নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পড়নে আটপৌড়ে শাড়ি। কোলে ছ’ বছরের মেয়ে রিমি। সকাল থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে বায়না ধরেছে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখবে বলে। সড়ক পথেই বোলপুর থেকে আহমেদপুর যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পথের মাঝে যেতে যেতে সেই রিমিকে দেখে গাড়ি দাঁড় করালেন তিনি। এমনিতেই স্নায়ু রোগে রিমির শরীর শক্ত হয়ে যায়।
[২০১৮-র ভাগ্যচক্রে এক নম্বরে তৃণমূল, বলছে পঞ্জিকা]
মুখ্যমন্ত্রীকে দেখে আবেগে আরও শক্ত হয়ে গিয়েছে ছোট্ট শিশুটি। বিষয়টি চোখ এড়ায়নি মমতার। রিমির মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মেয়ের এমন স্বাস্থ্যের হাল কেন?” মুখ্যমন্ত্রীকে হাতের কাছে পেয়ে সাহস করে উত্তর দিলেন গ্রামের বধূটি, “নার্ভের রোগ। চিকিৎসা করানোর পয়সা নেই।” মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি কালুরায় গ্রামে দাঁড়াতেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন জেলাশাসক পি মোহন গান্ধী। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তিনিই রিমির মা শ্যামলী রায়ের নাম, ফোন নম্বর নথিভুক্ত করে নিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জানালেন, বাঙুরে কিংবা যেখানেই হোক মেয়ের চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা করে দিন। এরপর রিমির কপালে স্নেহের হাত বোলালেন।
[মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা রাজ্যের লোগোকে স্বীকৃতি মোদি সরকারের]
মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি কালুরায় গ্রামের রাস্তার পাশে দাঁড়াতেই ভিড় জমতে থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় বেড়িয়ে যেতেই আবার জটলা হল গ্রামে। রিমির মা শ্যামলী রায়ের তখনও ঘোর কাটেনি। বললেন, “এমনও হয়। এ যেন সাক্ষাৎ দেবদূত। মেয়ের আবদারে আমি দাঁড়ালাম পথের ধারে। আর ঠিক মেয়েকে দেখেই দাঁড়িয়ে পড়লেন অতবড় মানুষটি।” শুধু রিমি নয়, বোলপুর থেকে আহমেদপুর ১৮ কিলোমিটার রাস্তার দু’ ধারে মানুষ কাতারে কাতারে অপেক্ষা করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে একঝলক দেখার জন্য। প্রশাসনিকভাবে আহমেদপুর, বোলপুর ও জয়দেব তিন জায়গাতেই তিনটি হেলিপ্যাড তৈরি রাখা হয়েছিল। কিন্তু পথের মানুষ পথেই যেতে চাইলেন। তাই কুড়ি মিনিটের সড়ক পথে বোলপুর থেকে আহমেদপুর আসতে যেতে চল্লিশ মিনিটের বেশি সময় লেগে গেল। ফেরার পথে মঙ্গলবারের মতোই বিকেলের সোনাঝুড়ির জঙ্গলে শ্যামবাটির কাছে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। পায়ে হেঁটে তিন কিলোমিটার দূরে রাঙাবিতানে পৌঁছন। যেতে যেতেই পথের ধারে কথা বললেন হাটে আসা লোকেদের সঙ্গে।
[শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে কাটল অচলাবস্থা, খুলল চারুচন্দ্র কলেজ]
এই সোনাঝুড়ির জঙ্গল মুখ্যমন্ত্রীর চিরকালের প্রিয়। আহমেদপুরে প্রশাসনিক জনসভাতেও বীরভূমে বাউল বিতানের কথা উল্লেখ করেছেন। সোনাঝুড়ির কথা বলেছেন। এই বনকে ঘিরে একটা ইকো পার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। পথে হাঁটতে হাঁটতেই প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দিলেন কোথায় কী করলে ভাল হয়। হাটের মানুষ মুখ্যমন্ত্রীকে একবার হাটের মাঝে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। নিরাপত্তা রক্ষী ছেড়ে মমতা তখন একেবারে হাটের মানুষ হয়ে উঠেছেন। চলতে চলতে মুখ্যমন্ত্রী জেনে নিলেন এলাকার মানুষের চাহিদা কী, আরও কী কী চান এলাকার মানুষ। দ্বিতীয় দিনে ফের সোনাঝুড়ি হাটের মাঝে মমতাকে পেয়ে কিছুটা হলেও হতবাক মানুষ। এভাবে পথের মাঝে মুখ্যমন্ত্রীকে তারা দেখতে পাবেন ভাবেননি জীবনে।