সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধরা পড়ল কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা হাইস্কুলের সেই বহিরাগত দুষ্কৃতী। কয়েকদিন আগেই স্কুল চত্বরে ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ছবি লেন্সবন্দি করা হয়। ছবিতে দেখা যাচ্ছিল স্কুলের পোশাক পরা ছাত্রীর স্কুল চত্বরেই শ্লীলতাহানির শিকার হচ্ছে। জানা যায়, বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী এভাবেই ছাত্রীদের হাত ধরে টানাটানি করে। আপত্তিকরভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে হাত দেয়। অপমানে লজ্জায় লাল হয়ে গেলেও দুষ্কৃতীর হাত থেকে নিষ্কৃতী পায় না ছাত্রীরা। এহেন শ্লীলতাহানির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শিক্ষামহলে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ পৌঁছায় চ্যাংড়াবান্ধার বিডিও বীরুপাক্ষ মিত্রের কাছে। শ্লীলতাহানির ঘটনা শুনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। ঘটনার তিনদিনের মধ্যেই বহিরাগত দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারির পর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তাপসী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার চ্যাংড়াবান্ধা হাইস্কুল চত্বরেই দেখা গিয়েছিল ইচ্ছেমতো ছাত্রীদের গায়ে হাত দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। শুধু শ্লীলতাহানি করেই ক্ষান্ত হচ্ছে, এমন নয়। সেই সঙ্গে শ্লীলতাহানির ঘটনাদৃশ্যের সেলফি তোলারও চেষ্টা করছে। স্কুল চত্বরে এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলেও কেউ বহিরাগতদের আটকাচ্ছে না। স্কুল কর্তৃপক্ষেরও কোনও হেলদোল নেই। বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তাপসী সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর যুক্তি, এমন কিছু কখনও চোখে পড়েনি। এমনকী, স্কুলের অন্য কর্মীরাও স্কুল চত্বরে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেননি।
এদিকে ছাত্রীদের দাবি, এই ঘটনা একদিনের নয়। প্রায় প্রতিদিনই স্কুল চত্বরে একইভাবে শ্লীলতাহানির শিকার হয় তারা। স্কুল শুরুর সময় ও ছুটির সময় বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে স্কুল চত্বরে। তখন গোটা এলাকা পার্কের চেহারা নেয়। শ্লীলতাহানির খবরে উদ্বিগ্ন ছাত্রীদের অভিভাবকরাও। তাঁদের অভিযোগ, এই ঘটনা নিত্যদিনের। অনেকবার বিষয়টি বন্ধের দাবিতে তাঁরা প্রধান শিক্ষিকাকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। একবার বহিরাগতদের হাতেনাতে পাকড়াও করে স্কুল কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও কোনওরকম আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি স্কুল। স্কুল লাগোয়া এলাকায় বাড়ি হওয়ার জন্য মেয়েদের নিয়ে রাস্তায় বেরোতেও তাঁরা ভয় পান।
সংবাদমাধ্যমে স্কুল চত্বরের এহেন অরাজকতার খবর দেখেই বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারই জেরে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হল দুষ্কৃতী। গ্রেপ্তারির পরই স্কুল কর্তৃপক্ষের মতামত জানার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, স্কুল কর্তৃপক্ষের চুপ করে থাকার পিছনে অন্য কারণও থাকতে পারে। যারা এই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা এলাকার হওয়াই স্বাভাবিক। কেন না বাইরে থেকে এসে স্কুলে ঢুকে এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস কেউ দেখাবে না। দেখতে হবে কোনও রাজনৈতিকদলের ছত্রছায়ায় থাকা দুষ্কৃতীরাই এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা। হয়তো কোনও বড় রকমের ক্ষতির ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে স্কুল। আগে সেই বিষয়টি নিয়ে বিশদে তদন্ত হোক। ছাত্রীদের শ্লীলতাহানির মতো ঘটনা কেন স্কুল দেখেও দেখছে না? তারপর দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। একজন দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তার করলেই যে এই ঘটনা থেমে যাবে, এমন নয়। বেড়েও তো যেতে পারে। প্রয়োজনে স্কুল চত্বরে পুলিশি নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করুক প্রশাসন। গোড়া থেকে নির্মূল করা হোক সমস্যার বীজ। এদিকে দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তারের পরে প্রশাসনের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.