ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: ক্লাসের ফার্স্ট বয়। যে পরীক্ষায় বসেছে সেটাতেই প্রথম। এমনকি মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাতেও স্কুলের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে। স্বপ্ন কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে আইআইটিতে পড়বে। কিন্তু এই করোনা মহামারী সেই স্বপ্নে যেন জল ঢেলে দিয়েছে। কঠিন ও রুঢ় বাস্তবের সামনে ফেলে দিয়েছে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সন্দীপন দাসকে। লকডাউনে বাবার আয় বন্ধ। তাই সংসারের হাল ধরতে সাইকেলে করে ফুচকা ফেরি করছে সেই ‘ফার্স্ট বয়’।
করোনার এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে তা হলে, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া তো দূর, এগারো বারো ক্লাসেই লেখাপড়া চালানো দায় হতে যাবে বলে মনে করছে সন্দীপন। উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের শরৎপল্লির বাসিন্দা সে। মেধাবী ওই ছাত্রের বাবা পেশায় অটোচালক। খুব আহামরি অবস্থা না হলেও পরিবারকে স্বাচ্ছন্দেই রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু লকডাউনে দু’মাসের উপর তার অটো ঘরবন্দি। আয় পুরো বন্ধ। তাই উপার্জনের জন্য বাড়িতে বসে ফুচকা তৈরি করতে শুরু করেন তিনি। সেই ফুচকা সাইকেলে করে ঘুরে ঘুরে ফেরি করে ছেলে সন্দীপন।
[আরও পড়ুন: লকডাউনে বাড়ি ফেরার আবদার, বারাকপুরে পরিচারিকাকে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টা পুলিশকর্মীর]
এলাকাবাসীর থেকে জানা যায়, ছোট থেকেই লেখাপড়ায় ভাল সন্দীপন। শ্যামনগর কান্তিচন্দ্র হাই স্কুলের ছাত্র সে। আগাগোড়া ক্লাসে ফার্স্ট হয়। স্থানীয়দের আশা ছিল মাধ্যমিকের পর কোনও চমক দেখাবে সন্দীপন। কিন্তু সেই সম্ভাবনাময় ছাত্রের এই করুণ পরিণতি দেখে হতবাক হয়ে যান এলাকার মানুষ। সন্দীপনের বক্তব্য, “ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখি যে আমি আইআইটি থেকে পাশ করে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হব। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সে স্বপ্ন বাস্তব হবে না। একটু একটু করে ভেঙে যাচ্ছে। আইআইটি তো দূর, আমার বাবা মায়ের এখন এগারো বারো ক্লাসে পড়ানোর সামর্থ্যই নেই।”
তবে আশা এখনও শেষ হয়নি। অভাবী এই ছাত্রের কথা জানতে পেরে এগিয়ে আসেন ভাটপাড়ার বিদায়ী পুরপ্রধান অরুণ বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সন্দীপন একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা। শুধুমাত্র অভাবের জন্য তার স্বপ্ন ভাঙবে না। ওর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য, এবং উচ্চশিক্ষার জন্য যা প্রয়োজন সব পাবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং ভাটপাড়া পুরসভার তরফ থেকে তাকে সবরকম সাহায্য করব।”