Advertisement
Advertisement

Breaking News

Independece Day 2023

গান্ধীজির লড়াইয়ের শরিক হয়েও এখনও আড়ালেই, দুই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে নিয়ে আক্ষেপ পুরুলিয়াবাসীর

শুধুমাত্র অনুমানের ভিত্তিতে তাঁদের মূর্তি স্থাপন করেছে জেলা প্রশাসন।

Freedom fighters of Manbazar, Purulia, close to Gandhiji remains unsung, remembered ahead of Independence Day | Sangbad Pratidi

ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 13, 2023 4:59 pm
  • Updated:August 13, 2023 5:47 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া (মানবাজার): কেমন চেহারা তাঁদের? দুই পরিবারের কাছেই নেই কোনও ছবিই। নেই তাঁদের ব্যবহৃত কোনও জিনিসপত্রই। তবুও সাবেক মানভূমের (Manbazar) হৃদয় জুড়ে রয়েছেন তাঁরা। দুই গান্ধীবাদী বিপ্লবী গোবিন্দ মাহাতো ও চুনারাম মাহাতো। ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনে’ শামিল হয়ে মানবাজার ‘থানা-তাড়া’ অভিযানে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। দেশ স্বাধীনের জন্য প্রাণ দেওয়া এই দুই বিপ্লবীর স্মরণে আজও শহিদ দিবস পালন করে সাবেক মানভূম। এবারও স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তাঁদের স্মৃতি ফিরে ফিরে আসছে এই বিপ্লবীদের ভিটে মাটিতে।

ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

পুরুলিয়ার (Purulia) মানবাজার এক ব্লকের বাসিন্দা নাথুরডি গ্রামের গোবিন্দ মাহাতো। ওই ব্লকেরই কুদা গ্রামে থাকতেন চুনারাম মাহাতো। মহাত্মা গান্ধীর ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলনে’ সংঘটিত হয়েছিল এই সাবেক মানভূমেও। তাঁর ডাকে সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছোটনাগপুর মালভূমিও। তখন এই বনমহল পুরুলিয়া অর্থাৎ সাবেক মানভূম ছিল বিহারে (Bihar)। ব্রিটিশকে হঠাতে সমগ্র দেশ জুড়ে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে থানা অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। একদিনে প্রায় একই সময়ে অভিযান হওয়ার কথা ছিল সমগ্র দেশেই। সেই মোতাবেক বিপ্লবী ভজহরি মাহাতোর বান্দোয়ানের জিতান গ্রামে গোপন বৈঠক করেছিলেন সংগ্রামীরা। সেখানেই বনমহলের বিভিন্ন থানা অভিযানের নীল নকশা চূড়ান্ত হয়। ১৯৪২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। ঠিক হয়েছিল, সকালের আলো ফুটতেই ভোররাতে থানা অভিযানে পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র পুড়িয়ে দিয়ে নথিপত্র নষ্ট করে থানা ভস্মীভূত করা হবে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সন্ত্রাসবাদের নয়া ব্যাখ্যা কেন্দ্রের, ধরা পড়লে যাবজ্জীবন-ন্যূনতম ১০ লাখ জরিমানা, মিলবে না প্যারোলও]

সেই মোতাবেক বান্দোয়ান, বরাবাজার থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ভোররাতে। মানবাজার থানা অভিযানে একটু দেরি হয়ে যায়। ওই অবিভক্ত মানবাজারের চেপুয়া মাঠে বিপ্লবীরা সাত সকালে জড়ো হলেও থানায় হাজির হন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ। স্বাধীনতা সংগ্রামী সত্যকিঙ্কর মাহাতোর নেতৃত্বে অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল মানবাজার ‘থানা তাড়া’।

Advertisement
এখানেই থাকতেন স্বাধীনতা সংগ্রামী গোবিন্দ মাহাতো। মানবাজার এক ব্লকের নাথুরডি গ্রাম। ছবি:অমিতলাল সিং দেও।

ওই দিন প্রায় ৫০০ বিপ্লবী থানার ভেতরে ঢুকে সেখানে কর্মরত কর্মীদের বলেছিলেন, তাঁরা যেন সরে যান সামনে থেকে। দেশ স্বাধীনের জন্যই তাদের এই অভিযান। ব্রিটিশের অধীনে তারা কাজ করলেও তাঁরা তো এদেশেরই বাসিন্দা। কিন্তু না ওই বিপ্লবীদের কথা শোনেননি ব্রিটিশ কর্মচারীরা।ফলে বিপ্লবীরা বাধার মুখে পড়েন। সেই বাধা সরিয়ে এগিয়ে যেতেন থাকেন তাঁরা তখনই শুরু হয় ব্রিটিশ পুলিশের গুলি বর্ষণ। ১৫০ জন বিপ্লবী কম-বেশি জখম হন। গুরুতর জখম হন চারজন। চুনারাম মাহাতোর বুকে গুলি লেগে সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। রক্তাক্ত হয়ে যায় মানবাজার থানা চত্বর। গুরুতর জখম গোবিন্দ মাহাতোকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনিও প্রাণ হারান। এছাড়া আরও তিন সংগ্রামী বিষ্টুপদ মাহাতো, হেম চন্দ্র মাহাতো, গিরিশ মাহাতোরা জখম হয়ে গোপন ডেরায় আশ্রয় নেন। জখমদেরকে গরুর গাড়িতে করে বিভিন্ন জায়গায় সরানো হয়।

চুনারাম মাহাতোর শ্যালক রামপদ মাহাতো থাকেন মানবাজার এক ব্লকের বিজয়ডি গ্রামে। আশি পার হওয়া ওই বৃদ্ধ বলেন, “দেশের জন্য জীবনকে বলিদান দেওয়ার কথা ভুলিনি। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে গান্ধীবাদী ওই দুই বিপ্লবীকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। গান্ধীজির পথই সঠিক। ওই পথ অনুসরণ করে চললেই দেশে আর কোনও হিংসা থাকবে না। আমরা সেই আদর্শ মেনে আজও চলেছি।” ওই ঘটনার পরেও চুনারাম মাহাতোর স্ত্রী মেথিবালা মাহাতো স্বাধীনতার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন।

মানবাজারের কুদা গ্রামে স্বাধীনতা সংগ্রামী চুনারাম মাহাতোর বাড়ি। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

সেই জেঠিমা মেথিবালার সঙ্গে বাচ্চা বয়সেই নানান জায়গায় মিটিং-মিছিলে যেতেন চুনারাম মাহাতোর ভাইপো কিরীটি মাহাতো। এখন তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। তবুও যেন দৃষ্টির সমস্যা। কানেও ভালভাবে শোনেন না। মানবাজার ১ ব্লকের কুদা গ্রামে বিপ্লবী চুনারাম মাহাতোর ভিটে বাড়িতেই থাকেন ওই সংগ্রামীর ভাইপো কিরীটি মাহাতো। তিনি বলেন, “বড় আফসোস আমাদের। আক্ষেপ এই মানভূমেরও। আমাদের কাছে জেঠুর কোনও ছবি নেই। ছবি নেই আরেক সংগ্রামী গোবিন্দ মাহাতোর পরিবারেও। জেলা পরিষদ এই দুই বিপ্লবীর পূর্ণায়ব মূর্তি স্থাপন করেছেন ঠিকই। কিন্তু সবই আনুমানিক।”

[আরও পড়ুন: ভাত-কাপড়ের অঙ্গীকার ভুললে চলবে না, খোরপোশ দিতেই হবে, নির্দেশ কলকাতা হাই কোর্টের]

দুই পরিবারের সদস্যদের চেহারার ছবি দেখে গোবিন্দ মাহাতো, চুনারাম মাহাতোর মূর্তি স্থাপন করা হয়। লোকসেবক সংঘের সচিব সুশীল মাহাতো বলেন, “ওই দুই গান্ধীবাদী বিপ্লবীর পরিবার আজও গান্ধীজির পথ অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। যেভাবে দেশ, সমাজ চলছে তাতে গান্ধীজির পথই সঠিক।” এই মানবাজার এক ব্লকের নাথুরডি গ্রামে সংগ্রামী গোবিন্দ মাহাতোর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তাঁর শয়নকক্ষ সংরক্ষণ করে রেখেছে পরিবার।” ওই বিপ্লবীর নাতি সুভাষচন্দ্র মাহাতো বলেন, “দাদুকে তো চোখের দেখা দেখিনি। দাদুর ছবিও নেই আমাদের কাছে। তবে তাঁর সংগ্রামের কথা আমরা শুনেছি। গর্বে বুক ভরে যায়। চেষ্টা করি তাদের দেখানো পথেই এই জীবন অতিবাহিত করতে।” তাই বিপ্লবীদের জন্মভূমিতে স্বাধীনতা দিবস শুধু একটি উল্লেখযোগ্য দিন নয়। দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলনের সুফল। বড় প্রাপ্তি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ