Advertisement
Advertisement

Breaking News

বাবুল সুপ্রিয়

রাজনীতি শূন্য বলেই মায়ের শরণ, মুনমুনকে কটাক্ষ বাবুলের

গৌতম ভট্টাচার্যের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় বিজেপির তারকা প্রার্থী।

BJP's Babul Supriyo slams TMC's Moonmoon Sen
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:April 25, 2019 1:17 pm
  • Updated:April 25, 2019 2:26 pm

গৌতম ভট্টাচার্য: ইন্টারভিউয়ের লোকেশন ঠিক হয়েছিল আসানসোল স্টেডিয়াম লাগোয়া গ্যালাক্সি মলের একতলার কেএফসি। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়কে দেখামাত্র তাঁর সাদা গাড়ি এমন অবরুদ্ধ হয়ে গেল যে খাওয়া সারতে হল গাড়িতেই। আর ইন্টারভিউ লোকেশন স্থানান্তরিত হয়ে গেল চোদ্দো-পনেরো কিলোমিটার দূরে মহিশীলাতে তাঁর তিন তলার বাড়ি কাম অফিসে। বাইরে মুনমুন সেনের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন গাড়ি ভরে যাচ্ছেন তৃণমূল সমর্থকরা। বাবুল জানালাটা খুলে আবার বন্ধ করে দিলেন…

প্রশ্ন: ওই যে এতটা রাস্তা আমরা এলাম, একটা জিনিস কিন্তু দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। দেওয়াল লিখন আর প্রচারে মুনমুন সেন যে আপনাকে ছ’গোল দিয়েছেন।

Advertisement

বাবুল: ছ’গোল? তাই বুঝি? তা দিক না। আসানসোল মিউনিসিপ্যালিটির সমস্ত হোর্ডিং তো তৃণমূলের নামে বুকড হয়েছে। মানুষ পরিষেবা চেয়ে পায় না অথচ মাইলের পর মাইল নীল-সাদা রং করে শহর ভরিয়ে দিয়েছে। তবে একটা কথা মনে রাখবেন ছ’গোল করেও সবসময় ম্যাচ জেতা যায় না। কে বলতে পারে অপোনেন্ট তাঁর উপর দশ গোল চাপিয়ে দিচ্ছে না? মান্না দে-র ওই বিখ্যাত গানটা শুনেছেন তো? ‘যদি কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিঁড়ে যাবে।’ সেটাকে একটু পালটে আমি বলব, যদি দেওয়ালে লেখো নাম দেওয়াল মুছে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে। গানটা তো বাঙালিদের জন্যই লেখা। আরও একটা বিখ্যাত উক্তি আছে রামকৃষ্ণদেবের। ‘অতি বাড় বেড়ো নাকো ঝড়ে পড়ে যাবে।’ এই যে এত হোর্ডিং লাগিয়েছে। রোজ কালবৈশাখীর ঝড় আসছে। একটা করে উড়ছে। পরের দিন আবার লাগাচ্ছে। আবার উড়ে যাচ্ছে। অন্যায়ের টাকায় যত হোর্ডিং লাগানো সব মুছে যাবে।

Advertisement

প্র: কাল মোদির জনসভার পর একটা অন্যায় কাজ হতে দেখা গেল।আপনার ‘এই তৃণমূল আর না/ আর না’ গানটা মোদি চলে যাওয়ার পরেও মিনিট দশেক ধরে স্টেজে বাজল। লোকে তার সঙ্গে নাচল না জেনেই যে নির্বাচন কমিশন গানটা নিষিদ্ধ করেছে।

বাবুল : নির্বাচন কমিশন অবৈধ ঘোষণা করেছে আপনাকে কে বলল? কোনওদিন কোথাও ঘোষণা করেনি। এটাও একটা মি প্রচার। আপনাকে নির্বাচন কমিশনের একটা চিঠি এখন হোয়াটস অ্যাপ করব? আরে দাদা আমি তো রেডিও-টিভিতে চালাচ্ছি না। আমি প্রচারে সবসময় ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু এরা ওরকমই। আজকেও রটে গেল আমার নামে নাকি দু’টো এফআইআর হয়েছে। সেটাও মিথ্যে।

প্র: মোদির বিশাল জনসভা কি আপনাকে একটা সফল ব্যাটিং পাওয়ার প্লে দিয়ে গেল? যার উপর ভিত্তি করে আপনি আক্রমণে যেতে পারেন?
বাবুল: না। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে-টা আমি আগেই শুরু করেছিলাম। উনি ডেথ ওভারে এসে ধোনির মতো খেলে দিয়ে গেলেন। মোদিজি আমাদের সুপারস্টার ব্যাটসম্যান। পরে আসেন। খেলা ফিনিশ করে দিয়ে যান।

প্র : আসানসোল ইলেকশনের রেজাল্ট কী হবে?
বাবুল : কী আবার হবে? গণতন্ত্রের জয় হবে। আর গণতন্ত্রের জয় মানেই তো বিজেপি- জয়। তৃণমূলের জয় মানে মাফিয়ারাজের জয়। চারদিকে দেখতে পাচ্ছেন না বাংলার মানুষের মধ্যে একটা নবজাগরণ হচ্ছে। আসানসোলের পুরো সেন্টিমেন্টটা দেখছেন না ওদের বিরুদ্ধে?

প্র: এত কনফিডেন্ট যখন, তাহলে একশো শতাংশ কেন্দ্রে আপনাদের কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করাতে হচ্ছে কেন? কেন পুলিশ অফিসার বদলাতে হচ্ছে? গোটাটা মানুষের উপর ছেড়ে দিন না।
বাবুল : মানুষই তো এই প্রথম বলছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিন। আমাদের ভোট নিন। আসানসোলে কেন করাতে হচ্ছে তার উত্তরে বলি, কোল মাফিয়াদের সাহায্য নিচ্ছে তৃণমূল। তাই সন্ত্রাসের মাত্রাটা এখানে অনেক বেশি। নির্বাচন কমিশন সেটা বুঝেছে। সর্বস্তরে এমন আঁতাত আছে, দেখেছে যে পুলিশ অফিসার বাধ্য হয়ে বদলানো হয়েছে। কেন? না, বিজেপি সমর্থকের বাড়ি গিয়ে ওপেন হুমকি দিচ্ছে পুলিশ অফিসারেরা বলছে, তৃণমূলকে ভোট না দিলে দেখে নেব। ভিডিও আছে এগুলোর। চাইলে এখুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি। এ জিনিস তো আমরা বিহারের জঙ্গলরাজে একমাত্র দেখেছিলাম। তারপর আর দেখিনি। মমতা ব্যানার্জি আসলে সমাজটাকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। হয় তুমি তৃণমূল। অথবা তুমি মানুষই নও।

প্র: আসানসোল সিটটা ধরা হয়েছিল তৃণমূল সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে। ধরা হচ্ছিল এটা গতবারের হারের পর তাদের প্রেস্টিজ ফাইট হতে যাচ্ছে। মুখে আপনি যতই মমতা বিরোধী উত্তেজনা দেখান। ভিতরে ভিতর সেটা নাকি নয়।
বাবুল: মানুষ নানারকম বলছে এটা নিয়ে। আমাদের পার্টিতেও অনেকে আমার লেগপুলিং করেছে। টিপ্পনি কেটেছে। কিন্তু সেগুলো মজাই। মজাটা মজার মধ্যে থাকাই ভাল।

প্র: রিয়েল ছবিটা তাহলে কী?
বাবুল: রিয়্যাল ছবিটা হল মমতা ব্যানার্জি একেবারেই সৌজন্যের রাজনীতি করেন না। বরং সময় সময় আমার ওঁকে খুব নিষ্ঠুর লাগে।

প্র : আপনার সমালোচকেরা বলবেন আপনার মমতাকে বরং দরদী মনে হওয়া উচিত। বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও আপনার বিয়েতে অতিথিদের জন্য বঙ্গভবনে এতগুলো ঘর ফ্রি-তে দিয়েছিলেন। সেটা তো একমাত্র ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে তৈরি হওয়া উপহার ছিল।
বাবুল : শুরুতে হয়তো সৌহার্দ্য ছিল। এখন নেই। একটা সময় উনি আমার গান বাজাতেন। আমার গানের প্রশংসা করতেন। কিন্তু তারপর সে ফিলিংসটা চলে গিয়েছে। পরবর্তীকালে আমার কাজে যেভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। যেভাবে দিনের পর দিন আমার উপর অন্যায় আক্রমণ হয়েছে তখন উনি যখন হস্তক্ষেপ করেননি। চুপ করে বসে থেকেছেন তখন নিষ্ঠুরতা দেখানো ছাড়া কী বলব?

প্র : শোনা যায় আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারির সঙ্গে আপনার অহি-নকুল সম্পর্ক। আপনার যে কোনও উদ্যোগ মেয়র হয়ে দাঁড়ান পথের কাঁটা।
বাবুল: ওই বেঁটেখাটো মিষ্টি দেখতে মোটা ছেলেটা? ওকে নিয়ে কী বলব? ধ্যাত।

প্র: কোনও কোনও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মনে হচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী বাছাইয়ের পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর একটা কৌশলী ছকও থাকতে পারে। এখানে প্রচুর অবাঙালি ভোটার। আসানসোলের ব্যালট বাক্স নির্ধারণে এঁদের ভূমিকা বাঙালি ভোটের প্রায় সমান সমান। মুনমুন সেন নামটা এঁদের কাছেও সমান পরিচিত বলে কি মমতা একটা বুদ্ধিদীপ্ত ফাটকা খেললেন?
বাবুল : অবাঙালিদের কাছে সমান পরিচিত বুঝি? আমি এনিয়ে কিছু বলব না। যদি কিছু বলি তাহলে সেটা ব্যক্তিগত আক্রমণ মনে হবে।

প্র : যতদূর জানতাম গত আচ বছর সেন্ট্রাল হলে আপনার ও মুনমুনের মধ্যে একটা মিষ্টি সম্পর্ক ছিল। উনি ‘সুইট বয়’ টয়ও বলতেন। হঠাৎ সেটায় চিড় ধরল কেন?
বাবুল: ধরল কারণ উনি শালীনতার সমস্ত গণ্ডি ডিঙিয়ে আমাকে অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গিয়েছেন। সেটার জন্য এখানকার কিছু নেতা দায়ী। যাদের মধ্যে একজনের আমি নাম করতে চাই না। কিন্তু সে ব্যক্তিগত হতাশা থেকে নিয়মিতভাবে আমায় আক্রমণ করে যাচ্ছে। যাকে বলে গাটার পলিটিক্স। এসবের ক্ষেত্রে আমার একটা স্ট্যান্ডার্ড উত্তর রয়েছে। আমি বলি তোরা নর্দমা নিয়ে ঘাটছিস তো। থাক নর্দমাতেই পড়ে থাক। আমি জানতাম এর একটা প্রভাব মুনমুনের উপর পড়বে। কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি ঘটবে স্বপ্নেও ভাবিনি। জানতাম ওঁকে দিয়ে জোর করে বলানো হবে। তা বলে এত তাড়াতাড়ি? আমি এতটাই আহত যে ওঁর সঙ্গে মুখোমুখি পড়ে গেলে সৌজন্য বিনিময়ও করব না। আমার পুরো ফ্যামিলিকে চেনা সত্ত্বেও উনি যেভাবে বলেছেন। আমার গান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। নানা কথা বলেছেন সেটা খুব দুঃখের।

প্র: উনি কিন্তু খুব ম্যাটার অব ফ্যাক্টলি বলেছেন যে আসানসোল সিটটা মোটেও স্টারেদের লড়াই নয়। বাবুল গায়ক হিসেবে নামকরা মানুষ। কিন্তু দিনের শেষে স্টার নয়-নামী প্লে ব্যাক সিঙ্গার।
বাবুল: ঠিকই তো। উনি নিজের কথা বলেছেন। উনি যে স্টার নন সেটা উপলব্ধি করে বলেছেন। আমি ওঁর বিচক্ষণতার প্রশংসা করব।

প্র: সেটা তো ওঁকে মিসকোট করা হবে। তা তো বলেননি। মুনমুন নিজেকে লড়াইয়ের একমাত্র স্টার হিসেবে ধরেছেন।বাবুল : দেখুন আমিও না অনেক কথা বলতে পারি। ওঁর অভিনয়, ওঁর চয়েস অফ ফিল্মস নিয়ে। কিন্তু আমি একটা কথাও বলব না। কারণ সেটা ব্যক্তিগত আক্রমণের মতো শোনাবে।

প্র: আপনি বলেননি কোথায়? নির্বাচনী প্রচারে সুচিত্রা সেনের নাম ব্যবহার হওয়া নিয়ে তো বলেছেন। এব্যাপারে মুনমুনের বক্তব্য কিন্তু লজিক্যাল, আমি নিজে নিজের মায়ের নাম ব্যবহার করব না তো কী বাইরের লোক করবে?
বাবুল : রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেলে মানুষকে বোধহয় বাবা-মায়ের শরণ নিতে হয়। মায়ের আত্মার শান্তির জন্য তৃণমূলকে ভোট দিন একথা ওঁর বলাটা এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার তো মনে হয় এই দলের হয়ে ওই মেয়ে নির্বাচনে ভোট চাইছেন দেখলেই সুচিত্রা সেনের আত্মা সবচেয়ে বেশি দুঃখ পাবে।

প্র: আপনি যাই বলুন, মুনমুনের জনসভাগুলোয় কিন্তু মহিলারা প্রচুর সংখ্যায় আসছেন।
বাবুল : আমি আগের কথাটা এখনও শেষ করিনি। সুচিত্রা সেন ওঁর মা হতে পারেন। কিন্তু উনি তো সবার। উনি তৃণমূলের একার হতে যাবেন কেন?

প্র : আপনি গায়ক জীবনে কিশোর কুমারকে এত বছর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করেছেন। মুনমুন যদি নিজের মা-কে ব্যবহার করেন ক্ষতি কোথায়?
বাবুল : আমি তো কিশোরকুমারের আত্মার শান্তির জন্য বিজেপিতে ভোট চাইনি আমার গুরুকে তাঁর জায়গায় রেখেছি। আর কী বলছিলেন, মুনমুনের মিটিংয়ে প্রচুর মহিলা আসছেন?

প্র : ইয়েস।
বাবুল : আরে আমিও তো মহিলা ভোটারদের বলছি। উনি একজন সুন্দরী মহিলা। সুচিত্রা সেনের মেয়ে। তারপর আফটার অল মুনমুন সেন! সভায় যান। যত খুশি ওঁঁর সঙ্গে ছবি তুলুন। সুযোগ পাওয়া যায় না তো। বাঁকুড়ায় নিজের কেন্দ্রে গত পাঁচ বছরে উনি বেশি যাননি। এবার আপনারা সুযোগ পেয়েছেন। কাজে লাগান। কিন্তু ভোটটা আপনারা কাকে দেবেন সেটা আমার জানা। আর সেটা তো ২৩ মে দেখাই যাবে দাদা। একটু ধৈর্য ধরুন না।

প্র : মোদির সভার প্রভাব নিয়ে আপনি এত উচ্ছ্বসিত। তৃণমূল সমর্থকরা ঠিক ততটাই আশাবাদী আগামিকাল মমতার আসানসোলের সভা নিয়ে। শোনা যাচ্ছে মানুষের ঢল নামবে। ম্যাচের ফিনিশিং হয়ে গেছে বলে আপনি যে ভাবছেন, কে বলতে পারে সেটা ঘুরে যাবে না?
বাবুল : দিদির এই পরিস্থিতির জন্য আশা ভোঁসলে একটা চমৎকার গান গেয়ে গিয়েছেন বহুবছর আগে। আপনার কথার জবাব না দিয়ে সেই গানটাই আমি এর জন্য ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনছি-যেতে দাও আমায় ডেকো না, কবে কী বলেছি মনে রেখো না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ