শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: এ যেন জাদুকরের ঝুলি। ঝুলি খুললেই উপচে পড়বে মহার্ঘ্য সব দ্রব্য-সামগ্রী। নিজেকে সকলের চোখে তেমনভাবেই তুলে ধরেছিল ইন্দ্রনীল রায়। লোকে জাদুবলে স্বর্গ দেখতেও রাজি। তাই ইন্দ্রনীলের প্রতারণার ফাঁদে সহজেই পড়ত বোকাসোকা প্রতিবেশী। এভাবেই চলত রোজগার। দিন বেশ কাটছিল, তবে পুলিশের নজর পড়তেই বিপত্তি। ধরা পড়ল প্রতারক। এমনই ঘটনা ঘটেছে জলপাইগুড়িতে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্র নাথ ঘোষের আপ্ত-সহায়ক পরিচয় দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা। এই অভিযোগে যুবক ইন্দ্রনীল রায়কে গ্রেপ্তার করল জলপাইগুড়ির কোতয়ালি থানার পুলিশ।। শনিবার অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে ধৃতকে হেপাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, আদতে কোচবিহারের বাসিন্দা ইন্দ্রনীল রায় বর্তমানে জলপাইগুড়িতেই থাকেন। বেশ কয়েক বছর ধরেই শহরের শিল্পসমিতি পাড়ার এক আবাসনেই আস্তানা তাঁর। অভিযোগ, কোচবিহার থেকে এখানে আসার পর নিজেকে সকলের কাছে পদস্থ সরকারি আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। কখনও বলতেন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্র নাথ ঘোষের আপ্ত সহায়ক। কখনও সখনও বাজারে গিয়ে বা মোড়ের মাথায় চায়ের দোকানে নিজেকে জাহির করার প্রচেষ্টা চালাতেন। পাশের মানুষটির গতিপ্রকৃতি বুঝেই খুলে বসতেন গল্পের ঝাঁপি। এককথা দু’কথায় পড়শির বাড়ির পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে সময় সুযোগ মতো নিজের নয়া পরিচয় দিতেন। কাউকে বলতেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে এবার দেখা হলেই প্রতিবেশীর সুশিক্ষিত ছেলের প্রাইমারির চাকরিটা হয়ে যাবে। চায়ের দোকানে আড্ডা দেওয়ার সময় বলেই ফেললেন, সরকারি আধিকারিক হওয়ার সূত্রে রেলে চাকরি করে দেওয়া তাঁর কাছে কোনও ব্যাপারই না। সঙ্গেসঙ্গেই খবরের কাগজে মুখ গুঁজে থাকা দুই যুবক তাঁর দিকে তাকাল। পরস্পরের চোখে চোখে কথাও সেরে নিল। ইন্দ্রনীল রায় বুঝলেন টোপ গিলেছে। তিনি আচমকাই ব্যস্ততা দেখিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে হাঁটা লাগালেন বাড়ির পথে। ওই যুবক পড়ি কি মরি করে ছুটে এসে একেবারে ইন্দ্রনীল রায়ের পায়ে পড়েন আর কি। দিন কয়েক ঘোরানোর পর প্রতারণার ঝাঁপি খুললেন তিনি। লাখ দু’য়েক টাকা মিললেই চাকরি হাতে গরম। ধার দেনা করে টাকা দিয়ে যখন অপেক্ষায় বসে আছেন, তখন ইন্দ্রনীল রায় বেপাত্তা। বাধ্য হয়েই কোতয়ালি থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। তদন্তে নামে পুলিশ। এরই মধ্যে প্রায় আট দশজনের প্রতারণার খবর আসে। সকলেই ইন্দ্রনীল রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ইন্দ্রনীল রায়কে এদিন গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তবে যাঁর আপ্ত সহায়কের পরিচয় দিয়ে এই প্রতারণা, তিনি কিন্তু এই ঘটনার বিন্দু বিসর্গও জানে না। ধৃত ইন্দ্রনীল রায়ের সঙ্গে আর কে কে প্রতারণায় যুক্ত রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ধৃতের পুলিশ হেফাজত হলে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.