দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: মানবাধিকার ভাঙার অভিযোগে এবার কাঠগড়ায় খোদ আইনরক্ষকই৷ প্রকাশ্য দিবলোকে এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্রকে হাতকড়া পরিয়ে ট্রেনে করে আদালতে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠল তারকেশ্বর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় তারকেশ্বরের সাধারণ মানুষ রীতিমতো প্রতিবাদে সরব৷ ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, পুলিশ যে গর্হিত কাজ করেছে, তার বিচার কে করবে? তারা চান অবিলম্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার হোক।
[আরও পড়ুন : আর্থিক লোকসানে রাজ্যের দু জায়গায় বন্ধ সিলিন্ডার তৈরির কারখানা, বিক্ষোভ শ্রমিকদের]
ধৃত ছাত্রের নাম সায়নদীপ সামন্ত। সে কলকাতার একটি কলেজে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাঠরত৷ সায়নদীপ বিজেপি ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সদস্য। ঘটনার সূত্রপাত ২০১৪ সালে৷ সেসময় তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ টিএমসিপি ও বিজেপি ছাত্র সংগঠন এবিভিপির সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ধৃত সায়নদীপের অভিযোগ, সেই সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যাওয়ায় তাকে ও মহম্মদ নাসিম নামে আরেক সদস্যকে টিএমসিপির সদস্যরা বেধড়ক মারধর করে। ওই ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনায় তাকে নিয়মিত সাক্ষী হিসেবে চন্দননগর মহকুমা আদালতে হাজিরা দিতে হত। বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পরীক্ষার চাপের জন্য সম্প্রতি ওই ছাত্র আদালতে হাজিরা দিতে পারেনি। তাই আদালত অবমাননার অভিযোগে সায়নদীপের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাতেই তারকেশ্বর থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্ত শুক্রবার সকালে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় এই চরম অমানবিক ঘটনাটি ঘটে৷ রীতিমতো প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে হাতকড়া পরিয়ে ডাউন তারকেশ্বর লোকালে তোলে পুলিশ। ওই ছাত্রের বহু পরিচিত মানুষ ও নিত্যযাত্রীরা রীতিমতো হতবাক হয়ে যান। তাঁরা এই ঘটনায় ক্ষোভও প্রকাশ করেন। অনেকেই ভাবতে থাকেন, কোনও দাগী অপরাধী হবে হয়তো। কিন্তু পুরো বিষয়টি জানার পর নিত্যযাত্রীরাও পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁদের বক্তব্য, একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে যেভাবে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে লোকাল ট্রেনে করে নিয়ে এসেছে, তাতে
পুলিশের অপরাধও কোনও অংশে কম নয়। তারা মনে করেন, এই ঘটনায় ওই ছাত্রের ভবিষ্যত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তার মূল্য কে দেবে।
[আরও পড়ুন : মহিলাকে ধারাল অস্ত্রের কোপ ব্যক্তির, আতঙ্কে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিলেন যাত্রীরা]
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক তথা বিজেপির শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক গণেশ চক্রবর্তী জানান, ২০১৪ সালে চাঁপাডাঙা কলেজে তাদের ছাত্র সংগঠনের এক সদস্য মহম্মদ নাসিমকে বেধড়ক মারা হয়। তার সাক্ষী ছিল সায়নদীপ সামন্ত। গণেশবাবুর অভিযোগ, সায়নদীপকে ভয় দেখিয়ে তার উপর চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে সে আদালতে সাক্ষী দিতে যেতে পারে নি। সায়নদীপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু তাকে যেভাবে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে ট্রেনে করে নিয়ে গেছে তাতে তার সম্মানহানি হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। একজন শিক্ষিত ছেলেকে যেভাবে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা আজকের সমাজের লজ্জা। বিজেপির পক্ষ থেকে গণেশবাবু এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে জানান, যারা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের শাস্তি চাই। এর জন্য তারা আগামী দিনে বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামতে চলেছেন।