Advertisement
Advertisement

খড়ের চালা থেকে ফ্রান্সের বিশ্ববিদ্যালয়, স্বপ্নের উড়ানে বাংলার অগ্নিদীপ

বাবা-মার প্রয়োজন, সেলাইও করেছেন ইন্দোর আইআিটি-র ‘টপার’।

Birbhum: IIT topper Agnideep gets chance from University of Strasbourg
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:July 22, 2018 9:30 pm
  • Updated:July 23, 2018 9:43 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক:  মেধাকে আড়াল করতে পারে না দারিদ্র্য। এ সত্য এখন অতিবড় মূর্খেরও অজানা নয়। কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যাঁরা জয়ের নিশান ওড়ান, তাঁদের জন্যও তোলা থাক কিছুটা আদরের আবদার। সেখানে প্রিয়জনের আবদার যদি অধরাই থেকে যায় তবে অমৃতের সন্তানের চোখেও আসে আক্ষেপের অশ্রু। তাই একদা অভাগা অগ্নিদীপ এখন সব পেয়েছির পৃথিবীটাকে ছুঁয়ে ফেলেও দুঃখের সাগরেই ভাসছেন। বাবা-মাকে নিজের মুখে আনন্দসংবাদ দিতে চেয়েও অপারগ এই স্কলার। জন্মাবধি মূক ও বধির অগ্নিদ্বীপের বাবা-মা। তাই ছেলের মুখ থেকে শুনতে পেলেন না সাফল্যের খবর।

[ধর্ষণের পর ফেসবুকে নির্যাতিতাকে হেনস্তা, গ্রেপ্তার বিজেপি কাউন্সিলর]

দরজি দম্পতির ছেলে এখন ইন্দোর আইআইটির ‘টপার।’ ফ্রান্সের স্টার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গবেষণার জন্য বেছে নিয়েছে। স্টার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার হিসেবে খুব শিগগির ফ্রান্সে যাচ্ছেন অগ্নিদীপ। বীরভূমের পাড়ুই থানার অন্তর্গত অখ্যাত হাটইকডা গ্রাম। সেখানকার মূক ও বধির দরজি দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি। এতবড় খবর পেয়ে টেলিফোনেই বাবা-মাকে জানাতে চেয়েছিলেন সেকথা। কিন্তু বিধি বাম। তাই মামার মারফৎ বাবা-মা বুঝলেন, ছেলে তাঁদের বিদেশে যাবে। সবটা বুঝতে না পারলেও প্লেন ওড়ার বর্ণনায় তাঁদের চোখে জল। দরজির কাজ করেই কোনওরকমে ছেলেকে বড় করেছেন। গ্রাম লাগোয়া পুরন্দরপুর বাজারে খড়ের চালের দরজির দোকান। দোকানের নামটাই ‘মূক-বধির দরজিঘর।’ এই পুরন্দরপুর হাই স্কুলে পড়ার সময় প্রয়োজনে ওই দরজিঘরে সেলাইও করেছেন অগ্নিদীপ। বাবা-মাকে সাহায্য করার পাশাপাশি সেখানে বসেই চলত পড়াশোনার কাজ। সেই একরত্তি ছেলেই এখন ইন্দোর আইআইটির নয়নের মণি। পুরন্দরপুর হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশের পর সিউড়ি জেলা স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক। তারপর বিশ্বভারতী থেকে কেমিস্ট্রিতে স্নাতক। সেখান থেকে সর্বভারতীয় আইআইটির প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভরতি হন ইন্দোরে। স্নাতকোত্তরেও চমকে দেওয়া সাফল্য। ৮৪.৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে কেমিস্ট্রিতে প্রথম দশে জায়গা করে নেন এই মেধাবী ছাত্র। এরপরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ইন্দোর আইআইটি-তেই গবেষণা শুরু করেন। এরমধ্যে বিদেশ থেকে ইন্টারন্যাশনাল ডক্টোরাল ফেলোশিপে অরগ্যানো মেটালিক কেমিস্ট্রির উপর গবেষণার সুযোগ আসে। স্টার্সবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারভিউয়ের ডাক পান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর ফ্রান্সে আসার যাবতীয় খরচ বহন করে। চলতি মাসের দশ তারিখে সেখানে জুরি বোর্ডের সামনে প্রজেক্টের ডেমোস্ট্রেশন দেন অগ্নিদীপ। বাকিটা ইতিহাস। আগামী ১ অক্টোবর থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ই হতে চলেছে অগ্নিদীপের ঠিকানা।

Advertisement

[নেশার টাকা দেয়নি, বৃদ্ধ দম্পতিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বেধড়ক মারধর ছেলের]

অগ্নিদীপের বাবা-মা সেই অর্থে লেখাপড়াও জানেন না। মাকে কোনওরকমে সই করতে শিখিয়েছিলেন। বাবার বিদ্যা মূক ও বধির স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। তবে নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্ন সফল করতে ছেলেমেয়েকে এগিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। অগ্নিদীপের পাশাপাশি দিদি বিদিশাও পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন। সবসময় বাবা-মাকে পাশে না পেলেও মামা বংশীধর দাস ভাগ্নেকে আগলে রেখেছেন। তাই ছেলের সাফল্যের খবর শোনাতে সিউড়ি থেকে হাটইকডা গ্রামে ছুটে গিয়েছিলেন মামা। ইশারায় ও বিমানের ছবি দেখিয়ে বোন-ভগ্নিপতিকে বুঝিয়েছেন,  তাঁদের ছেলে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে। প্রথমটায় বিশ্বাস না হলেও জয়ের আনন্দে চিকচিক করে ওঠে মা জয়ন্তী দাসের চোখ। মুখর ‘নীরবতা’কে ছাপিয়ে এক চিলতে দরজিঘরের বাইরের দিগন্তবিস্তৃত আকাশে তখন স্বপ্নের উড়ানে বাংলার অগ্নিদীপ।  

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ