সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: বিমল গুরুং ও তাঁর স্ত্রী আশা গুরুংয়ের সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল সিআইডি। বুধবার দার্জিলিং জেলা পুলিশের সহায়তায় সিআইডির একটি দল গুরুংয়ের পাতলেবাসের বাড়িতে অভিযান চালায়। গুরুংয়ের ব্যবহারের সমস্ত জিনিসপত্র, এমনকী আশা গুরুংয়েরও সমস্ত সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জামাকাপড় থেকে শুরু করে বাড়ির সমস্ত ধরনের জিনিসপত্রও রয়েছে। তবে বিমলের বিলাসবহুল একাধিক গাড়ি, টাকাপয়সা বা অলঙ্কার তেমন কিছু বাড়িতে ছিল না। সেগুলি গুরুং নিজের কাছে রেখেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগেই একটি ছোট গাড়ি পাহাড় লাগোয়া জঙ্গল থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এদিন বাড়িটিও সিল করে দেওয়া হয়। সিআইডির স্পেশাল সুপার অজয় প্রসাদ বলেন, “এদিন দু’জনের সমস্ত অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হল। অন্যান্য মোর্চা নেতাদের বাড়িতেও অভিযান চালানো হবে।”
[শহরে ব্যাংক জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত, সিট গঠন করে তদন্ত লালবাজারের]
গত ২৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আত্মগোপনকারী মোর্চা নেতাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেয়। এই তালিকায় রয়েছেন গুরুং দম্পতি, মোর্চার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি ও অন্যান্য শীর্ষ মোর্চা নেতারা। এদিন বিমল ও আশার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের মধ্য দিয়ে অভিযান শুরু হল। এরপর অন্য মোর্চা নেতার বাড়িতে অভিযান চালানো হবে বলে সিআইডি সূত্রের খবর। ২০১৬-র জুন-জুলাই মাসে পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাহাড়ে টানা অশান্তি, গোলমাল ছড়ানোর জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। তৎকালীন মোর্চা সুপ্রিমো তথা প্রাক্তন জিটিএ চেয়ারম্যান বিমল গুরুং, তাঁর স্ত্রী আশাদেবী সহ প্রায় সমস্ত শীর্ষস্থানীয় মোর্চা নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও দায়ের করা হয়। এদের বিরুদ্ধে অপহরণ, খুন, তোলাবাজি, দাঙ্গা, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কাজে বাধা-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন মামলার সূত্র ধরে অভিযুক্ত ওই নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে পুলিশ। বিমল-রোশনদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করা হয়। এরপরই গা-ঢাকা দেয় সস্ত্রীক বিমল ও রোশনরা। কখনও সিকিম, কখনও নেপাল আবার কখনও দিল্লিতে খোঁজ মিলেছে তাঁদের। রাজ্যের তরফে তল্লাশি কঠোর হওয়ার পর থেকেই অন্তরালে চলে যান গুরুং। গুরুংকে ধরতে গিয়ে এসআই অমিতাভ মালিকের মৃত্যু হয়।
[বাড়ির অমতে বিয়ের শাস্তি, নবদম্পতিকে বিবস্ত্র করে খাওয়ানো হল প্রস্রাব]
এরপরেই অন্তরালে চলে যান এই মোর্চা নেতা ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। মাঝেমধ্যে গোপন আস্তানা থেকে বার্তা ও ভিডিও প্রকাশ করে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টাও হয়েছে। আদতে পাহাড়ে গুরুং যে গুরুত্ব হারিয়েছে, তা প্রমাণিত হয় বার্তায় কোনও কাজ না হওয়ায়। এমনকী, নিজের গড়া দল থেকে তাঁকে পদচ্যুত করে নতুন কমিটি গঠন করেন মোর্চার প্রগতিশীল নেতৃত্ব। বিনয় তামাংকে সভাপতি করে নতুন করে দল চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সহ-সভাপতি হন অনিত থাপা। পাহাড়ের উন্নয়নের স্বার্থে রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা করেই এগোবেন নতুন মোর্চা নেতারা। এমনটাই স্থির হয়। তার ফলও মেলে হাতেনাতে। পাহাড়ে শান্তি ফিরতে সময় লাগেনি। স্বীকৃতি স্বরূপ একাধিকবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ে আসেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন খাতে একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপও নেন। মংপুতে দীর্ঘদিনের চাহিদা মেনে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা করা হয়। জোয়ার আসে পর্যটনেও। তবে টানা দু’মাসের অশান্তি ও হিংসা ছড়ানোর ঘটনার পর যে বিমল ও তার সঙ্গীদের রেয়াত করা হবে না, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে রাজ্য। ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বিমল গুরুং, রোশন গিরিদের নাম।