Advertisement
Advertisement

মুখ ফিরিয়েছে পরিবার, হাসপাতালে বসে স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি অশীতিপর বৃদ্ধর

বাবার দায়িত্ব নিতে অস্বীকার ছেলের৷

Dumped by family, Suri man seeks mercy death in hospital
Published by: Kumaresh Halder
  • Posted:September 19, 2018 2:42 pm
  • Updated:September 19, 2018 2:42 pm

নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মুখ ফিরিয়েছে পরিবার৷ চূড়ান্ত আর্থিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন অশীতিপর বৃদ্ধ৷ একদিকে আর্থিক অনটন, অন্যদিকে কোমর ভাঙার তীব্র যন্ত্রণা৷ জোড়া বিপর্যয় সহ্য করতে না পেরে স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি জানালেন একদা কলকাতার ভবানিপুরের হরিশ চট্টোপাধ্যায় স্ট্রিটের দীপক সিংহ৷

[‘পা ভেঙে হাতে ক্র্যাচ ধরিয়ে দেব’, প্রতিবন্ধীদের অনুষ্ঠানে মেজাজ হারালেন বাবুল]

প্রায় এক দশক আগের কথা৷ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মেশিন সারাইয়ের মিস্ত্রি হিসেবে বেশ নামডাক ছিল দীপকবাবুর৷ এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তাঁদের সুখের সংসার৷ বছর তিনেক আগে কাজ করতে গিয়ে পায়ের পেশিতে টান ধরে৷ স্বাভাবিক হাঁটাচলার ক্ষমতা হারান তিনি৷ ফলে, শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় কাজ৷ সংসারের অনটনের আভাস পেয়ে একমাত্র ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন৷ ঘরভাড়া অনাদায়ী থাকায় উচ্ছেদ করেন বাড়ির মালিক৷ দু-একদিন ফুটপাতে রাত কাটিয়ে সস্ত্রীক আশ্রয় নেন ছেলের শ্বশুরবাড়িতে৷ গঞ্জনার জ্বালায় ছেলের শ্বশুরবাড়িও ছাড়েন দীপকবাবু ও তাঁর স্ত্রী রেখা সিংহ৷ আশ্রয় নেন তারাপীঠের শ্মশানে৷ সেখানেই ভিক্ষাবৃত্তি করেই কাটাতেন দিন৷ কোনওক্রমে দিন গুজরান হলেও হঠাৎ শ্মশান থেকে নিখোঁজ হয়ে যান স্ত্রী৷ স্ত্রী নিখোঁজ হওয়ায় ভেঙে পড়েন ওই বৃদ্ধ৷

Advertisement

[পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চুরি, অবশেষে জালে ‘স্পাইডারম্যান’]

গত ২৮ আগস্ট পড়ে গিয়ে কোমরে গুরুতর আঘাত পান দীপকবাবু৷ স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ভরতি করেন রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা হাসপাতালে। হাসপাতাল সুপার শর্মিলা মৌলিক বলেন, “ওই রোগীকে এলাকার মানুষ ভরতি করে দিয়ে যান। তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। এখানে তার চিকিৎসা হবে না। কলকাতা কিংবা বর্ধমান নিয়ে যেতে হবে। আমরা তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু ছেলে বাবার দায়িত্ব নিতে চাইছে না। তাতে আমরা সমস্যায় পড়েছি৷” একদিকে স্ত্রী নিখোঁজ ও অন্যদিকে বাবার দায়িত্ব নিতে ছেলে অস্বীকার করায় চূড়ান্ত সংকটে পড়েন অশীতিপর বৃদ্ধ৷

Advertisement

[ত্রিপুরার কায়দাতেই বাংলা জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি]

একদিকে অর্থ সমস্যা অন্যদিকে কোমর ভাঙার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে প্রশাসনের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি জানান দীপকবাবু৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন আমার আয় ছিল তখন ছেলে বউমা সবাই ছিল। কাজ হারাতেই তারা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি করে হাজার চারেক টাকা জমিয়েছিলাম। সেই টাকাও চুরি হয়ে গিয়েছে৷ আমি এই যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না৷ আমাকে মুক্তি দিন৷ সবাই যখন আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, তখন বেঁচে থেকে কী লাভ৷’’ ছেলে জয়ন্ত সিংহ বলেন, “আমি একটি গেঞ্জির কারখানায় কাজ করি। সামান্য আয়। ফলে বাবা-মা’র দায়িত্ব নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার নেই৷” এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে অসুস্থ বৃদ্ধ এবার হাসপাতালেই স্বেচ্ছামৃত্যুর আরজি জানালেন৷

ছবি: সুশান্ত পাল৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ