বাবুল হক, মালদহ: একটা সরকারি চাকরি চাই৷ লাশকাটা ঘরে হলেও চলবে! দেশ জুড়েই চাকরির আকাল। যে কোনও উপায়ে একটা চাকরি পেলেই হল। গ্রুপ বা গ্রেডের বাছবিচার নেই। চাকরির জন্য যে কী হাহাকার চলছে, তারই এক বেনজির দৃষ্টান্ত মিলেছে মালদহে। লাশকাটা ঘরেও চাকরি করতে আপত্তি নেই উচ্চশিক্ষিতদের। না, চিকিৎসক বা কোনও আধিকারিক পদে নয়। শব ব্যবচ্ছেদ করার সময় চিকিৎসককে কাটাছেঁড়া করতে সাহায্য করবেন, সেই গ্রুপ ডি পদেই চাকরি পাওয়ার আশায় আবেদন করেছেন পিএইচডি গবেষক থেকে ডবল এমএ, এমফিল করা প্রার্থীরাও। উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের এই আবেদনপত্র দেখেই চোখ কপালে উঠেছে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের। মাত্র দু’টি পদের জন্য ৩১৫টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। যার মধ্যে শতাধিক আবেদনকারীই উচ্চশিক্ষিত। মাস্টার ডিগ্রিধারী। অথচ গ্রুপ ডি পদ দু’টির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার ন্যূনতম মাপকাঠি ধার্য করা ছিল অষ্টম শ্রেণি পাস।
[বসিরহাটে অভিযুক্ত কিশোরের বাড়ি বাঁচাতে এগিয়ে আসেন মুসলিমরাই]
মালদহ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, গ্রুপ ডি পদে দু’জন ‘মর্গ সহায়ক’ নেওয়া হবে। এজন্য নিয়ম মেনে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। গত শুক্রবার ছিল প্রার্থীদের আবেদনপত্র জমা নেওয়ার শেষ দিন। এরপরই আবেদনপত্র ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়। তখনই বহু উচ্চশিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের আবেদনপত্র দেখে কর্তারা বিস্মিত হয়ে পড়েন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রতীত কুণ্ডু বলেন, “মেডিক্যাল পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য শব ব্যবচ্ছেদের কাজে সহায়তা করার দু’জন লোক দরকার। আমরা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। দেখছি, ডবল এমএ, এমফিল, পিএইচডি-রাও সেই গ্রুপ ডি পদের জন্য আবেদন করেছেন। এটা বিস্ময়কর হলেও এর কারণ কী, সেটা বলতে পারব না। নিয়ম মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলবে।”
[গরু চরানো নিয়ে অশান্তি রাজস্থানের অভয়ারণ্যে, আক্রান্ত নিরাপত্তারক্ষীরা]
অপরদিকে, মেডিক্যাল কলেজের এক কর্তা বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম দু’একজন ভুলবশত আবেদন করে ফেলেছেন। পরে আবেদনপত্রের সংখ্যার বহর দেখে অবাক হয়েছি।” আপাতত অষ্টম শ্রেণি পাসের যোগ্যতায় এত উচ্চশিক্ষিতদের মধ্য থেকে কাকে কীভাবে বাছাই করে নির্বাচিত করা হবে, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও। আর এই ঘটনাই ফের একবার দেশের চাকরির করুণ অবস্থার দিকে আঙুল তুলে দিল।