শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: মাসখানেক আগের ঘটনা। গজরাজ পথ আটকে দেওয়ায় পথেই সন্তান প্রসব করেন ধূপগুড়ির গয়েরকাটা চা বাগানের বাসিন্দা প্রেমিকা মিঞ্চ (২২)। ফের একই ঘটনা এবং ঘটনাস্থল সেই ধূপগুড়িই। তবে এবার একটি নয়, জোড়া ঘটনা। আর এবার গজরাজের বদলে পথের বাধা কুয়াশা। দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারেনি অ্যাম্বুল্যান্স। আর তার জেরে রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই সন্তান প্রসব করলেন দুই প্রসূতি। শুধু তাই নয়, সুস্থ রয়েছে জোড়া মা ও তাঁদের সন্তান। ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চারজন।
প্রথম ঘটনা ধূপগুড়ির নাথুয়ার ফটকটারি গ্রামে। স্থানীয় জানা গিয়েছে, সন্তানসম্ভবা গৃহবধূ দীপালি রায় অধিকারীকে নিয়ে তাঁর ননদ ভোরবেলা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু কুয়াশার জেরে দৃশ্যমানতা এতটাই কমে যায় যে হেডলাইট জ্বালিয়ে সামান্য দূরেও প্রায় কিছু দেখা যাচ্ছিল না। বাড়ি থেকে ধূপগুড়ি হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এই অবস্থায় অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছিল অ্যাম্বুল্যান্স। এদিকে ভিতরে প্রসবযন্ত্রণায় ছটফট করছেন দীপালিদেবী। এই অবস্থায় পাঁচ কিলোমিটার আসার পরই হাসপাতাল থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ডাউকিমারিতে অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই সন্তানের জন্ম দেন দীপালিদেবী। পরে ওই অ্যাম্বুলেন্সে করেই ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও সদে্যাজাতকে। বর্তমানে দু’জনই ধূপগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
একই ঘটনা ঘটেছে ধূপগুড়ি ব্লকের আলতাগ্রামের ডাঙাপাড়া থেকে প্রসূতি মহিলা সিলিনা পারভিনের ক্ষেত্রেও। ভোর রাতে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে রওনা হন তাঁর স্বামী রেজাউল হক। আলতাগ্রাম থেকে ধূপগুড়ির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। সাধারণভাবে হাসপাতালে পৌঁছতে ১৮-২০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ভোর রাতের কুয়াশার জেরে প্রচণ্ড ধীরগতিতে যেতে পার হয়ে যায় ৪০ মিনিটেরও বেশি সময়। কিন্তু অতটা সময় কষ্ট করে আর থাকতে পারেননি সিলিনা পারভিন। অ্যাম্বুলেন্সের মধে্যই হাসপাতালের গেটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তড়িঘড়ি করে হাসপাতালের নার্সরাও ওই মহিলা ও তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে হাসপাতালের নির্দিষ্ট বিভাগে নিয়ে যান। সিলিনা পারভিনের স্বামী রেজাউল হক বলেন, “রাতের দিকে এত কুয়াশা ছিল যে রাস্তার প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তাই চালক বাধ্য হয়েই ধীরগতিতে চালিয়ে হাসপাতালে আসছিল। অ্যাম্বুল্যান্সে হোক, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে সুস্থ সন্তান প্রসব করেছেন স্ত্রী, তাতে তাঁরা খুশি। এখন ভালয় ভালয় ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় রয়েছি।”
দীপালিদেবীর ননদ আরতি রায় জানান, চলন্ত গাড়ির মধ্যে যেভাবে সন্তান প্রসব করেছেন দীপালি, তা ভাবা যায় না। তবু যে সুস্থ সন্তান পেয়েছি আমরা, তাতে পরিবারে খুশির হাওয়া। ধূপগুড়ি ব্লক স্বাস্থ্য অধিকর্তা সব্যসাচী মণ্ডল জানান, দুই শিশুই সুস্থ রয়েছে। সন্তান ও মায়ের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দিচ্ছেন তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.