দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ২২ বছর পর বিচার পেল গোন্দলপাড়ার চৌধুরি পরিবার। ভুল চিকিৎসায় পনেরো বছরের কিশোরের মৃত্যুতে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালকে দোষী সাব্যস্ত করল হুগলির ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। আগামী এক মাসের মধ্যে মৃতের পরিবারকে ১৯ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
১৯৯৬ সালের ঘটনা, বছর পনেরোর দীননাথ চৌধুরিকে রাস্তার কুকুরে কামড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা তাকে ওষুধ দেন। নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দশটি অ্যান্টি র্যাবিজ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় ওই কিশোরকে। কিন্তু তাতে কোনও কাজই হয়নি। ইঞ্জেকশনের কোর্স শেষ হওয়ার মাস দু’য়েক পর থেকেই শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে দীননাথের। তার জ্যেঠু শঙ্কর চৌধুরি জানিয়েছেন, “কিছুদিন পর থেকেই শরীর খারাপ হতে শুরু করে ওর। ঘরবন্দি হয়ে থাকত দীনু। শেষের দিকে বিছানার সঙ্গে লেগে গিয়েছিল। জলাতঙ্ক রোগ ততদিনে ছড়িয়ে পড়েছে ওর শরীরে।” অসুস্থ দীননাথকে পরে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতাল থেকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তিনদিন পর মারা যায় সে। কিন্তু কেন কাজ করল না অ্যান্টি র্যাবিজ ইঞ্জেকশন?
তদন্তে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালের জলাতঙ্কের প্রতিষেধক সাধারণ ‘রুম টেম্পারেচারে’ রেখে দেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী এই ধরনেই দামি ইঞ্জেকশন ফ্রিজারে রাখতে হয়। ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখার কারণেই ওই সমস্ত ইঞ্জেকশনের গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এমনটাই মনে করছে দীননাথের পরিবারের লোকেরা। ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিল চৌধুরি পরিবার। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর বিচারের আশায় মানবাধিকার সংস্থা এপিডিআর-এর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। শুরু হয় দীর্ঘ লড়াই। অবশেষে বুধবার বিচার পেল চৌধুরি পরিবার। এরই মধ্যে ছেলের শোকে গতবছর চলে গিয়েছেন বাবা বদ্রি চৌধুরি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় শুনে দীননাথের মা জানিয়েছেন, “এতদিনে ছেলেটা সুবিচার পেল। অকালে ছেলেটা চলে যাওয়ার পরেই মনমরা হয়ে গিয়েছিল ওর বাবা। গতবছর ওর বাবাও চলে গিয়েছে আমাদের ছেড়ে। আজ এই খবরটা পেলে ও সবচেয়ে বেশি খুশি হত।” ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায় অনুযায়ী ১৯ লক্ষ টাকা দিতে হবে পরিবারকে। এছাড়াও এই মামলার খরচের ১০ হাজার টাকাও পরিবারকে দিতে হবে চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.