সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পাহাড়। একার হাতেই প্রায় সে অশান্তি মিটিয়ে শহরে ফিরেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক তারপরই ভাঙড় সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী। মাস কয়েক আগেই যে অঞ্চলে ছড়িয়েছিল অশান্তির আগুন, সেখানে দাঁড়িয়েই অন্যরকম বার্তা দিলেন মমতা। জানালেন, গ্রামবাসীদের যা অভাব-অভিযোগ তা শুনতে রাজি তিনি। আবদার ন্যায্য হলে তিনি তা নিশ্চয়ই রাখবেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা যেন কোনও প্ররোচনায় না পা দেন। কোনও অন্যায় আবদার তিনি মানবেন না।
[ রাজ্যে উদ্ধার ৪০ কোটি টাকার বিরল অষ্টধাতুর মূর্তি ]
বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন কেন্দ্র করে ক’দিন আগেই অগ্নিগর্ভ হয়েছিল ভাঙড়। যে জমি আন্দোলনকে ভিত্তি করে রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা, সেই জমিকে কেন্দ্র করেই এই আন্দোলন সরকারের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন ছিল না। কিন্তু এই আন্দোলনের নেপথ্যে যে অপপ্রচার অনেকাংশে দায়ী ছিল এদিন সে কথাই ফের তুলে আনলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচার করা হয়েছিল, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে হবু মায়েদের গর্ভের সন্তান। এদিন সে প্রচার উল্লেখ করে তিনি সাফ জানান, বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে কখনওই মায়েদের ক্ষতি হয় না। বরং তা না হলেই সন্তানদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রকল্প বন্ধ করতে প্রোমোটারি চক্র সক্রিয় বলে অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কারা এর ফায়দা লুটতে চাইছে তা প্রশাসন জানে। কিন্তু কেউ যেন নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গ্রামবাসীদের ভুল না বোঝায় সে বিষয়েই গ্রামবাসিকেই সতর্ক থাকতে হবে। গোটা প্রশাসন যে ভাঙড়ের মানুষের পাশে আছে তা বোঝাতেই এদিন মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার পুলিশ কমিশনারকেও সঙ্গে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এসপি-কে দেখিয়ে তিনি জানান, গ্রামের মানুষ কী চান, কী অভিযোগ তা যেন লিখিতভাবে জানান। তিনি নিজে তা খতিয়ে দেখবেন। যে কোনও ন্যায্য আবদার মানতে তিনি প্রস্তুত। কিন্তু কোনওরকম অন্যায় বরদাস্ত হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
[ পাহাড়ে আরও বড় আন্দোলনের ডাক মোর্চার, রুখতে মরিয়া রাজ্য প্রশাসন ]
ভাঙড়ে অশান্তির পিছনে বহিরাগত যোগের প্রসঙ্গ আগেও উঠেছিল। এদিন তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, মাওবাদীরা এর সুবিধা নিচ্ছে। গ্রামের মানুষের আন্দোলনের ছবি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা তুলছে অন্য দেশ থেকে। তিনি জানান, এরাই গ্রামে অস্ত্র ঢোকাচ্ছে। কিন্তু তা রুখতে প্রশাসনের বেশি সময় লাগবে না বলেও গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন। দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষের অসন্তোষ থাকলে তাও জানানোর কথা বলেন। আরাবুল, কাইজার, নান্নুদের মতো স্থানীয় নেতাদের নাম করেই তিনি বলেন, কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা যেন খোদ তাঁকে জানানো হয়। তিনি তার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাঁর উপর যদি আস্থা থাকে, মানুষ যদি উন্নয়ন চায়, তবে যেন কোনও প্ররোচনায় পা না দেন। তাঁর দাবি, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাজ্যের উন্নয়নকে স্তব্ধ করার চক্রান্ত চলছে। কিন্তু মানুষের সদিচ্ছাই তা রুখে দিতে পারে। পাহাড় প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ওখানেও কিছু নেতা তাঁকে চমকাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি শান্ত করে তবেই তিনি ফিরেছেন। তিনি বলেন, আন্দোলন করেই তিনি বড় হয়েছেন। তাই মানুষের যে কোনও বিপদে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোকে নৈতিক কর্তব্য বলেই মনে করেন তিনি। তাই তাঁকে চমকে লাভ নেই। বরং এ ধরনের অশান্তির পরিবেশকে কী করে সামলাতে হয় তা তিনিই জানান।
[ ‘ধর্ষণ’ দেখে ফেলায় প্রত্যক্ষদর্শীকে দা-এর কোপ, অভিযুক্ত বিজেপি নেতা ]
অভিযোগ, মাওবাদী যোগ, বহিরাগত তত্ত্বের থেকেও বেশি এদিন মানুষের পাশে থাকার আস্থাই ছড়িয়ে দিতে চাইলেন তিনি। পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন, মানুষ না চাইলে পাওয়ার গ্রিডের কাজ হবে না। কিন্তু মানুষকেই বুঝতে হবে তাঁরা উন্নয়ন চান, নাকি অন্য কিছু। তাঁদেরকে ভুল বুঝিয়ে কেউ বা কারা যদি স্বার্থসিদ্ধি করতে তবে মানুষ যেন তাঁদের চিহ্নিত করতে ভুল না করে, এদিন সে বিষয়েই গ্রামবাসীকে বারবার সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.