Advertisement
Advertisement

Breaking News

পুরুলিয়ায় কালো পাথর পাচারচক্র

বেআইনিভাবে সরকারী জমি অধিগ্রহণ, জঙ্গলমহলে রমরমিয়ে চলছে ব্ল্যাক স্টোন পাচারচক্র

অভিযোগ পেয়েই পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সম্প্রতি হানা দেন।

Illegal Black stone smuggling in Purulia, Barabazar
Published by: Sandipta Bhanja
  • Posted:June 18, 2020 9:06 am
  • Updated:June 18, 2020 9:07 am

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: মাটি কাঁপছে রোজ। যেন ফি দিন এখানে ‘ভূমিকম্প’! আর এই কম্পনে যেন জীবনের আয়ুটাই কমে যাচ্ছে। কেউ শ্বাস নিতে পারছেন না। কারও ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে রোগ। কিংবা বিঘের পর বিঘে চাষের জমি শুধু ধুলোয় ঢাকা। খোলা দরজা-জানালা দিয়ে খাবারেও মিশে যাচ্ছে পাথরের ধূলিকণা। দিন-রাত এই কম্পনে মাটিতে মিশে যাচ্ছে একের পর এক ডুংরী। ধ্বসে যাচ্ছে কালো পিচ রাস্তা। গ্রাস করে নিচ্ছে বনাঞ্চলকেও। তাই থমকে গিয়েছে বনদপ্তরের জাইকা প্রকল্পের কাজও। তবুও সবাই চুপ। আর এভাবেই পাতালজুড়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলছে পাথর খাদানের মাফিয়ারাজ। ব্ল্যাক স্টোন পাচারের রমরমা।

ছোটনাগপুর মালভূমির পুরুলিয়ার (Purulia) বরাবাজার। পুলিশ প্রশাসনের খাতায় জঙ্গলমহল। সেই জঙ্গলমহলেই প্রায় দু’দশক আগে থেকে এই বেআইনি কারবারের শুরু। প্রথমে গুটিকয়েক রায়তি জমি থেকে পাথর উত্তোলন করে তা ক্র্যাশারে ভাঙানো। তারপর ধীরে ধীরে শুরু কালো পাথরের মাফিয়ারাজ। গত দু’বছরে আর শুধু রায়তি জমি নয়। সরকারি খাস এমনকি বনদপ্তরের জমির ওপর জঙ্গল-টিলা ধ্বংস করে অবাধে চলছে পাথর লুঠ। বরাবাজারের লটপদা, বাঁশবেড়া, সিন্দরি, বেড়াদা এই চার গ্রাম পঞ্চায়েত মিলিয়ে এই বেআইনি কারবারের রমরমা। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১২০০ একর জমির ওপরে এই কারবার। খাদানের সংখ্যা প্রায় দু’শ। যেন এক-একটি মৃত্যুফাঁদ। কোনওটা দেড়শ ফুট, কোনওটা আবার দু’শ ফুট। তার পাশেই ক্র্যাশার। সংখ্যাটা প্রায় ৪৩। দু’-তিনটি বাদে সবই বেআইনি।

Advertisement

Advertisement

 

কীভাবে তৈরি হয়েছে এই খাদানের মৃত্যুফাঁদ? প্রথমে মাটি খুঁড়ে সেখানে ব্যাসল্ট বা ব্ল্যাক স্টোন দেখা মিললেই মেশিনের সাহায্যে ড্রিল করে পাওয়ার জেল যুক্ত ডিটোনেটর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর ব্যাটারি বা জেনারেটরের সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বড় বড় পাথরের চাঁই ভেঙে গেলে তা লরিতে করে যায় লাগোয়া ক্র্যাশারে। কীভাবে, কোন পথ দিয়ে, পুলিশের নজর এড়িয়ে এই বিপুল বিস্ফোরক যে খাদানে পৌঁছে যায় তা অজানা সকলের। মেশিনের সাহায্যে সেখানে গুটি পাথর তৈরির পর একশ সিএফটি’র দাম মেলে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।

[আরও পড়ুন: গ্রামের বুকেই শুয়ে থাকবে ছেলে, শহিদ রাজেশের সমাধি নিজের হাতে খুঁড়লেন পরিজনরা]

ফি মাসে কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কালো পাথরের রমরমা বেআইনি কারবার। যা চলেছে দীর্ঘ লকডাউনে। চলছে আনলক ওয়ানেও। তাই এলাকা থেকে অভিযোগ পেয়ে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সম্প্রতি এই বেআইনি খাদান বন্ধ করতে হানা দেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার, বিডিও, বনদফতর ও পুলিশকে জানিয়ে জেলা পরিষদের বন ও ভূমি সংস্কারের সহায়ী সমিতিকে নিয়ে যান সেখানে। কিন্তু হানা দিলে হবে কি? সর্ষের মধ্যেই যে ভূত! হানার খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় খাদান-ক্র্যাশার হয়ে যায় জনশূন্য। তবে এই বেআইনি কারবারের চিহ্ন দেখে এসেছেন তিনি। খাদানের পাথরের খাঁজে-খাঁজে ডিটোনেটর, তার। ফেলে যাওয়া জুতো, পাইপ। কিছুটা দূরে পাথর বহনের ট্রাক্টর, লরিও দাঁড়িয়ে। সভাধিপতি বলেছেন, “এই বেআইনি খাদান বন্ধ করতেই হবে। সরকারের রাজস্ব ক্ষতি কোনভাবেই বরদাস্ত করব না।” তাই তার নির্দেশে খাদান বন্ধের জন্য মাপজোক শুরু হয়েছে। দেখা যাচ্ছে অধিকাংশই বনদপ্তরের জমি।

এলাকার মানুষ বলছেন সবই হয় মেশিনের সাহায্যে। শ্রমিকের সংখ্যা মেরে কেটে ৫০০। লটপদা গ্রাম পঞ্চায়েতের তালাডি গ্রামের খাদান লাগোয়া জনবসতির ধীরেন মাহাতো, ধনঞ্জয় মাহাতো, দিবাকর কর্মকার বলেন, “আমরা পাথরের গাড়ি আটকালে পুলিশ চোখ রাঙায়। তাই আর প্রতিবাদ করি না। দিনে-রাতে ‘ভূমিকম্প’ আর পাথরের ধুলোই এখন নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তবে বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বনদপ্তরের জমি দখল করে বেআইনি কারবার বন্ধ করা হবে। আমি খোঁজ নিচ্ছি। বনদপ্তরের যা যা প্রয়োজন, সব পদক্ষেপ করবে।” কালো পাথরের মাফিয়ারাজ থেকে মুক্তি চায় এই বনমহল।

ছবি- অমিতলাল সিং দেও

[আরও পড়ুন: ঘরে ফিরতেই কাজ, কর্মশালা করে পরিযায়ীদের হাতে হাতে চাকরির অফার লেটার দিল প্রশাসন]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ