নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ফের পুলিশের জালে ভুয়ো চিকিৎসক। শিলিগুড়ি থেকে ধরা পড়ল অর্ণয় চক্রবর্তী ওরফে আপ্পা নামের ওই ভুয়ো চিকিৎসক। গতমাসে সিউড়ির এক বেসরকারি নার্সিংহোমে কলকাতার এক চিকিৎসকের সার্টিফিকেট দেখিয়ে কাজে যোগ দেয় অর্ণয়। সোমবার সিউড়ি আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, চিকিৎসকের সার্টিফিকেট জালিয়াতির নেপথ্যে দিল্লির একটি চক্র জড়িত। সেই চক্রের সন্ধান পেতেই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হল।
[ ভোট মিটটেই বদলে গেল রং, নদিয়াতে গেরুয়া শিবিরে যোগ ১০০০ কর্মীর ]
২১ এপ্রিল বছর পঁয়ত্রিশের এই যুবক প্রচেতা চক্রবর্তী নাম নিয়ে চিকিৎসক হিসাবে সিউড়ির পুরনো ডাঙ্গালপাড়ার এক নার্সিংহোমে কাজে যোগ দেয়। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসকের প্রয়োজন ছিল। সেই মতো নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। অর্ণয় বলে, তার নাম প্রচেতা চক্রবর্তী। সে কলকাতা গড়িয়ায় থাকে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের দাবি, কাজে যোগ দেওয়ার পর চিকিৎসকের সমস্ত সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে তার প্যান কার্ড, আধার কার্ড সমস্তই খতিয়ে দেখা শুরু হয়। অনলাইনের তথ্য অনুযায়ী তার পেশ করা তথ্য মিলে গেলেও তার নাম ও ছবি না থাকায় সমস্যায় পরে তারা। দিন দুয়েক পরে চিকিৎসক রোগী দেখাতে শুরু করলে তার রোগী দেখার ধরন দেখে কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। নার্সিংহোমে থাকা অন্যান্য চিকিৎসকরা জানান, একজন অভিজ্ঞ এম ডি পাশ করা চিকিৎসক কখনই এমন হাতুড়ের মতো প্রেসক্রিপশন করে না। চিকিৎসকের প্রাথমিক চিকিৎসায় যে যে গুণগুলি থাকা দরকার তার কোনওটাতেই মিল খুঁজে পাচ্ছিলেন না নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। ওই বেসরকারি নার্সিংহোমের কর্ণধার, জয়প্রকাশ খৈতান জানান, “আমাদের প্রথম দিন থেকেই তার চিকিৎসার ধরন দেখে সন্দেহ হয়। আমরা কথা বলতে চাইলে উনি ক্লান্ত আছি বলে এড়িয়ে যান।” নার্সিংহোমের চেয়ারম্যান সুশান্ত দাস বলেন, “চিকিৎসক দিল্লি যাওয়ার নাম করে একদিন নার্সিংহোম ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে। তবে যাওয়ার আগে নার্সিংহোমের বেশ কিছু দামি যন্ত্রপাতি উধাও হয়ে যায়।” তার উপর সিউড়ি ছাড়ার আগে নার্সিংহোমের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে শহরের একটি মোবাইল শোরুম থেকে দামি মোবাইল ঋণ করে কিনে নিয়ে যায়। সিউড়ি থানার পুলিশ সেই মোবাইলের সূত্র ধরে অর্ণয়কে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
[ বেতন বাড়ছে সিভিক ভলানটিয়ার ও আশা কর্মীদের, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর ]
অর্ণয়ের ঠিকানা ধরে মালদহেরও একটা যোগসূত্র পায় পুলিশ। সেখানেও হানা দিয়ে অর্ণয়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, প্রতারণা, অন্যের তথ্য ব্যবহার করে লোক ঠকানো, চুরি-সহ একাধিক প্রমাণ পায়। ভারতীয় দন্ডবিধির ৪২০, ৪৬৮, ৪০৬, ৪০৯ ও ৪৭১ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। তার মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতের বিচারক সায়নী মুখোপাধ্যায় সিউড়ি থানার তদন্তকারী অফিসারকে অন্যের নাম ভাঙিয়ে জালিয়াতির জন্য অর্ণয়ের বিরুদ্ধে ৪১৬ ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেন। সিউড়ি থানার তদন্তকারী অফিসার কস্তুরী মুখোপাধ্যায় আদালতে বিচারককে জানান, “ঘটনার সঙ্গে কারা যুক্ত তা খোঁজার চেষ্টা করছি আমরা। চার্জ গঠনের সময় আপনার নির্দেশিত ধারা যুক্ত করা হবে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, “কোথাও কোনও নার্সিংহোমে চিকিৎসক নিয়োগ করলে তা লিখিতভাবে স্বাস্থ্য দপ্তরে জানাতে হয়। সিউড়ির নার্সিংহোমটি এত কান্ডের পরও কেন আমাদের জানায়নি সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।”
ছবি- বাসুদেব ঘোষ