সুব্রত বিশ্বাস: যাত্রীরা বিনা টিকিটে ভ্রমণের অপরাধে জরিমানা দিচ্ছেন। বুকিংহীন পণ্যেও দিচ্ছেন জরিমানা। তবে সেই টাকা টিকিট পরীক্ষকের চালাকিতে রেলের ঘরে জমা পড়ছে না। চলে যাচ্ছে পরীক্ষকদের পকেটেই। এই ‘ভানুমতির খেল’ সাধারণ যাত্রীরা কিছু না বুঝলেও বোঝেন অবশ্য রেলকর্তারা। শেওড়াফুলি স্টেশনে এই খেলা জনপ্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
[শহরে চালকহীন মেট্রোর রেক, ঝাঁ চকচকে কোচে স্বপ্নের সফর]
রেলমন্ত্রীর কাছে শনিবারই টুইটে এই বার্তা পৌঁছেছে। এক্সট্রা ফেয়ার টিকিটে বিনা টিকিটের জরিমানা ও মালের ফেয়ার চার্জ ইস্যু করে মালের চার্জের পুরো টাকাটাই পকেটে ঢোকাচ্ছেন টিকিট পরীক্ষকরা। হেড টিসি তথা বেস ইনচার্জ শেখ গোলাম নবি ও টিসি টি কে রায় এই কাজে পারদর্শী বলে অভিযোগ তুলেছেন যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। প্রমাণ হিসাবে গোলাম নবির ইস্যু করা একটা ইএফটিও দিয়েছেন তাঁরা। ইএফটিতে ১১ আগস্ট কেটে ১২ আগস্ট করা হয়েছে। টিকিট নম্বরের জায়গায় ‘নীল’ লিখে তা কেটে একটা নম্বরও দেওয়া হয়েছে। এর পর মালের জায়গায় ৭০ কিলো দেখানো হয়েছে। যেখানে ৩৫ কিলো জরিমানা যোগ্য ও বাকি ৩৫ কিলো সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। জরিমানার জায়গায় ভাড়া ১০ টাকা দেখানো হয়েছে। তারকেশ্বর থেকে শেওড়াফুলির মাঝে যাত্রা দেখানো হয়েছে।
এই ইএফটি থেকে তছরুপের প্রমাণ স্পষ্ট বলে রেলকর্তাদের একাংশ জানিয়েছেন। গোলাম নবির ইস্যু করা এই ইএফটি সম্পর্কে জানা গিয়েছে, তিনি ১১ আগস্ট এক বিনা টিকিটের যাত্রীর জরিমানা করেন। যেখানে টিকিট নম্বর ‘নীল’ দেখানো হয়েছে। ওই যাত্রীর জরিমানার পর রসিদটি নিয়ে নেন নবি। বলেন, টিকিট স্টেশনে জমা দিতে হয়। তাই রসিদও জমা রাখলাম। পরের দিন সেই কাটা রসিদে ১১ তারিখ কেটে ১২ আগস্ট করা হয়। ইনিশিয়াল স্বাক্ষর ছাড়া এই বেআইনি কাজ করেও সেই ইএফটিতে টিকিট নম্বরের জায়গায় ‘নীল’ লেখাটিও কেটে একটা চার অক্ষরের অস্পষ্ট নম্বর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩৫ কিলো মালের চার্জ ১৮০ টাকা হলেও সেখানে আগের দিনে ১০ ও ২৫০ জরিমানা মোট ২৬০ থেকেই গিয়েছে। জরিমানা কেটে ঠিক করা যায়নি। ফলে এই তছরুপের বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট।
[কানে হেডফোন, হাসনাবাদ লোকালের ধাক্কায় মর্মান্তিক মৃত্যু যুবকের]
বিনা টিকিটে জরিমানা ও মালের চার্জ একই রসিদে করার আইন থাকলেও এই গরমিলে স্পষ্ট তছরুপের ঘটনা বলে মনে করেছেন শেওড়াফুলির সিটিআই কে সি দাস। তিনি বলেন, তদন্তে দোষ প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের বেআইনি কাজ সব স্টেশনেই বেশ জনপ্রিয়। বছর চারেক আগে হাওড়া স্টেশনে এই ধরনের অপরাধ করে ধরা পড়ায় চাকরি যায় সায়ন্তন সিনহার। যাত্রীদের অজ্ঞাতে টিকিট পরীক্ষকরা মোটা আমদানি করলে তা রেলের চরম আর্থিক ক্ষতি বলে কমার্শিয়াল বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন। শেওড়াফুলিতে দৈনিক হাজার হাজার টাকা এভাবেই পকেটে পুরছেন টিকিট পরীক্ষকরা। তিনটি ডাউন কাটোয়া লোকালে আসা পণ্য থেকে মোটা টাকা আদায় হয় বলে অভিযোগ। টিকিট পরীক্ষকদের চক্রটি এতটাই সক্রিয় যে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পনেরো-কুড়ি বছর ধরে সেখানে কাজ করছেন। হাওড়ার কমার্শিয়াল বিভাগের কর্তারা কোনওরকম পদক্ষেপ না করায় তাঁদের বিরুদ্ধেও পক্ষপাতের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। গোলাম নবির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও কোনওরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
ছবি- প্রতীকী
[বেড়াতে গিয়ে মাঝ নদী থেকে উধাও যুবক, সুন্দরবনে ঘনাল রহস্য]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.