সৌরভ মাজি, বর্ধমান: মৃত্যুর হাতছানি কি দেখতে পেয়েছিলেন বর্ধমানের ‘স্ট্রিট রেসার’? না কি সিক্সথ সেন্স। রোমাঞ্চের হাতছানির সাড়া দিতে গিয়ে যে ‘ডেথ অ্যাডভেঞ্চার’ হতে চলেছে তা বোধহয় আগাম বুঝতে পেরেছিলেন। “ইফ ওয়ানডে দ্য স্পিড কিলস মি, ডোন্ট ক্রাই। বিকজ আই ওয়াজ স্মাইলিং।”
[কল থেকে বেরোচ্ছে লাল রঙের জল, শোরগোল দুর্গাপুরে]
রেসিং বাইক নিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১,৬৬৪ কিলোমিটার অভিযানে বেরনোর আগে বর্ধমানের স্ট্রিট রেসার বিক্রম হাজরার ফেসবুক প্রোফাইল ‘বিট্টু ও পজিটিভ (স্পিড)-এ’ মার্কিন অভিনেতা পল ওয়াকারের বিখ্যাত উক্তি পোস্ট করা হয়েছিল। যা শেষ পোস্ট হয়েই থাকল। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়া সিরিজের অভিনেতা পল ওয়াকার বিখ্যাত হয়েছিলেন স্ট্রিট রেসিং সিনেমার জন্য। মোটরকার রেসিং ছিল সিনেমার অন্যতম আকর্ষণ। বর্ধমানের বিক্রমও যে গতির অ্যাডভেঞ্চারে মজেছিল। প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়েই বেরোত সুজুকির রেসিং বাইক নিয়ে।
[ভিআইপিদের ব্যক্তিগত বিমানের জন্য আম আদমির চূড়ান্ত হয়রানি]
শুক্রবার ভোরে উত্তর প্রদেশের বেনারসের ফতেপুরের উদ্দেশ্যে তাঁরা রওনা হয়েছিলেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ শনিবার ভোরে ফিরে আসার কথা ছিল তাঁদের। ফিরলেন। তবে নিষ্প্রাণ হয়ে। ফেরার পথে এদিন ভোরে পূর্ব বর্ধমানের গলসি চৌমাথা এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দু’জনের। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ফেসবুকে শেষ পোস্ট করেছিলেন বিক্রম। যেখানে পল ওয়াকারের সেই উক্তি কোট করেন। গতির প্রেমী পল ওয়াকার ২০১৩ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মাত্র ৪০ বছর বয়সে মারা যান। বাইক রেসিং-এ বেরোনোর আগে বিক্রম কী কোনও কিছু আঁচ করেছিলেন। সেটাই এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। শ্রীপর্ণা সাহা নামে ফেসবুক ফ্রেন্ড যেমন বেলেছেন, “এভাবে কেন লিখেছে বিট্টু (বিক্রমের ডাকনাম)।” শহরের বিবেকানন্দ কলেজ রোডে বিক্রমের বাড়ি। রিয়া থাকতেন বড়নীলপুরে জাগরণী ক্লাবের কাছে। বিক্রমের বাবা বিদ্যুৎবাবু রায়নার দোলুইদিঘি স্কুলের শিক্ষক। মা মিতাদেবী। ঘটনার পর থেকেই শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তাঁরা।
বিক্রমের কাকা তড়িৎ হাজরা বলেন, “মোটরবাইক রেস নেশা ছিল বিক্রমের। তার টানেই প্রাণ গেল।” রিয়ার বাবা শিবনাথবাবু হোটেলকর্মী। বছর দুয়েক আগে রিয়ার দাদার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। মেয়েকে নিয়ে থাকতেন শিবনাথবাবু। রিয়ার দিদি জয়া মণ্ডল জানান, বিক্রমের সঙ্গে অনেক দিনের সম্পর্ক। দু’জনের বিয়ের কাথাবার্তাও হয়েছে। বিক্রমের সঙ্গে মাঝেমাঝেই বাইক রেসিংয়ে যেতেন রিয়া। যদিও রিয়া বাইক চালাতে জানতেন না। প্রেমিককে সঙ্গ দিতেন। বিক্রমের অ্যাডভেঞ্চারে শরিক হতে বাড়ি থেকে পাঁচিল টপকে চলে যেতেন রিয়া। বিবেকানন্দ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রিয়া। আর বিক্রম রাজ কলেজে ইংরেজি অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। দুই তরুণ-তরুণীর অকালমৃত্যু মানতে পারছেন না স্থানীয়রা। তাদের অনুমান অল্প সময়ের মধ্যে ফিরে আসার তাগিদে এমন ঘটনা ঘটে গেল।
ছবি: মুকলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.