চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: এখানে দেবী আক্ষরিক অর্থেই সালঙ্করা। পঞ্চমীতে মা দুর্গাকে গয়না পরিয়ে হয় উৎসবের শুভ-সূচনা। আসানসোলের মরিচকোটা গ্রামের প্রাচীন দুর্গাপুজোর মূল আকর্ষণ মা দুর্গার গায়ে ২০০০ গ্রামের সোনার গয়না। গত দশ বছর ধরে মা দুর্গাকে একটু একটু করে সোনার গয়না দিয়ে সাজিয়ে তোলার রেওয়াজ তৈরি হয়েছে এই মন্দিরে। পঞ্চমীতে মায়ের গায়ে গয়না পরিয়ে দশমীতে সেই গয়না খুলে সারা বছর রেখে দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের লকারে।
[আশ্বিনেই বাঙালির তেরো পার্বণের স্বাদ মালদহের মণ্ডপে]
এবছর মা দুর্গার গায়ে উঠবে মোট ২,০০০ গ্রাম বা ২ কেজি সোনার অলঙ্কার। প্রায় ২০০ বছরের মরিচকোটা গ্রামে দুর্গাপুজো চালু করেছিলেন রামদেব রায়। রামদেব রায় কাটোয়ায় থাকতেন। স্বপ্নাদেশ পেয়ে একটি মরিচকোটায় এসে বেল গাছের নিচে তিনি মা দুর্গার পুজো শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে একাই তিনি পুজো চালাতেন। পরবর্তীকালে পুজোটি সর্বজনীন রূপ পায়। পুজো উদ্যোক্তারা জানান, পুজোটি বর্তমানে আচার্য, চক্রবর্তী ও রায় পরিবারে সদস্যরা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনটে ভাগে দায়িত্ব নিয়ে চালান। দশমীর দায়িত্ব গ্রামের এখন ষোলোআনা।
[শ্রীলঙ্কা থেকে পুরোহিত এসে পুজো করেন দেবী দুর্গাকে, কেন জানেন?]
মহাপুজোর তিনদিনই বলি প্রথার রেওয়াজ রয়েছে এই পুজোয়। আর পুজোর দিনগুলিতে মায়ের ভোগ একসঙ্গে পাত পেড়ে খান পঞ্চগ্রামের মানুষ। সময় বদলেছে, বদলেছে পুজোর জাঁকজমক। ভক্তদের মনস্কামনা পূরণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গত দশ বছর ধরে মায়ের গায়ের অলঙ্কারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কমিটির সভাপতি সোনা রায় বলেন, গত বছর মা দুর্গার মাথায় সোনার মুকুট ছিল এক কেজি সোনার। এবছর মায়ের দশটি হাত সাজানো হবে আরও ৩৬ ভরির সোনার চুড় দিয়ে। শুধু মা দুর্গা নয়, লক্ষ্মী-সরস্বতীর হাতেও থাকবে সোনার অলঙ্কার। ভক্তদের ইচ্ছাপূরণের ফলে সোনার অলঙ্কার বাড়তে বাড়তে ২ কেজিতে এসে ঠেকেছে। প্রতিমার মুকুট নাকের, কানের সীতাহার তৃতীয় নয়ন সবই সোনার। এবার জুড়ে গেল হাতের চুড়ও। এবছর ২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মরিচকোটা গ্রাম পর্যন্ত চন্দননগরের আলো দিয়ে সাজানো হবে পুরো রাস্তা। পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত মন্দির চত্বরে হবে নানা স্বাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকবেন টলিউডের রিমঝিম, মনামি ঘোষ, খরাজ মুখোপাধ্যায়, সনজিৎ মণ্ডল, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়রা।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়