Advertisement
Advertisement

প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে জয়ী জীবনের যুদ্ধে, পড়ুয়াদের কাছে প্রেরণা এই শিক্ষিকা

কী বার্তা দিচ্ছেন এই লড়াকু শিক্ষিকা?

International Women’s Day: Inspiring story of ‘differently abled’ Hooghly lady teacher
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 8, 2018 7:46 pm
  • Updated:September 13, 2019 2:53 pm

একবিংশ শতকেও লিঙ্গ বৈষম্য ঘুচল না। কন্যাসন্তানের জন্ম অনেকের কাছে অপরাধের মতো। এভাবে এসে গেল আরও একটা নারী দিবস। সমাজে নারী-পুরুষের তফাতের মধ্যে নিজেদের মতো করে মাথা উঁচু করে এগোনোর চেষ্টা করছেন অনেকেই। বাংলার নানা প্রান্তে রয়েছে এমন অজস্র সম্ভাবনা। সেই অর্ধেক আকাশের খোঁজে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল। এই সব আন সাং হিরোইনদের নিয়ে আমাদের বিশেষ প্রতিবেদন ‘তোমারে সেলাম’। আমাদের প্রতিনিধি হুগলির দিব্যেন্দু মজুমদার, এক যোদ্ধার সঙ্গে আলাপ করালেন।

যা নেই তা নিয়ে ভেবে কী লাভ! বরং যা আছে তা সম্বল করেই এগিয়ে যেতে হবে। লড়াই করতে হবে। জীবনে ছিনিয়ে আনতে হবে জয়। যিনি এ কথা বলছেন তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারেন না। কিন্তু তাতে কী! বহু খুদেকে জীবনে দাঁড় করানোর শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। চুঁচুড়ার স্কুলশিক্ষিকা জলি ভট্টাচার্য যেন তাই বাস্তব জীবনের লড়াইয়েরই আর এক নাম।

Advertisement

[  লাঠি-কুড়ুল হাতে অরণ্য বাঁচাচ্ছেন জঙ্গলমহলের লক্ষ্মীবাইরা ]

Advertisement

ঠিক কেমন তাঁর জীবন? একের পর এক বাধার পাহাড় টপকাতে টপকাতেই আজ আলোর মহলায় পৌঁছেছেন জলি। তবে যাত্রাটা সহজ ছিল না মোটেই। ছোটবেলায় মেয়ে খুব চঞ্চল ও হাসিখুশি ছিল বলে মা-বাবা আদর করে নাম রেখেছিলেন জলি। কিন্তু নিয়তির পরিহাস কে খণ্ডাবে! সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই পিঠের অসহ্য যন্ত্রণায় শয্যাশায়ী। মাস তিনেক ধরে হোমিওপ্যাথি-অ্যালোপ্যাথি সমস্তরকম চিকিৎসা চলে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তখন মেয়েকে নিয়ে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্য রওনা হন জলির অভিভাবকরা।

[  মার খেয়ে বাড়ি ছেড়েও পড়া ছাড়েননি আলমিনা ]

সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। ততদিনে পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে গিয়েছে কিশোরী জলি। শরীরে  বাসা বেঁধেছে বেডসোর। সেই বেডসোর থেকে পরে মুক্তি মিললেও নিজের পায়ে আর উঠে দাঁড়াতে পারল না জলি। কিন্তু তা সত্ত্বেও অবশ্য হেরে যায়নি। বরং জীবনের দেওয়ালে যেখানে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, ঠিক সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে শুরু করেছেন পালটা লড়াই।

BARITE MAYER SATHE JOLLY 02

বাবা কর্মসূত্রে সিউড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। সেখানকার স্কুল থেকেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে পাশ করেন। এরপর বীরভূমের সিউড়িতে একটি কলেজে ভরতি হতে গিয়ে জানতে পারলেন কলেজে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকতেই হবে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য আলাদা করে কোনও ছাড় নেই। বাধ্য হয়ে আর দশজনের মতো কলেজে ভরতি হওয়া সম্ভব হল না। শুরু হল নতুন করে এই পঙ্গু সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই। ইগনুতে ভরতি হয়ে সেখান থেকে অর্থনীতিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন। তারপর সিউড়িতে শুরু করেন গৃহশিক্ষকতার কাজ। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে স্কুলে শিক্ষকতার জন্য আবেদন জানান। সেখানে আর দশজনকে লড়াইতে পিছনে ফেলে জয়ী হয় জলি। ২০১১ সালে চুঁচুড়ার পিপুলপাতির কাছে জ্ঞানাঞ্জন জুনিয়র বেসিক স্কুলে ইংরেজির শিক্ষিকা হয়ে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। তারপর থেকেই পাকাপাকিভাবে চুঁচুড়ার গুটিয়া বাজারে বসবাস শুরু করেন।

[  খবরের ফেরিওয়ালা, সংসারের ছাতা হয়ে একাই ছুটে চলেন ফুলেশ্বরী ]

এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেই স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হন। বাবা-মা বা ভাই কারোর সাহায্য ছাড়াই হুইল চেয়ারে করে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। স্কুলেরও ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অত্যন্ত প্রিয় দিদিভাই একদিন না এলে মন খারাপ হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের দিদিভাই হল লড়াইয়ের প্রেরণা। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে শিক্ষিকা জলি ভট্টাচার্য বললেন, “আমার লড়াই আমাকেই করতে হবে। আমার হয়ে অন্য কেউ আমার কাজ করে দেবে না। তাই দুঃখ নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। আমার ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার। কিন্তু সে সুযোগ পাইনি। তাই যা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল তা পছন্দের না হলেও অর্থনীতি নিয়ে পড়েছি।” তাই সমাজের মহিলাদের উদ্দেশ্য তাঁর বার্তা, ‘‘আপনার মধ্যে যা আছে তা নিয়ে ভাবুন। তাহলেই আর দশজনকে পিছনে ফেলে আপনি এগিয়ে যাবেন।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ