Advertisement
Advertisement
Bankura-Jhargram

রেকর্ড বৃষ্টি বাঁকুড়ায়, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত ১, ঝাড়গ্রামে জলের তোড়ে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ

বাঁকুড়ার সাহাপুরে এলাকায় স্নান সেরে ফেরার সময় বিদ্যুতের তার জড়িয়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার।

Flood like situation in Bankura and Jhargram due to continous heavy rain

জলমগ্ন দুই জেলা। নিজস্ব ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:June 19, 2025 6:10 pm
  • Updated:June 19, 2025 6:13 pm  

সুনীপা চক্রবর্তী ও টিটুন মল্লিক, ঝাড়গ্রাম ও বাঁকুড়া: চলতি মরশুমে ভয়াবহ বৃষ্টির সাক্ষী রইল বাঁকুড়া শহর। গত ২৪ ঘণ্টায় বাঁকুড়া শহরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৪২.৩ মিলিমিটার। এই পরিসংখ্যানের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে ২০২১ সালের ১৬ জুনের বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। সেবার ১৩৩.৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়েছে শহরের একাধিক এলাকা। ভেঙে পড়েছে একাধিক মাটির বাড়ি। বহু পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। আর এই দুর্যোগের মধ্যেই ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। সাহাপুর এলাকায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল রেবা মাজি নামে এক গৃহবধূর।

Advertisement
জল থইথই বাঁকুড়া শহর। নিজস্ব চিত্র।

জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে পুকুরে স্নান সেরে বাড়ি ফিরছিলেন রেবাদেবী। রাস্তায় ভেজা গায়ে বিদ্যুতের ছেঁড়া তার জড়িয়ে যায়। তাতেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই এলাকায় ঝুলন্ত ও বিপজ্জনক বৈদ্যুতিক তার ছিল, কিন্তু বিদ্যুৎ দপ্তর তা সারানোর কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এদিন রেবাদেবীর মৃত্যুর পর এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়ায়। বিদ্যুৎ দপ্তরের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। ফোন করা হলে রিজিওনাল ম্যানেজার কোনও সদুত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এদিকে, একটানা বৃষ্টিতে শহরের ১৪, ১৬, ১৭ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে হাঁটু জল, কোথাও কোমর সমান। যানবাহন থমকে গিয়েছে, বন্ধ বহু দোকান। স্কুলে পড়ুয়াদের যাতায়াতেও চরম সমস্যা। বেশ কয়েকটি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। বাসিন্দারা প্রাণে বাঁচলেও ঘরছাড়া হতে হয়েছে অনেককেই।

বাঁকুড়ার একাধিক এলাকা জলমগ্ন। নিজস্ব ছবি।

অন্যদিকে, নিম্নচাপের জেরে একটানা বৃষ্টিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঝাড়গ্রাম জেলার একাধিক নদী। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই ডুলুং, সুবর্ণরেখা, কংসাবতী, তারাফেনি – প্রায় সব নদীতেই জল বইছে বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে। গালুডি জলাধার থেকে দফায় দফায় বিপুল জল ছাড়ায় উদ্বেগ আরও বেড়েছে প্রশাসনের। জেলা প্রশাসনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঝাড়গ্রাম জেলায় গড় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১১২ মিমি। তবে বেলপাহাড়ি এলাকায় রেকর্ড ২২২ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ গালুডি থেকে ১,২৮,৫০০ কিউসেক ও দুপুর ১২টায় ছাড়া হয় ২,৪৩,৬৫০ কিউসেক জল। ফলে সুবর্ণরেখা ও ডুলুং নদীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা জেলা প্রশাসনের।

বৃষ্টির দাপটে জেলা সদরেরও নিকাশি ব্যবস্থার হাল খারাপ। শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় হাঁটু জল জমে চরম ভোগান্তিতে বাসিন্দারা। অন্যদিকে, জল ঢুকে পড়েছে একাধিক রাজ্য সড়কে। চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর জল উপচে পড়ায় চিচিড়া-গিধনী রাস্তা বন্ধ। বিচ্ছিন্ন জামবনি ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশ। প্রতি বর্ষায় জলবন্দি চিল্কিগড়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি স্থায়ী সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। এবারও সেই দাবিই জোরালো হয়েছে। এদিকে এঁটেলা অঞ্চলে তারাফেনি নদীর জল উঠে গিয়েছে কজওয়ের উপর। ব্যাহত ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে যান চলাচল। শিলদা বাজারের বাঁধ বেহাল, সংস্কারের অভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই জল ঢুকেছে শিলদা বাজার চত্বরে।

চিল্কিগড়ে ডুলুং নদীর জল উপচে পড়ায় চিচিড়া-গিধনী রাস্তা বন্ধ। ছবি: প্রতিম মৈত্র।

বিনপুর থেকে লালগড় যাওয়ার পথেও কজওয়ে ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ছিন্ন। বড়ামারা ও এনাটে যাওয়ার রাস্তাতেও নদী ও খালের জল উঠে যাওয়ায় একই দশা। পরিস্থিতি নিয়ে ঝাড়গ্রামের জেলা শাসক সুনীল আগরওয়াল বলেন, “গালুডি থেকে দু’দফায় জল ছাড়া হয়েছে। ফলে ডুলুং ও সুবর্ণরেখার জল আরও বাড়তে পারে। আমরা নজর রাখছি। এখনও পর্যন্ত ত্রাণ শিবির খোলার প্রয়োজন হয়নি, তবে প্রস্তুতি রাখা আছে।” বৃষ্টি না থামলে পরিস্থিতি দ্রুত আরও ভয়াবহ হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement