সঞ্জীব মণ্ডল, শিলিগুড়ি: হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ। রোগীমৃত্যুকে কেন্দ্র করে তুমুল উত্তেজনা। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়ালেন মৃতের বাড়ির লোকজন। এর জেরে বেশ কিছুক্ষণের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাসপাতাল চত্বর। ঘটনাটি ঘটেছে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর থানার একতিয়াশাল এলাকার এক বেসরকারি হাসপাতালে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে রয়েছেন ভক্তিনগর থানার আইসি অনুপম মজুমদার। শিলিগুড়ির সহকারী পুলিশ কমিশনার অচিন্ত্য গুপ্ত। ভক্তিনগরের কাউন্সিল সত্যজিৎ অধিকারী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মৃতের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সমাধান সূত্র খুঁজছে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম ভারত মহান্ত (৩০)। কিডনির সমস্যা নিয়ে বুধবার ওই হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকের পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে পরেই তাঁর অস্ত্রোপচারও করা হয়। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। পরিবারের তরফের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে ভারত মহান্তর। গোটা ঘটনায় হাসপাতালের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল তুলেছে যুবকের পরিবার। অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের পর থেকে রোগীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। পরিবারের তরফে জানানো ছিল, রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে যেন তাঁদের জানানো হয়। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই দায়িত্ব পালন করেনি। যতবারই তাঁরা রোগীকে দেখতে চেয়েছেন, ততবারই বলা হয়েছে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছেন। সেই চিকিৎসকই ভারত মহান্তকে দেখছেন। তবে পরে জানা যায়, গোটাটাই মিথ্যে। হাসপাতালের বাইরে থেকে কোনও চিকিৎসকই সেখানে আসেননি। এমনকী, শনিবার সকালে নয়। রোগীর মৃত্যু হয়েছে শুক্রবার রাতেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই খবর মৃতের পরিবারকে দেয়নি। উলটে বারবার বলা হয়েছে রোগী ভাল আছে। শনিবার সকালে ৭.৩০ নাগাদ হাসপাতালের তরফে রোগীর বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, ভারত মহান্তর শারীরিক পরিস্থিতি ভাল নয়। খবর পেয়েই বাড়ির লোকজন চলে আসেন। অভিযোগ, তবুও বাড়ির লোকজনকে রোগীর কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে যখন তাঁদে যেতে দেওয়া হয়, তখন দেখা যায় দেহ শক্ত হয়ে গিয়েছে। এরপরেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাড়ির লোকজন।
মৃতের বোন কাকলি দাসের প্রশ্ন, ‘দাদার শারীরিক পরিস্থিতির কোনও খবর পাইনি দুদিন ধরে। হাসপাতালে আসলেও দাদার কাছে বাড়ির লোকদের যেতে দেয়নি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও জানানো হয়নি। বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসেননি। আমাদের মিথ্যে কথা বলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তাতেই মৃত্যু হয়েছে দাদার।’ এদিকে উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশকে দেখে ফের ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বাড়ির লোকজন হাতহাতিতেও জড়ায়। বেশ কিছুটা সময় ধরে পুলিশের সঙ্গেই চলে পরিবারের ক্ষুব্ধ সদস্যদের ধস্তাধস্তি। পরে পুলিশকর্তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই প্রসঙ্গে এলাকার কাউন্সিলর সত্যজিৎ অধিকারী বলেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। কি করে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানার চেষ্টা চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.