দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি পালানোর এক সপ্তাহ কাটেনি। তারই মধ্যে ফের দুষ্কৃতী তাণ্ডবে উত্তাল হুগলি জেলা সংশোধনাগার। বিচারাধীন বন্দিদের হাতে আক্রান্ত হলেন কারারক্ষীরা। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল সংশোধনাগারের ভিতরে। পুড়িয়ে দেওয়া হল গোডাউন। চলল ব্যাপক বোমাবাজি।
বুধবার বিকেলের এই ঘটনায় পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে, যে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। চন্দননগর পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার এবং জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল ছুটে যান। জেলসূত্রে খবর, নেপু গিরি এবং তার দলবল এদিন হামলা চালিয়েছে কারারক্ষীদের উপর। জেলের গেটের কাছের বিল্ডিংয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পুলিশও ঢুকতে পারেনি ভিতরে। পরে দমকলের তিনটি ইঞ্জিন আগুন নেভানোর পর পুলিশ ভিতরে ঢোকে। বেশ কয়েকজন কারারক্ষী জখম হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলসূত্রে খবর, খুন, তোলাবাজি-সহ একাধিক মামলায় হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী নেপু গিরি দীর্ঘদিন ধরে জেলে। তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে রাখা হয়েছিল। এদিন নেপু-সহ ১১ জনকে চুঁচুড়ায় একটি মামলার শুনানিতে নিয়ে এসেছিল পুলিশ। তারপর ট্রায়াল কোর্টের বিচারকের নির্দেশে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় হুগলি জেলে। জেলে তাণ্ডবের ঘটনার পরই বিচারকের এই নির্দেশ নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় আদালতে। হঠাৎ কেন নেপুর মতো কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে নিজের চেনা এলাকায় রাখা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। ঠিক কী হয়েছে?
বিকেল তখন সাড়ে পাঁচটা। সেলে ঢোকানোর আগে কারারক্ষীরা ওই বন্দিদের তল্লাশি শুরু করেন। কিন্তু নেপু তা করতে দিতে রাজি হয়নি। শুরুতে বচসা। তারপর এলোপাথাড়ি মার। কারারক্ষীদের উপর হামলে পড়ে নেপুবাহিনী। শুরু হয় ভাঙচুরও। বিপদ বুঝে কারারক্ষীরা আতঙ্কে গা ঢাকা দেন। কেউ টেবিলের তলায়, কেউ চেয়ারের। নেপুবাহিনীর হাতে তখন পড়ে পড়ে মার খাচ্ছেন কেউ কেউ। বাজতে থাকে সাইরেন। নেপুরা পালিয়ে যেতে পারে বুঝতে পেরে জেলের গেটে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। চত্বর তখন কার্যত রণক্ষেত্র। সুযোগ বুঝেই জেল লক্ষ্য করে বোমাবাজি শুরু করে নেপুর দলবল। সাইরেনের আওয়াজ পেয়েই ছুটে আসে পুলিশ। পরে র্যাফ।
প্রায় তিন ঘণ্টা টানা সাইরেন বাজে। এলাকায় আসে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের বিশাল পুলিশবাহিনী। দাউ দাউ করে তখন জ্বলছে সংশোধনাগারের কম্পিউটার রুম। খবর দেওয়া হয় দমকলে। নেপুবাহিনীর সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তখন ছটফট করছেন অনেক কারারক্ষী। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তখন কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায় পুলিশ। নেপুবাহিনী যাতে পালাতে না পারে তাই পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে পুলিশ। হুগলি ঘাট এলাকার সাধারণ মানুষকে বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়। রাত পর্যন্ত অশান্তি চলে। তবে কারও পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয় কুমার বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” বৃহস্পতিবার সকালে জেল পরিদর্শনে যান ডিজি কারা। বাড়ানো হয়েছে জেলের নিরাপত্তা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.