Advertisement
Advertisement

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন প্রতিষ্ঠিত হয় বেহালার এই ‘জগত্তারিণী সোনার দুর্গা’

ভোগে আজও থাকে মাছ ও পাঁঠার মাংস।

Devotees throng Behala 'Sonar Durga Mandir'
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 27, 2017 12:06 pm
  • Updated:September 27, 2019 5:56 pm

আজও বেহালার এই সোনার দুর্গাবাড়ির ঠাকুরদালানের সামনের উঠোনে হয় কাদামাটি খেলা। শহুরে এই বনেদিয়ানার খোঁজ নিলেন ইন্দ্রজিৎ দাস।

ইতিহাস-

Advertisement

জগৎরাম মুখোপাধ্যায় যশোর জেলা থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে বেহালায় আসেন। বেহালার সুপ্রাচীন হালদার পরিবারের অযোধ্যারাম হালদারের কন্যাকে বিবাহ করেন। জগৎরাম মুখোপাধ্যায় কুলীন ব্রাহ্মণ সন্তান হওয়ায়, হালদার পরিবার বৈবাহিক সূত্রে তাঁকে বেঁধে নিয়ে বেহালার প্রচুর জমিজায়গা দিয়ে জগৎরামকে পাকাপাকিভাবে বেহালায় বসবাস করার ব্যবস্থা করলেন। জগৎরামের কন্যা জগত্তারিণীর সূত্রেই মুখোপাধ্যায় বাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু। কিশোরী কন্যা জগত্তারিণী একবার মামার বাড়িতে অষ্টমীর দিন আসেন দুর্গাপুজোয় মায়ের খিচুড়ি ভোগ খাওয়ার জন্য। কোনও কারণে সেই ভোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে মামার বাড়ির তরফে একটু অবজ্ঞা পেলেন। আর সেই মুহূর্তে রাগে মামার বাড়ি থেকে সোজা চলে এলেন নিজের বাড়িতে বাবার কাছে। বাবার কাছে দাবি, এই মুহূর্তে দুর্গাপুজো করতেই হবে। জগৎরাম শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে মনোমালিন্য হবে ভেবে গররাজি হলেও শেষে মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন। নবমীতে পুজো হল ঘটে-পটে, আর সেই কারণেই এই সোনার দুর্গাবাড়ির পুজোতে আজও সন্ধিপুজো হয় না। পরের বছর জগৎরামের বড় ছেলে জয়নারায়ণ ও মেজ ছেলে ভবানীচরণের ইচ্ছাতে মৃন্ময়ী মূর্তি এল।

Advertisement

[রানি রাসমণির বাড়িতে ‘ছদ্মবেশে’ এসেছিলেন স্বয়ং রামকৃষ্ণদেব]

তবে এই সোনার দুর্গামূর্তি কিন্তু অনেক পরে। জগৎরামের প্রপৌত্র যদুনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারী। তিনি বেশ কিছুদিন ঢাকায় ছিলেন। ঢাকার ঢাকেশ্বরী প্রতিমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তারই অনুকরণে রাজপুতানার শিল্পীদের দিয়ে তৈরি করালেন সোনার দুর্গা। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বেহালার ব্রাহ্মসমাজ রোডের মুখার্জি বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হল সোনার দুর্গা। নামকরণ হল ‘জগত্তারিণী সোনার দুর্গা’। সেই থেকে অঞ্চলের সমস্ত মানুষ এই বাড়িকে সোনার দুর্গাবাড়ি বলেই জানে।

18119135_1174626165981549_1393824962194667155_n

[মালদহে পুজোপাগলদের মাতিয়ে রেখেছে অসুররূপী ‘কাটাপ্পা’]

প্রথা –

২ ফুটের মতো উঁচু সম্পূর্ণ সোনার তৈরি দুর্গা মায়ের মূর্তি। মায়ের মুখের গড়ন, টানা টানা চোখ, ঘোড়মুখ সিংহ–সবের মধ্যে একটা প্রাচীনত্বের ছাপ রয়েছে। লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ, কার্তিক, মা দুর্গার চালচিত্রের মধ্যে স্থাপিত। রত্নালংকারে সজ্জিতা মা সুদৃশ্য সিংহাসনে বসে আছেন। মহালয়ার দিন চণ্ডীপাঠ দিয়ে পুজোর শুরু। নবমীর দিন কুমারী ও সধবা পুজো হয়। আগে নবমীতে পশুবলি হলেও এখন আখ, ছাঁচিকুমড়ো বলি হয়। মাকে কলাইয়ের ডালের খিচুড়িভোগ দেওয়া হয়। কারণ জগৎরামের মেয়ে এসে যখন বাবাকে বাধ্য করলেন দুর্গাপুজো করতে, তখন একমাত্র কলাইয়ের ডালই বাড়িতে ছিল। সেই রীতি আজও চলে আসছে। মাকে সকালে খিচুড়িভোগ, দুপুরে অন্নভোগ আর সন্ধেবেলা লুচিভাজা দেওয়া হয়। প্রতিবার আরতির সময় একটি ভোগ দেওয়া হয়। একে দন্তভোগ বলে। এতে সমস্ত রকম গোটা ফল থাকে। নবমীর দিন মাকে যে বিশেষ ভোগ দেওয়া হয়, তাকে বাড়ির লোকেরা দৃষ্টিভোগ বলে। এই ভোগে থাকে মাছ ও পাঁঠার মাংস। মাকে ভোগ নিবেদন করে মায়ের ঘরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবারের সকলের ধারণা মা এই ভোগ স্পর্শ করেন। সেই চিহ্নও দেখা গিয়েছে।

11058115_867235590058811_5197441501724674569_n

দশমীর দিন ঠাকুরদালানের সামনের উঠোনে হয় কাদামাটি খেলা। প্রথমে বাড়ির সবথেকে বয়স্ক মানুষটির পায়ে সরষের তেল দিয়ে বাড়ির ছোটরা কাদামাটি নিয়ে পরস্পরকে মাখাতে থাকে। এরপর মায়ের প্রতীকস্বরূপ নবপত্রিকা বিসর্জন দেওয়া হয়।

[মঙ্গলদীপ নিবেদিত ‘সংবাদ প্রতিদিন পুজো পারফেক্ট ২০১৭’: সেরা ১২ পুজোর তালিকা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ