স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা ও ঢাকা: ওপার বাংলার সঙ্গে এপার বাংলাও ভাষা শহিদদের প্রণাম জানাল৷ সোমবার মধ্যরাতে ঢাকায় যখন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী মোমবাতি জ্বালছেন, তখন এপারের মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামেও শহিদ তর্পণ করলেন হাজার-হাজার মানুষ৷ মঙ্গলবার কলকাতায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিকেলে মূল অনুষ্ঠানটি হবে দক্ষিণ কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাবেন৷ শহরের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলাতেও এই দিনটি পরম শ্রদ্ধায় পালিত হচেছ৷ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও ব্যাপক সাড়া৷ ফেসবুক, টুইটার বা হোয়াটসঅ্যাপে চলছে ভাষা দিবসের পারস্পরিক শুভেচ্ছা বিনিময়৷
প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর শহরে বিড়লা তারামণ্ডলের উল্টোদিকে ভাষা শহিদ পার্ক গড়েছিলেন মমতা৷ এদিন দুপুর ১২.৩০টা নাগাদ এই পার্কে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ ছিলেন মন্ত্রী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন৷
মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের মতো৷ দিনটি বাঙালির গর্বের৷ অহঙ্কারের৷ মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় গোটা বাংলা গাইছে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’৷ দেশপ্রিয় পার্কের অনুষ্ঠানে থাকবেন শহরের মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার প্রমুখ৷ ঢাকায় বাংলা ভাষার দাবিতে মিছিল করার অপরাধে পাকিস্তানের পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছিল রফিকুদ্দিন আহমেদ, আবদুস সালাম, আবুল বরকত ও আবদুল জববারকে৷ বরকতের বাড়ি মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার বাবলা গ্রামে৷ অনুষ্ঠান হয় সীমান্তের পেট্রাপোলে৷ কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন থেকে দিনটির স্মরণে প্রভাতফেরিতে কর্মরত আধিকারিক ও কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন৷ বিশ্বভারতী, রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বাংলাদেশের পড়ুয়া আছেন৷ তাঁদের উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়৷ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোডে এদিন বেগম রোকেয়া শাখাওয়াতের স্মরণে ‘রোকেয়া মিনার’ উদ্বোধন হবে৷ বারুইপুর মহকুমা আদালতে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে রক্তদান করেন বিচারকরা৷ লইয়ারর্স ক্লার্ক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা৷ ছিলেন আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়৷ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাসে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান হয়৷
অন্যদিকে, ঢাকায় অমর একুশে ঘিরে দিনের চেয়ে রাতের উন্মাদনা ছিল বেশি। অর্থাৎ দিনকে হার মানায় রাতের একুশে।
একুশের প্রথম প্রহরে বাংলা বর্ণমালার সৈনিকদের অবদান ও সংগ্রামের দিনগুলোকে স্মরণ করে বাংলাদেশ। রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বদের থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নাগরিকের উপস্থিতিতে জেগে ওঠে স্মৃতির মিনার। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটির সূচনা করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাত ১২টা ১ মিনিটে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। কিছু সময় তারা নীরবে দাঁড়িয়ে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রীপরিষদের সদস্য ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান। শেখ হাসিনা আওয়ামি লিগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদবেদিতে ফুল দেন। এরপর একে একে ফুল দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ঢাকা-সহ সারাদেশে প্রতিটি স্থানে শিশু-বুড়ো-নারী সর্বস্তরের অংশগ্রহণ করেন।খালি পায়ে গুটিগুটি এগিয়ে যান তারা। রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় পালন করা হয়। হুইল চেয়ারে বসে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারাও আসেন ভাষা শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে। শহীদ মিনারমুখী মিছিলের সবার কণ্ঠে অমর সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি..।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.