সৈকত মাইতি, তমলুক: ফাইনালে রুদ্ধশ্বাস জয়। দৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ২ রানে হারিয়েছিল ভারত। সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বাংলার সুরজিৎ ঘড়া। বিশ্বজয় করে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের বাড়িতে ফিরলেন এই বঙ্গসন্তান। ঘরের ছেলেকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে মাতল গোটা নন্দকুমার।
[সর্বশিক্ষা অভিযানের ক্যালেন্ডারে ছোট্ট নন্দিতার আঁকা ছবি, উচ্ছ্বাস কেতুগ্রামে]
নন্দকুমারে কাঞ্চনপুরে সুরজিৎ জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। অভাের কারণে সেইভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি সুরজিতের পরিবারের। তাই ছোট থেকেই হলদিয়ার চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমে তার বড় হয়ে ওঠা সুরজিতের। চিকিৎসার পাশাপাশি চলতে থাকে পঠন-পাঠন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছোট থেকে ক্রিকেটের নেশা ছিল সুরজিতের। অভাবকে দূরে সরিয়ে মনের জোরের ভরসা খেলা চালাতে থাকে। তবে এতে পরিবার সবরকমভাবে পাশে ছিল। শুরুর দিকে স্থানীয় ছেলেদের সাথে খেলত এই ক্রিকেটার। এরপর যেখানেই খেলা হত সেখানেই চলে যেত সুরজিৎ। মনের মধ্যে তাঁর বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন ভারতীয় দল জায়গা মিলবে। সত্যি তাঁর স্বপ্নপূরণ হল। সে ভারতীয় দৃষ্টিহীন ক্রিকেট দলের হয়ে খেলে পাকিস্তানকে হারিয়েছে।
[জাতীয় পতাকায় ১৭ বার বদল, কালী স্যারের জিম্মায় সযত্নে সেই ইতিহাস]
পাকিস্তান ও দুবাইয়ে বসেছিল দৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপ। আর সেই টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালে টানটান ম্যাচে পাকিস্তানকে হারায় ভারত। চ্যাম্পিয়ন দলের হয়ে খেলেছিল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমারের কাঞ্চনপুরের সুরজিৎ ঘড়া। বিশ্বজয়ের খবরে এলাকার মানুষ ও পরিবার পরিজনরা একপ্রস্থ আনন্দ করেছিল। আর উৎসব জমিয়ে রেখেছিল সুরজিৎআসার জন্য। শুক্রবার সে বাড়ি ফিরছে সেই খবর আগেভাগেই পেয়ে গিয়েছিলেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। তাই তাঁদের প্রিয় বন্ধু, ভাই,কাকুকে সংবর্ধনা জানানোর জন্য সকাল থেকে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উপস্থিত ছিল নন্দকুমারের ব্যবত্তারহাটে। সুরজিৎ বাস থেকে নামতেই ফুলের মালা ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাঁকে বরণ করে নেওয়া হয়। সেখান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে সুরজিতের সাথে শয়ে শয়ে এলাকার মানুষ এসেছিল। সুরজিৎ আসার খবর পেয়ে রাস্তার দুধারে ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছিল বহু মানুষ।
[সবথেকে বড় তেরঙ্গা উড়িয়ে নজির বাংলার, দেখুন ভিডিও]
এদিন সুরজিৎ বাড়ি ফিরে জানান, ভারতের জার্সিতে পাকিস্তানকে হারিয়ে দেশের পাশাপাশি বাংলা মান রাখতে পেরে তিনি বেজায় খুশি। আগামীদিন এইভাবে খেলার সাথে যুক্ত থেকে এগিয়ে যেতে চান। তাঁর লক্ষ্য আগামী ২০২০ তে টি ২০ তে ভারতের হয়ে খেলার। এদিনের এই বিপুল সংবর্ধনার জন্য কি আদৌ প্রস্তুত ছিলেন ভারতীয় দৃষ্টিহীন ক্রিকেট দলের এই তরুণ সদস্য? প্রকাশ্যেই জানালেন, এতটা সম্মান, ভালবাসা পাবেন গ্রামে ফিরে তা ভাবতেই পারেননি। আগামী দিনে এই ভালবাসাই তাঁকে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে জানালেন লাজুক সুরজিৎ।
ছবি: রঞ্জন মাইতি
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.