কিংশুক প্রামাণিক, বর্ধমান: নতুন বছরের প্রথম সভায় ‘মাটি’ রক্ষার ডাক। যে মাটির লড়াইয়ে তিনি জিতেছেন। যে মাটি দখলের যুদ্ধ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। সেই মাটি অর্থাৎ জমি, অর্থাৎ গ্রামীণ ভোট ব্যাঙ্ক, অর্থাৎ কৃষকের সমর্থন নিশ্চিত রাখতেই এখন বদ্ধপরিকর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই নতুন বছরে পা রেখেই দেরি না করে কার্যত পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারের কাজটিও শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই অর্থে ভোট কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস বাকি। কিন্তু ক্লাসের গুডবয় তো আর শেষ মুহূর্তের পড়াশোনার উপর ভরসা করে না। সিলেবাস শেষ করে ফেলে অনেক আগেই। তাই মঙ্গলবার বর্ধমানের মাটি উৎসবের মঞ্চ থেকেই মমতা বোঝালেন, তাঁর এখন পাখির চোখ গ্রামীণ মানুষের যে সমর্থন তিলে তিলে তৈরি হয়েছে তা রক্ষা করা। এবং তিনি তা করতে চান উন্নয়নের কাজ দিয়েই। যত কেন্দ্রীয় বাধাই থাক সামাজিক প্রকল্পের কাজ চলতেই থাকবে গ্রামের কৃষক ও গরিব মানুষের জন্য।
[নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ২০১৮ বার ঠান্ডা জলে ডুব যুবকের]
খুব স্বাভাবিকভাবেই নতুন বছরে কিছু চমকপ্রদ ঘোষণা থাকবেই। এদিন যেমন মুখ্যমন্ত্রীর উপহার ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প। আগামী ২৯ জানুয়ারি রাজ্যের পাঁচ লক্ষ গরিব মানুষের হাতে বাড়ির চাবি তুলে দেবেন মমতা। এক লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা দিয়ে এই এক-একটি বাড়ি রাজ্য তৈরি করেছে গরিবদের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী নেতাজি ইন্ডোর থেকে যখন এই প্রকল্পের সূচনা করবেন, তখন রাজ্যের সব জনপ্রতিনিধি ও দায়িত্বে থাকা অফিসার থাকবেন নিজের এলাকায় প্রাপকদের হাতে চাবি তুলে দেওয়ার জন্য। উলুবেড়িয়া লোকসভা ও নোয়াপাড়া বিধানসভা আসনের উপনির্বাচন থাকায় হাওড়া ও উত্তর ২৪ পরগনার প্রাপকরা চাবি পাবেন ৪ ফেব্রুয়ারি, ভোটপর্ব মেটার পর।
এক কথায় এই প্রকল্প গ্রামীণ মানুষের জন্য ইউনিক প্রকল্প। কোনও রাজ্যে এমন হয়েছে বলে জানা নেই। খুশি মুখ্যমন্ত্রী সভায় নিজেই মনে করালেন এমনই আর এক প্রকল্পের কথা। যেটি তিনি নিজে সূচনা করেছিলেন জঙ্গলমহলের আমলাশোল থেকে। সেদিন এক সঙ্গে আঠারো হাজার গ্রামীণ রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল।
[লটারিতে কোটিপতি দুই বন্ধু, টিকিট বিক্রেতাও লাখপতি]
মাটি উৎসবটা এক কথায় অপূর্ব এক মিলনমেলা। ভূমিসংস্কার অপারেশন বর্গা নিয়ে সিপিএম গর্ব করত, কিন্তু কৃষিপ্রধান বঙ্গে এই ধরনের একটি উৎসব কেন বাম আমলে হয়নি সেটাই প্রশ্ন। বাংলার কৃষকরা কৃষিকে কোন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন সেটা জানা যাবে এখানে এলেই। একসময় এই বর্ধমান ছিল সিপিএম-এর অহংকার। কৃষিজমি ছিল ভিত্তি। আজ দিন বদলে গিয়েছে। এই বর্ধমান এখন আক্ষরিক অর্থেই সবুজ। পুরোটাই মমতার। খুব যথার্থভাবেই তাই তৃণমূলনেত্রী এই বর্ধমানকেই উৎসবের জন্য বেছে নেন। পাঁচ বছরে স্থায়ী প্রাঙ্গণে জমে উঠেছে মেলা। এমন সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মনে করালেন সিঙ্গুরে জমি ফেরত থেকে কৃষি জমিতে খাজনা মকুব, কী করেননি তিনি ‘মাটি’র জন্য। নিজের লেখা ‘মাটি’ কবিতা পাঠ করে তিনি বলেন, “এই মাটি আমাদের অহংকার। আর কৃষকরা আমাদের গর্ব। আমাদের সরকার পর পর পাঁচবার কৃষিকর্মন পুরস্কার পেয়েছেন আপনাদের জন্য। ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামের কথা ভুলিনি। ওই দিন কৃষক দিবস হিসেবে পালন করি। বন্যায় জমির ফসল হারানো কৃষকদের পাশে আমরা দাঁড়াই। আমরা কৃষক বাজার তৈরি করেছি। মাটি তীর্থ তৈরি করেছি। কৃষকরত্ন পুরস্কার দিচ্ছি। আরও অনেক কাজ কৃষকদের জন্য। কারণ তাঁরাই আমাদের গর্ব।”
নাম না করে কেন্দ্রীয় সরকারকেও আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রামীণ কাজে অথবা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বাঁধা দস্তুর। চলছে চাপানউতোর। এ নিয়ে প্রতিদিনই সরব মমতা। এদিনও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের চমকিয়ে কোনও লাভ নেই। বাংলা কারও চোখ রাঙানি সহ্য করবে না। এটাই হোক নতুন বছরের শপথ।” এই সভা সেরে মুখ্যমন্ত্রী চলে যান বোলপুরে। বুধবার আমোদপুরে তাঁর সরকারি কর্মসূচি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন।
[হোটেল কর্মীদের মারধর-ভাঙচুর, তারাপীঠে বিতর্কে বিহারের মন্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.