বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: তিনি একটু অন্যরকম। না হলে একটা প্রত্যন্ত গ্রামের ব্রাহ্মণ পরিবারের বৃদ্ধা যে এতটা আধুনিকমনস্ক হতে পারেন তা ভাবাই যায় না। স্বামী সামান্য উদ্বাস্তু ও ত্রাণ পুনর্বাসন দফতরের কর্মী ছিলেন। সংসারে অভাব ছিল। সেই সঙ্গে ছিল মনের স্বতন্ত্র ভাবনা। তাই মৃত্যুর পরে নিজের নশ্বর দেহটি বিজ্ঞান গবেষণার কাজে দান করার শেষ ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন ছেলের কাছে। মায়ের শেষ ইচ্ছের মর্যাদা দিলেন ছেলে ও মেয়ে।
সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে নিজেদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও মায়ের শেষ ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়ে মায়ের মৃতদেহ বিজ্ঞান গবেষণার জন্য কল্যাণী মেডিক্যাল কলেজ ও জওহরলাল নেহরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিলেন ছেলে দেবদাস চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে মৃতদেহ দেশের একটা মানুষের উপকারে লাগাতেই এই সিদ্ধান্ত। তিনি জানান, মায়ের এই সিদ্ধান্ত একজন বড় দেশপ্রেমিকের থেকে কোনও অংশে কম নয়।
বৃদ্ধা বাসন্তী চক্রবর্তীর বাড়ি নদিয়ার চাকদহ থানার পুর্বপালপাড়া গ্রামে। অজ গ্রামের মহিলা পড়াশোনাও বেশি করতে পারেননি। মেয়ে পাপিয়া জানান, মা বলে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর পর যেন দেহটি একটা ভাল কাজে লাগে। মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিল, দেহটি যেন মানুষের কাজে লাগে। আমরা সন্তান হিসাবে তাঁর ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিলাম। মঙ্গলবার ৭৬ বছর বয়সে মারা যান বাসন্তীদেবী। প্রাইমারি গৃহশিক্ষক ছেলে দেবদাস চক্রবর্তীর কাছেই থাকতেন বাসন্তীদেবী। মেয়ে পাপিয়া বিয়ের পর থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। তবে মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েই ছুটে আসেন বাপের বাড়িতে। তিনি জানান, “হিন্দু শাস্ত্রমতে মৃতদেহ দাহ করে শ্রাদ্ধকাজ হবে। এটাই নিয়ম। বিশেষ করে ব্রাহ্মণ পরিবারে তো বটেই। তবে জানতাম মায়ের শেষ ইচ্ছেটাও। নিজে একজন মহিলা। তাই মায়ের শেষ ইচ্ছেপুরণ করা ধর্ম বলে মনে হয়েছে।”
গবেষণার কাজে মায়ের দেহদান করলেন। বুধবার ছেলে দেবদাস ও মেয়ে পাপিয়া মায়ের মৃতদেহ দান করলেন বিজ্ঞান গবেষণার কাজে লাগানোর জন্য। যদিও এই দানকেই সৎকার বলে মেনে নিয়েছেন ছেলে-মেয়ে। দেবদাসবাবুর বক্তব্য, “মায়ের মনের স্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেহ দান করেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.