ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: করোনার (Corona Virus) উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশনে ভরতি এক ব্যক্তির মৃত্যুতে বিতর্কের মুখে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ। মৃতের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ বলে জানানো হলেও তাঁর দেহ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে হাসপাতালের ভূমিকায় একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গোটা বিষয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। যার রেশ পড়েছে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরও।
জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জের ইটাহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তি কয়েকদিন ধরেই শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। এরপর তাঁকে ভরতি করা হয় রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অন্তঃবিভাগের সাধারণ বিভাগে। ওই ব্যক্তির শরীরে করোনার একাধিক উপসর্গ থাকায় কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়। এরপর ওই রোগীর নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় প্রায় ১৯০কিলোমিটার দূরের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসার আগেই বুধবার সন্ধেয় মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু রিপোর্ট হাতে না পেয়ে দেহ ছাড়া হবে না, এমনটাই জানানো হয়েছিল হাসপাতালের তরফে। এ পর্যন্ত গোটা বিষয়টি স্বাভাবিক থাকলেও রিপোর্ট নিয়ে তৈরি হয় নানা ধোঁয়াশা। বৃহস্পতিবার সকালে সোশ্যাল মিডিয়া মারফত জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনা জানান যে, রাতেই মৃতের রিপোর্ট এসেছে এবং তা নেগেটিভ। এরপর এদিন বেলা দশটা নাগাদ হাসপাতালের সহকারি অধ্যক্ষ প্রিয়ঙ্কর রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেও রিপোর্ট সংক্রান্ত কোন তথ্য মেলেনি। এখানেই অসংগতির সূত্রপাত। যদিও ঘণ্টাখানেক পর প্রিয়ঙ্করবাবু জানান যে, কিছুক্ষণ আগেই রিপোর্ট এসেছে এবং তা নেগেটিভ। এদিন দুপুরে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা রবীন্দ্রনাথ প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় যে, সকালেই রিপোর্ট এসেছে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে যে, কেন একটি রিপোর্টকে কেন্দ্র করে এত চাপানউতোর প্রশাসনিক মহলের অন্দরে। কেন প্রত্যেকের বক্তব্যে সময় নিয়ে এত ধন্দ?
এই ঘটনার পর দেহ হস্তান্তর নিয়েও কার্যত চূড়ান্ত নাটকীয়তা দেখা যায় হাসপাতালের অন্দরে। যেহেতু রিপোর্ট নেগেটিভ বলেই দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেই কারণে স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের হাতেই দেওয়ার কথা ছিল ওই ব্যক্তির দেহ। এবিষয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা গিয়েছিল তাঁরা হাসপাতালে আসছেন। কিছুক্ষণ পর এদিন দুপুরে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, লোক এসেছিলেন এবং দেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে পুনরায় মৃতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা বলেন, মৃতের একমাত্র ছেলে কেরলে লক ডাউনে আটকে পড়ায় তাঁদের পক্ষে সময়মতো হাসপাতালে আসা সম্ভব হয়নি। অর্থাৎ এক্ষেত্রেও সংগতি নেই দু’তরফের বক্তব্যে। এতেই প্রশ্ন উঠছে তবে কোথায় গেল ওই ব্যক্তির দেহ? কার হাতে দেওয়া দেহ? শেষকৃত্যের সময় কারা হাজির ছিলেন? ওই ব্যক্তি যদি করোনা আক্রান্ত না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে কেন এত গোপনীয়তা? কোন তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে হাসপাতাল? জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় হাসপাতালের ভূমিকায় সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরাও রীতিমতো আতঙ্কিত। সঠিক তথ্য জানতে চেয়ে এদিন সহকারি অধ্যক্ষের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নার্সরা। তবে কোনও সদুত্তর মেলেনি, তাঁদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের, কার্যত এই আশ্বাসেই ফের কাজ শুরু করতে হয় তাঁদের। এই টানাপোড়েনের জেরে আতঙ্ক কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে রায়গঞ্জবাসীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.