Advertisement
Advertisement

সভ্যতার গর্জনে পথ হারাচ্ছে বাঘিনির ডাক, বিপন্ন সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল

পর্যটকদের আনাগোনায় ব্যাহত বাঘের প্রজনন।

Frequent visit Of tourists disrupting breeding of Tiger in sunderban
Published by: Tanumoy Ghosal
  • Posted:August 12, 2018 12:33 pm
  • Updated:August 12, 2018 12:33 pm

কৃষ্ণকুমার দাস: প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে। সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলও ব্যতিক্রম নয়। তাই বাঘিনির ডাকে সাড়া দিতে এক-দেড় কিলোমিটার চওড়া নদীপথও ‌তুচ্ছ হয়ে যায়। এক সাঁতারে সঙ্গিনীর দুয়ারে হাজির হয় মিলনোন্মুখ পুরুষ রয়্যাল বেঙ্গল। অনেক সময় আবার একই নারীর কাছে প্রেমপ্রার্থী হয়ে আসে দুই সোমত্থ জওয়ান। অর্থাৎ, এক ফুল দো মালি। পরিণতি, রক্তক্ষয়ী সংঘাত। অরণ্যের নিয়মে যে লড়াই শেষ হয় একজনের মৃত্যুতে।

[ যুবককে আছড়ে মারল দলছুট হাতি, মেদিনীপুরে চাঞ্চল্য]

Advertisement

যুগ-যুগান্ত ধরে এমনই চলে আসছে। কিন্তু প্রকৃতির সেই চিরন্তন নিয়মে এখন বাদ সেধেছে সভ্যতার কিছু অবাঞ্ছিত উপদ্রব। ঘন জঙ্গলে শ’য়ে শ’য়ে মাছধরা ভুটভুটির দাপাদাপি আর পরের পর পর্যটক লঞ্চের কানফাটানো আওয়াজ ডিঙিয়ে কামার্ত বাঘিনীর ডাক প্রণয়লিপ্সু পুরুষ বাঘের কানেই পৌঁছচ্ছে না। ফলে দুই প্রেমিক দূরের কথা, এক জনকেও কাছে পাচ্ছে না বাঘিনি। জঙ্গলের খাঁড়ি উজিয়ে, সুন্দরী-গরান-গেওয়ার ফাঁক গলেও যন্ত্রশক্তির ‘ভয়ংকর’ শব্দে খেই হারিয়ে ফেলছে ব্যাকুল আহ্বান। ফলে প্রজনন ঋতু এসে গেলেও মিলন অধরা থেকে যাচ্ছে। শ্রাবণের ধারাপ্রবাহের শেষে ভাদ্রের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ম্যানগ্রোভের নিকষ জঙ্গলে শুরু হয় সুন্দরবনের ব্যাঘ্রকুলের প্রজনন-মরশুম। বাঘিনিদের সামনে পৌরুষের পরীক্ষা দেওয়ার হিংস্র টক্করে নেমে পড়ে দামাল রয়্যাল বেঙ্গলরা। ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্পের গবেষকরা বলছেন, বাঘিনিরা সাধারণত নতুনত্বের পূজারিনি। পুরনোর চেয়ে নতুন পুরুষসঙ্গীই বেশি পছন্দ। কাজেই নতুন প্রণয়ী খুঁজে পাওয়ার তাগিদও বেশি। অথচ হাঁকডাক করেও সঙ্গী মিলছে না।  মাছধরা ট্রলার-ভুটভুটি ও ট্যুরিস্ট লঞ্চের আসুরিক শব্দবাণ গত ক’বছর ধরেই ব্যাঘ্রকুলের মিলনে চরম ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ওপার বাংলার রায়মঙ্গল, হাড়িভাঙা, শিবসা, আড়পাঙাসিয়া এবং এপারের দোবাকি, ছেঁড়া মাতলা ও হরিণভাঙা নদীর খরস্রোতও কিছুটা প্রতিকূলতার সৃষ্টি করছে বলে অভিমত গবেষকদের।

Advertisement

বস্তুত এই কারণেই রয়্যাল বেঙ্গলের সংসারে কিছুটা যেন ভারসাম্যের অভাব। বাঘ ও বাঘিনির যৌন মিলন নিরুপদ্রব এবং পছন্দের সঙ্গীকে কাছে পেতে যাতে বিন্দুমাত্র বিঘ্ন না হয়, সেজন্য এবছর বিশেষ উদ্যোগক নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বন দপ্তরের প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা জানিয়েছেন, ‘এবছর ১৫ দিন আগেই সুন্দরবনের কোর-এরিয়ায় মাছ ধরতে যাওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ট্যুরিস্ট লঞ্চ অক্টোবর পর্যন্ত জঙ্গলে ঢুকতে পারবে না।‘ শুধু তাই নয়, অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, মিলনের পর বাঘের খিদে অত্যাধিক বেড়ে যায়। তখন যদি খাবার না পাওয়া যায়, তাহলে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে বাঘ। তাই জঙ্গলের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ব্যবস্থা করার দিকেও নজর দিচ্ছে বন দপ্তর।

[ চায়ের টোপ দিয়ে বালতি চুরির অভিযোগ, পুলিশের দ্বারস্থ বৃদ্ধ

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ