Advertisement
Advertisement
অনলাইন ক্লাস

প্রাথমিকের ক্লাস নিচ্ছেন ডেন্টিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট, সাইকোলজিস্টরা, বাঁকুড়ায় বিপ্লব!

মেডিক্যালের ডাক্তার খুদেদের সাপে কাটার পাঠ শেখাচ্ছেন।

Doctors taking primary classes in Bankura amidst corona crisis

ছবি প্রতীকী

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:July 27, 2020 6:59 pm
  • Updated:July 27, 2020 7:01 pm

গৌতম ব্রহ্ম: শাপে বর! লকডাউনের (Lockdown) জেরে স্কুল বন্ধ। বড়দের কিছু ভারচুয়াল ক্লাস হলেও ছোটদের নৈব নৈব চ। দমবন্ধ করা পরিবেশে ক্রমশই হাঁপিয়ে উঠছিল প্রাথমিকের শিশুরা। এগিয়ে এলেন ডাক্তারবাবুরা। তাঁরাই পালা করে ক্লাস নিতে শুরু করলেন প্রাথমিকের খুদে পড়ুয়াদের। প্রাক–প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি, সর্বত্রই শিক্ষকের ভূমিকায় স্টেথোধারীরা।

ভারতবিখ্যাত সর্পরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদার, ডেন্টিস্ট ডা. শর্মিষ্টা রায়, হদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম মিস্ত্রী, সাইকোলজিস্ট ডা. মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাক্তারি পড়ুয়ারাও ঈর্ষা করবেন এই তারকাখচিত শিক্ষকমণ্ডলীদের দেখে। এরাই পালা করে খুদেদের পড়াচ্ছেন। পারিশ্রমিক তো নিচ্ছেনই না, উলটে ক্লাস চালানোর জন্য মাসে মাসে টাকারও জোগান দিচ্ছেন উদ্যোগের পুরোধা বাঁকুড়ার রাধানগর বোর্ড প্রাইমারি স্কুলকে। এমনটাই জানালেন স্কুলের শিক্ষক সৌম্য সেনগুপ্ত।

Advertisement

[আরও পড়ুন: গভীর রাতে ব্যবসায়ীর থেকে তোলা আদায়ের চেষ্টা, পুলিশের জালে ২ সিভিক ভলান্টিয়ার]

লকডাউন শুরুর পর পরই এপ্রিল থেকে ভারচুয়াল ক্লাস শুরু করে রাধানগর স্কুল। সৌম্য বলেন, “প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইউটিউব মারফৎ চলছিল ক্লাস। কিন্তু বেশি সংখ্যক পড়ুয়ার কাছে পৌঁছনো যাচ্ছিল না। তখন টিভির কথা ভাবি। একটি চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলে স্লট বুক করা হয়। ১৬ জুন থেকে সেই চ্যানেলে প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত ক্লাস চলে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে ক্লাসগুলি।
সম্প্রচার শেষে ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করা হচ্ছে।” সৌম্য আরও জানালেন, “ক্লাসগুলি সাধারণ মানুষের মনোগ্রাহী করার জন্য এরপর আমরা বিশেষ পরিকল্পনা নিই। বিশেষজ্ঞদের কথা ভাবি। তাঁদের প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তাতে অনেক চিকিৎসকই সাড়া দেন।”

Advertisement

চতুর্থ শ্রেণির সিলেবাসে সাপের কামড়ের বিষয় রয়েছে। তাই নিয়ে ১৬ জুন ক্লাস নেন ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদার। দয়ালবাবু সর্প বিষয়ক চিকিৎসার সর্বভারতীয় প্রোটোকল তৈরি করেছেন। তাছাড়া উনি যেহেতু কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের চোখেরও ডাক্তার, তাই বাচ্চাদের চোখ বিষয়ক ক্লাসও নেন। ডেন্টিস্ট ডা. শর্মিষ্টা রায় দাঁতের গঠন ও কীভাবে যত্ন নেওয়া হবে তা নিয়ে ক্লাস নিয়েছেন। লকডাউনের জেরে শিশুদের মনের অবস্থা ভাল নয়। দমবন্ধ করা পরিবেশে কীভাবে বাচ্চারা নিজেদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখবে তা নিয়ে বলেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডা. মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নীরোগ শরীর নিয়ে ক্লাস নিয়েছেন কলকাতার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম মিস্ত্রী। তিনি ছোট থেকেই শরীরচর্চার উপর জোর দেন। বলেন, “এটা করলেই ভবিষ্যতে হৃদরোগ ও সেরিব্রাল অ্যাটাক’ এড়ানো যাবে।” গ্রহণ নিয়ে ক্লাস নিয়েছেন ড. মানসপ্রতিম দাস। ক্লাস নিয়েছেন লালগড় গভঃ কলেজের অধ্যাপিকা বৈশাখী সাহা, লোকশিল্প বিশারদ সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষিকা রেখা ঝারিমুন্না, গোপাল মণ্ডল-সহ অনেকে। সৌম্য নিজেও ক্লাস নিচ্ছেন। কাঠি, কাকড়, কার্ড,
কাগজের টুকরো দিয়ে যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ, লসাগু, গসাগু শেখানো হচ্ছে।

[আরও পড়ুন: সংকটজনক করোনা আক্রান্ত তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাস, দেওয়া হল ভেন্টিলেশন সাপোর্ট]

যদিও খরচ আছে অনেকটাই। চ্যানেলকেই শুধু মাসে ১৮ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এগিয়ে এসেছেন অনেকে। ‘স্নেক বাইট ইন্টারেস্ট গ্রুপ’ থেকে এক মাসের খরচ দেওয়া হয়েছে। বিশিষ্ট সরিসৃপ বিশেষজ্ঞ বিশাল সাঁতরা, সরকারি আধিকারিক দেবাশিস রায়, ডা. সন্তোষকুমার দে অর্থ সাহায্য করেছেন। আরও অনেক বিশেষজ্ঞ প্রাথমিকের ক্লাস নেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখেযোগ্য যাদবপুর বিশ্বিদ্যালয়ের ভাইরোলজির অধ্যাপক চয়ন চট্টোপাধ্যায়। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সৌম্যবাবুরা। সাইবার জালিয়াতি নিয়েও ক্লাস নেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, হাওড়া বেলুড় গার্লস-সহ প্রায় একশোটি স্কুল অংশ নিচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ