শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: চন্দ্রকোণার পর ঘাটাল। বর্ষার শুরুতেই ভাসল একের পর এক গ্রাম। জলবন্দি প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তাঁদের উদ্ধার করতে তৎপর প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকে এলাকায় কমেছে বৃষ্টি। তার ফলে জলবন্দি দশা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যাবে বলেই আশা গ্রামবাসীদের।
জানা গিয়েছে, ঘাটাল, চন্দ্রকোণা ১ ও ২ নম্বর ব্লকের ৭০-৭৫ মৌজা প্লাবিত। শিলাবতী ও কেথিয়া নদীর ৫টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। তার ফলে চন্দ্রকোণা ১ ও ২ নম্বরে মোট ৫০-৫৫ মৌজা প্লাবিত। ঘাটাল ব্লকের ৪-৫টি গ্রামপঞ্চায়েত জলমগ্ন। ৩টি ব্লকের ১৫টির মতো কাঠ, বাঁশের সাঁকো ভেসে গিয়েছে। গড়বেতার পরিস্থিতিও বেশ ভয়াবহ। সবমিলিয়ে প্লাবিত কমপক্ষে লক্ষাধিক। ইতিমধ্যে মোট ৫০টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। প্লাবিতদের উদ্ধার করে ত্রাণশিবিরে রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাবার এবং জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এদিকে, চন্দ্রকোণা ২ নম্বর ব্লকের বারাসত গ্রামে টুংসা রুইদাসে নামে বছর বিয়াল্লিশের একজন তলিয়ে গিয়েছেন। তাঁর এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ঘাটাল মূলত শীলাবতী, কংসাবতী এবং দ্বারকেশ্বর নদের শাখা নদী ঝুমির লীলাভূমি হিসাবে পরিচিত। তখনকার আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলস্বরূপ স্থানীয় ভূস্বামীরা এই নদীগুলির বন্যা ঠেকাতে সার্কিট বাঁধ দিয়ে নিজেদের জমিদারিতে নিচু এলাকাগুলিকে বন্যা থেকে বাঁচিয়ে আবাদি জমি বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। সেই জমিদারি জমানা আর নেই। কিন্তু জমিদারি বাঁধগুলি আজও রয়ে গিয়েছে। এই জমিদারি বাঁধগুলি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। তার ফলে বাঁধগুলি ভেঙেই মূলত ঘাটাল এলাকায় বন্যা দেখা দেয় ফি বছর। উলটোদিকে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি নদী বাঁধ উপচে ছড়িয়ে পড়তে না পেরে নদীতেই জমতে থাকে পলি মাটি। ফলে নদীর জলধারণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আর ফি বছর বন্যা প্রবণতাও বাড়তে থাকে। এই সমস্যা মেটাতে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের ভাবনা। কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনায় ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হয়নি বলেই অভিযোগ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভোটের আগে রাজ্যের তরফে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আর বানভাসি হতে হবে না ঘাটালবাসীকে। সাংসদ দেব অবশ্য আগেই জানান, ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান পুরোপুরি সম্পূর্ণ হতে ৫ বছর লাগবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.