মানুষই আসেন চিকিৎসা করাতে। একদিকে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা: নিরুপম বিশ্বাস জনগণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বলছেন, মাটিতে পড়ে থাকা মরশুমি ফল, যেমন আম বা লিচু খাওয়া উচিত নয়। কারণ বাদুড়ে কামড়ানো ফল খেলেই নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। কিন্তু তারপরেও হাসপাতালের ভিতরে এই শুয়োর ও বাদুড়ের হাজিরা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। এই ঘটনার কথা মেনে নিচ্ছেন স্বয়ং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও। তিনি জানান, “ওই কোয়ার্টার চত্বরে শুয়োর ঘুরে বেড়ায় বলে শুনেছি। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে গ্রুপ-ডি কোয়ার্টারে ১০০টির মতো ঘর রয়েছে। এইসব কোয়ার্টারে স্টাফরা ছাড়াও বেশ কয়েকজন বহিরাগত থাকেন বলে অভিযোগ। চারপাশের জঙ্গল দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয় না। একতলায় রাস্তার ড্রেনের জল ঘরে ঢুকে যায়। রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অন্যদিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকের সামনে রয়েছে ২৪টি নার্সিং স্টাফ কোয়ার্টার। ২৪টি পরিবারের তিন-চার জন করে সদস্য থাকেন সেখানে। তাঁদের ঘরের পাশের জঙ্গল ও ড্রেন পরিষ্কার হয় না। জঙ্গলে রয়েছে পার্থেনিয়াম গাছ। মশা মারার স্প্রে করা হয় না দীর্ঘদিন। ফলে ডেঙ্গুর আঁতুড়ঘর হয়ে রয়েছে গোটা চত্বর। নার্সরা জানান, বহুবার হাসপাতালের সুপারকে বলা হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি।
এই বিষয়ে হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা প্রভাসচন্দ্র মৃধা বলেন, “গ্রুপ-ডি স্টাফ কোয়ার্টারের সামনের জঙ্গলে রাতে বাদুড় ঝোলে। শুয়োরের কথাও আমাদের অজানা নয়। এই পরিবেশ থাকা উচিত নয়। কারণ শুয়োর থেকে জাপানি এনসেফেলাইটিস, নিপা ভাইরাস ছড়াতে পারে। বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপালের সঙ্গে আলোচনায় বসব আমরা।” নাসিং কোয়ার্টারের অবস্থা নিয়ে ডা মৃধা বলেন, ওই কোয়ার্টার চত্বর দীর্ঘদিন পরিষ্কার হয়নি। বর্ষার আগেই ফের সাফাই অভিযান হবে। মশা ও পতঙ্গ নিধনের জন্য স্প্রে করার বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের দেখার কথা বলে তিনি জানান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.