Advertisement
Advertisement

সরকারি জমি দখল করে আর বসতি নয়: মমতা

তিনি সামনে, আর পিছনে টিম পশ্চিমবঙ্গ৷

Government land should not be conquered for increasing locality: Mamata
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 29, 2016 9:04 am
  • Updated:June 23, 2022 7:09 pm

কিংশুক প্রামাণিক: এখন থেকে কোনও সরকারি জমি জবরদখল করতে দেওয়া হবে না৷ ইচ্ছামতো জায়গা দখল করে নতুনভাবে বসতি স্থাপনও নয়৷ দখল নয় নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরও৷ এই মর্মে সরকারি স্তরে কড়া নির্দেশিকা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তাঁর নির্দেশিকা রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷
মঙ্গলবার হাসিমারায় আলিপুরদুয়ার জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা৷ বর্ডার পেরিয়ে এসে এক শ্রেণির মাফিয়ার সাহায্যে জমি দখল দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে বিপজ্জনক, তা-ও বলে দিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি চা বাগান ইস্যুতে কেন্দ্রের কোর্টে বল ঠেলে তিনি বলেছেন, ডানকানের বন্ধ হওয়া সাতটি চা বাগান খুলে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ভোটের আগে৷ রাজনীতি হয়েছিল৷ হয় ওই বাগানগুলি খুলতে ব্যবস্থা নেবে কেন্দ্র, না হলে রাজ্য নিলামের ব্যবস্থা করবে৷ চা বাগানের সমস্যা দেখার জন্য মুখ্যমন্ত্রী এদিন ডিরেক্টরেট গঠন করে দেন৷
সদ্য গঠিত হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা৷ সেই অর্থে এখনও দুধের শিশু৷ অন্যদিকে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর মুখ্যমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফর৷ উত্তরের প্রথম বৈঠক আলিপুরদুয়ার জেলায়৷ এদিন হাসিমারায় একটি খোলা মাঠে রীতিমতো অডিটোরিয়াম তৈরি করে প্রশাসনিক বৈঠক হল৷ পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সঙ্গেই এসেছেন৷ বৈঠকে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব ছাড়াও উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী৷ এছাড়াও ছিলেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে, ডিজি সুরজিত্‍ করপুরকায়স্থ-সহ সমস্ত দফতরের প্রধান সচিবরা৷ এমনই ভরা বৈঠকে একেবারে চেনা মেজাজে পাওয়া গেল মমতাকে৷ আলিপুরদুয়ারে কী চাই, আর কী চাই না, সবই তাঁর মুখস্থ৷ রিপোর্ট কার্ড ধরে ধরে পর্যালোচনা৷

বিধানসভা ভোটে মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়েছেন৷ ফলে আদিবাসী অধ্যুষিত এবং চা বাগান প্রধান এই জেলার প্রতি আলাদা গুরুত্ব মুখ্যমন্ত্রীর৷ আলোচনা চলতে চলতেই মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, তিস্তা-তোর্ষার মতো নদীগুলির চরে কীভাবে জবর দখল করে বাস করছে কিছু মানুষ৷ নদীর জল একটু বাড়লেই খুব স্বাভাবিকভাবে তারা হয়ে পড়ে বানভাসি৷ এই হাস্যকর বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মমতা৷ বলেন, “নদীতে জল বাড়ল আর টিভি চ্যানেল দেখিয়ে দিল বন্যা হয়েছে৷ নদীর চরে থাকার কী দরকার? প্রশাসনকে বলব, যারা রয়েছে তাদের কোনও সরকারি জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হোক৷ পাশাপাশি এটাও দেখতে হবে আর যেন কেউ নতুন করে সরকারি জমি দখল করতে না পারে৷” উল্লেখ্য, উত্তরবঙ্গের নদীগুলি সবই পাহাড় থেকে নেমে আসছে৷ পাহাড়ে বৃষ্টি হলেই জলস্ফীতি হয়৷ সাময়িকভাবে ডুবে যায় চরগুলি৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন বুঝিয়ে দেন, বিপুল দেনার ভার তাঁর ঘাড়ে৷ এই সময় কোনও অপচয় করা যাবে না৷ খুব সতর্ক হয়ে চলতে হবে প্রশাসনের সবাইকে৷ সব টাকা দেনা শোধ করতে চলে যাচ্ছে৷
নদীর চরের জমির দখলের কথা বলতে গিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করে মমতা বলেন, “বর্ডার পেরিয়ে কিছু লোক চলে এল৷ কিছু ল্যান্ড মাফিয়া তাদের কোথাও বসিয়ে দিল৷ এটা খুব সমস্যার৷ দেশের নিরাপত্তা এতে বিঘ্নিত হয়৷ এ জিনিস আর চলবে না৷” অর্থাৎ, মমতা বুঝিয়ে দেন, তাঁর সরকার কোনও মানুষকেই উচ্ছেদ করতে চায় না৷ কিন্তু নতুন করে সরকারি জমি দখল করতেও দেওয়া হবে না৷ ৫০০ লোকের জন্য ৫ লক্ষ মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত হতে দেওয়া যাবে না৷ তিনি মুখ্যসচিবকে বলেন, “সমস্ত জেলাশাসককে নির্দেশ পাঠান৷”
অন্যদিকে, চা বাগান নিয়েও তাঁর বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ বৈঠকের শুরুতে তিনি আধিকারিকদের কাছে জানতে চান, আলিপুরদুয়ারে কতগুলি চা বাগান রয়েছে৷ জানা যায়, জেলায় রয়েছে ৬৫টি চা বাগান৷ এর মধ্যে ১১টি পুরোপুরি বন্ধ আর এগারোটি মাঝে মাঝে বন্ধ হয়৷ বন্ধগুলির মধ্যে সাতটি ডানকানের৷ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের মধ্যেই বলেন, “বাগান খুলে দেব বলে মাদারিহাটে (বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনটি জিতেছে বিজেপি) ভোট নিয়ে চলে গেল৷ কিন্তু এখন আর কিছুই নেই৷ মুখ্যসচিবকে বলছি, আপনি চিঠি লিখুন৷ এগুলো নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ চা বাগান বিষয়টি কেন্দ্রীয় আইনের আওতায়৷ হয় ওরা নিজেরা করুক, না হয় আমাদের দিক৷ আমাকে আদালতে ফেস করতে হচ্ছে৷ হাফ হার্টেড কোনও কাজ হতে পারে না৷ দেখতে হবে মালিকানা বদল হতে পারে কি না৷” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় আইনের আওতায় হলেও রাজ্য বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের দু’টাকা কেজির চাল, চিকিৎসা পরিষেবা ও ভাতা দিচ্ছে৷ তিনি জানান, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিংয়ের চা বাগানগুলির ক্ষেত্রেও একই নীতি নিয়ে চলবে রাজ্য৷ নবগঠিত ডিরেক্টরেট পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখবে৷
তাঁর সরকারের ১২৯তম বৈঠকের শেষ পর্বটি ছিল অভিনব৷ প্রশাসনিক বৈঠকে আনা হয় একটি কেক৷ মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “আজ নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব রোশনি সেনের জন্মদিন৷ আজ আমরা তাই কেক কাটব৷” তাঁর প্রশাসন যে কোথাও ‘অন্যদের থেকে আলাদা’, তা এটুকুতেই বোঝা যায়৷ আসল শক্তি টিম ওয়ার্ক৷ তিনি সামনে, আর পিছনে টিম পশ্চিমবঙ্গ৷

Advertisement

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ