২০১৭ সালের জুলাই মাসে দেশের চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি হন রামনাথ কোবিন্দ
সৌরভ মাজি: ঠিক যেন সেই কিনু গোয়ালার গলি। দোতলা বাড়ি, লোহার গরাদে দেওয়া একতলার ঘর…। তস্য গলির ধারের এই দোতলা আর লাগোয়া একতলা বাড়িটির দিকে এই সেদিনও কেউ ফিরে তাকাতেন না। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল গড়াতেই বর্ধমান শহরে বড়বাজার মসজিদের উলটো দিকের গলির সেই জোড়া বাড়িই আমজনতার নজরবন্দি। হবে নাই বা কেন, নয়া রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ যে এই বাড়িতেই রাত কাটিয়ে গিয়েছেন দু’দুবার! তস্য গলির পলেস্তরা খসা বাড়িই তাই রাতারাতি বনে গিয়েছে শহরের একরত্তি প্লেস অফ ইন্টারেস্ট।
দোতলা সহজে নজর কাড়লেও যত কাণ্ড অবশ্য লাগোয়া ভাঙাচোরা একতলাটিকে ঘিরেই। এই বাড়িরই ভাড়াটে দিল্লির রাইসিনা হিলসের নয়া কর্তা রামনাথ কোবিন্দের শ্যালকের পরিবার। শ্যালক ওমপ্রকাশ কলি মারা গিয়েছেন বছর কুড়ি আগে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী গঙ্গাদেবীর সঙ্গে এই তো সেদিনও টেলিফোনে কথা বলেছেন ভাবী রাষ্ট্রপতি (তখনও শপথ হয়নি)। সোজা কথায় শ্বশুরবাড়িরই সেকেন্ড এডিশন এই শ্যালকের বাড়িতে রামনাথ এসেছেন বারবার। কিন্তু ভাড়াবাড়ির চিলতে পরিসরে রাতে আর থাকা হয়নি। প্রতিবারই রাত কাটাতে হয়েছে প্রতিবেশী চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়ের দোতলা বাড়িতে। কাজেই রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথের শপথ গ্রহণের পর এখন কলিদের মতো রায় পরিবারও এ তল্লাটে রাতারাতি ভিআইপি।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুইবাড়ির বাসিন্দারাই টিভির সামনে থেকে নড়েননি। নড়বেন কী করে! দশক পুরনো হলেও সেই স্মৃতি যে এখনও তাঁদের কাছে তাজা। আজ যিনি হলেন রাষ্ট্রপ্রধান, এই তো সেদিনও তিনি পরম আপনজনের মতোই যোগাযোগ রেখে চলেছেন এই দুই পরিবারে। সেই কাছের মানুষটিকে দেশের সর্বোচ্চ পদে শপথ নিতে দেখে তাই ওঁরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। আনন্দে গঙ্গাদেবীর চোখের পাতা ভিজে উঠেছে বারবার। রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনীত হওয়ার পর ফোন করেছিলেন গঙ্গাদেবী। বললেন, “নরেন্দ্র মোদি ওঁকে (রামনাথ) প্রার্থী করার পর ফোন করেছিলাম। উনিই ধরেছিলেন। আমাকে বললেন, বউদি কেমন আছ? আমাকে বাংলাতেই সম্বোধন করেন বরাবর। তারপর ননদ সবিতার সঙ্গে কথা হয়েছে। মিষ্টি খাওয়ানোর কথা বলেছি সবিতাকে।”
ওমপ্রকাশবাবুরা তিনভাই ও পাঁচবোন। সেজ বোন সবিতার স্বামীই এখন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। ১৯৯৬ সালে ওমপ্রকাশবাবু মারা যান। তখন কোবিন্দ অবশ্য আসতে পারেননি। মাসখানেক পরে এসেছিলেন। তারপর আসেন ২০০১ সাল নাগাদ। প্রদীপবাবু বলেন, “সেই সময় এসে দুই দিন ছিলেন কোবিন্দ সাহেব। আর্থিক সাহায্য করেন ওমপ্রকাশের ছেলেদের। তা দিয়েই নতুন দোকান করে দাঁড়াতে পেরেছে ওরা।” শেষবার যাঁর বাড়িতে রাত কাটিয়ে গিয়েছেন, সেই চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায় মারা গিয়েছেন বছর ছয়েক আগে। কোবিন্দ বড়মাপের আইনজীবী ছিলেন। তারপর সাংসদ, রাজ্যপাল হয়েছেন। এবার হলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু গঙ্গাদেবী নিশ্চিত, ‘ষোলোআনা খাঁটি’ মানুষ তাঁর নন্দাই এরপরও সেই আগের মতোই থাকবেন। বদলাবেন না এতটুকুও। শুধু আক্ষেপ একটাই, নিরাপত্তার ঝক্কি আর সময় বাঁচিয়ে আর কখনও কি রামনাথজি আসবেন তাঁর এই ছোট্ট ঘরে!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.