ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার পঞ্চম আসন ঘিরে নয়া সমীকরণের ইঙ্গিত। এই আসনে বিশিষ্ট আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভির নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সূত্রের খবর, কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারে তৃণমূল। এর ফলে জাতীয় রাজনীতিতে ফের দুই কংগ্রেস কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা তৈরি হল।
[রাজ্যসভা ভোটে পঞ্চম আসনেও প্রার্থী দেবে তৃণমূল]
বাংলা থেকে রাজ্যসভার পাঁচটি আসনে নির্বাচন। শক্তির বিচারে তৃণমূলের চারটি আসনে জয় নিশ্চিত। পঞ্চম আসন নিয়ে যত নাটক, টানাপোড়েন। কারণ কোনও দলেরই একার পক্ষে এই আসনে জেতা সম্ভব নয়। কিছু দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পঞ্চম আসনে তারা প্রার্থী দেবেন। তৃণমূল নেত্রী এই আসনে নাদিমুল হকের কথা ঘোষণা করেছিলেন। বামেদের ঘোষিত অবস্থান কংগ্রেসকে তারা সমর্থন করবে না। সাপ না মরে আবার লাঠিও না ভাঙে এই অঙ্কে অরাজনৈতিক কাউকে প্রার্থী করতে চাইছিল বামেরা। কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরি আবার সীতারাম ইয়েচুরিকে নিঃশর্ত সমর্থনের কথা আগেভাগে জানিয়েছিলেন। কিন্তু অধীরের প্রস্তাবকে গুরুত্বই দেয়নি বামেরা। সূত্রের খবর, বিগত রাজ্যসভা নির্বাচনে বামেদের এই দোদুল্যমানতা দেখে কংগ্রস রাজনৈতিক প্রার্থীর বিষয়টি চূড়ান্ত করে। এর জন্য অভিষেক মনু সিংভিকে তারা পঞ্চম আসনে প্রার্থী করে ফেলল। শীঘ্রই এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে কংগ্রেস নেতৃত্ব। সিংভির প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা আবদুল মান্নান জানান, এটি হাইকম্যান্ডের সিদ্ধান্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পঞ্চম আসনের জন্য নাদিমুল হকের কথা ঘোষণা করলেও গত কয়েক দিনে পরিস্থিত বদলাতে থাকে। সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা অধিবেশনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মান্নান। সূত্রের খবর, কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রথম থেকে এই ব্যাপারে মমতার সমর্থন চাইছিল। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক। রাজ্যসভা নির্বাচনের মুখে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দলনেত্রী কী বলেন তা নিয়ে বাড়ছে কৌতুহল।
[রাজ্যসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা কমিশনের, বাংলার পাঁচটি আসনে ভোট]
আগামী ২৩ মার্চ রাজ্যসভার নির্বাচন। প্রার্থী হিসাবে অভিষেক মনু সিংভি যথেষ্ট ওজনদার। রাজস্থান থেকে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। কংগ্রেসের মুখপাত্রর দায়িত্বেও রয়েছেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাংলা থেকে তাঁকে জেতাতে চাইছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, শাসক দলের সমর্থনের বিষয়ে রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল ইতিমধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলেছেন। মনু সিংভির সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বর সখ্য সুবিদিত। কয়েক মাস আগে সিংভি সারদা মামলায় রাজ্যের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে লড়েছিলেন। এজন্য অবশ্য প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বর তিনি বিরাগভাজন হয়েছিলেন। রাজ্যের হয়ে ওকালতি করার জন্য বাংলায় তাঁকে বয়কট করেছিলেন অধীর-মান্নানরা। শেষ পর্যন্ত সেই সিংভিকে মেনে নিতে হলে প্রদেশকে। অঙ্ক বলছে, নিজেদের চার প্রার্থীকে জিতিয়েও বেশ কিছু বাড়তি ভোট থাকছে তৃণমূলের। পাশাপাশি দ্বিতীয় পছন্দের ভোট ছাড়াও ক্ষুব্ধ বাম-কংগ্রেস বিধায়কদের ভোট যদি তৃণমূলের দিকে চলে যায় তা হলে মমতার পঞ্চম প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। এই মুহূর্তে তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা ২১৩। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে সিংভিকে জেতাতে কংগ্রেস ত্যাগী বিধায়কদের পুরনো দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। তাহলে সিংভির জয়ের রাস্তা পরিষ্কার হবে। সিংভির নাম আগেভাগে কংগ্রেস জানিয়ে দেওয়ায় বামেরা ঠিক কী করতে চাইছে তাও পরিষ্কার নয়। সব মিলিয়ে শাসকের অঙ্ক, কংগ্রেসের চাল, বামেদের সিদ্ধান্তহীনতা। রাজ্যসভা ভোটের আগে তিন শিবিরের এই ছবি বুঝিয়ে দিয়েছে হিসেব অনেক কিছু বদলে দিতে পারে।
[জল্পনার অবসান! তৃণমূল নয়, রাজ্যসভায় সপা-র প্রার্থী জয়া বচ্চন]