Advertisement
Advertisement

১৫ বছর ধরে ১ টাকা বেতন রেখে সমস্তটাই স্কুলে দান শিক্ষকের

চাষ করে যা আসে তাঁতেই চলে যায় সংসার৷ শিক্ষক দিবসে তাঁকে কুর্নিশ।

Kalna teacher donates monthly salary to school
Published by: Kumaresh Halder
  • Posted:September 5, 2018 3:40 pm
  • Updated:September 5, 2018 3:40 pm

রিন্টু  ব্রহ্ম, কালনা: দেখেছেন অভাব৷ পেটে খিদে নিয়ে স্বপ্নের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে৷ নিজের পরিশ্রমে পেয়েছিলেন শিক্ষকতার চাকরি৷ ভেবেছিলেন, বদলে যাবে গোটা জীবন৷ কিন্তু, না৷ সুখের জীবনের হাতছানি কাটিয়ে স্কুলের জন্যই প্রাণপাত করছেন কালনার তেহাট্টা গ্রামের শিক্ষক গঙ্গাধর পাল৷ নিজের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে গত ১৫ বছর ধরে প্রতিমাসে বেতন মাত্র ১ টাকা রেখে বাকিটা দান করে চলেছেন ‘চাষার ছেলে’৷

[মদের দোকান চালাচ্ছেন খোদ সাংসদের নিরাপত্তারক্ষী! প্রতিবাদে সরব এলাকাবাসী]

চরম আর্থিক অনটনের মধ্যেই সম্পূর্ণ করেছিলেন নিজের উচ্চশিক্ষা৷ বাবা কোনও-রকমে জমিতে চাষ করে সংসার চালিয়েছেন৷ অর্থকষ্টেও চালিয়ে যেতেন পড়াশোনা৷ লক্ষ্য ছিল, বড় হয়ে ভাল চাকরি করে পরিবারের আর্থিক সংকট মেটানো৷ আর সেই লক্ষ্যেই বাংলায় এমএ করে সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার জন্য চেষ্টা শুরু করেন৷ কিছু দিনের মধ্যে চাকরিও পান৷ কালনার কুতুবপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে শিক্ষকতা শুরু৷ কিন্তু প্রথম দিন স্কুলে পড়াতে গেলেই পালটে যায় আগের সমস্ত পরিকল্পনা৷ স্কুলে গিয়ে দেখেন, ঠিক তিনি যেভাবে কষ্ট করে পড়াশোনা করে বড় হয়েছেন, তাঁর থেকেও বেশি কষ্ট করছেন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা৷ নতুন স্কুলেরও অবস্থা ভাল নয়৷ সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার আর্জি জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি৷ তাই ঠিক করেন, নিজের বেতনের টাকা দিয়েই স্কুল ও ছাত্রছাত্রীদের উন্নতিতে দান করবেন৷ তারপর, থেকে আর কোনও দিন নিজের পকেটে ভরাননি মাইনের টাকা৷ গত ১৫ বছর ধরে প্রতিমাসে মাইনের মাত্র ১ টাকা রেখে সমস্তটাই দান করেছেন কর্মরত স্কুলকে৷ তার, মাইনের টাকাতেই বানানো হয়েছে স্কুল বাড়ি, পানীয় জলের পাম্প, কম্পিউটার এমনকি দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের বই খাতাও কেনার ব্যবস্থা৷ এমনই মহান মনের জন্য স্থানীয় মানুষদের কাছে খুবই প্রিয়, শিক্ষক গঙ্গাধর পাল৷

Advertisement

[লালকুঠি ঘিরে পাহাড়ে নতুন পর্যটন কেন্দ্র, দার্জিলিংয়ে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]

Advertisement

শুধু তাই নয়। ৪০০ ছাত্রছাত্রীর স্কুলে সরকার বরাদ্দ করেছে মাত্র ৬ শিক্ষক। তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যাতে অন্য ছাত্রছাত্রীদের থেকে পিছিয়ে না পড়ে তাই নিজের টাকা দিয়েই স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষক-সহ একজন অঙ্কের শিক্ষকও নিয়োগ করেছেন তিনি৷ সরকার নয়, তাঁর প্রাপ্ত মাইনের টাকা ভাগ করেই ওই দুই শিক্ষকের হাতে মাইনে তুলে দেওয়া হয়৷ ওই কুতুবপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের ভিতরেই রয়েছে আরও একটি প্রাথমিক স্কুল ও একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র৷ তাই স্কুলের বাচ্চাদের খেলার জন্য পর্যাপ্ত খেলার মাঠেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন গঙ্গাধর বাবু। দান করা মাইনের টাকা থেকেই সব খরচ না করে প্রতিমাসে কিছু কিছু টাকা জমিয়েছেন স্কুলের মাঠ কেনা জন্য৷ ২০০৫ থেকে বিগত ১৫ বছরে সেই টাকা বাড়তে বাড়তে ৩ লক্ষের বেশি  টাকা হয়েছে৷ আরও কিছু বাড়লে সেই টাকা দিয়েই পাশের মাঠটি কিনবেন ওই শিক্ষক৷ স্কুল জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৫ বছরে মাত্র তিন দিন মাত্র স্কুল অনুপস্থিত ছিলেন তিনি৷ বাকি দিনগুলি যতই সমস্যা হোক না কেন, ৩ কিমি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে এসেছেন তিনি৷

[ভাতের থালায় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, ময়ূরেশ্বরে যুবক খুনে রহস্য জটিল]

এই কর্মকাণ্ডের জন্য সমগ্র বাংলার শিক্ষকদের মধ্যে নজির সৃষ্টি করেছেন কালনার তেহাট্টা গ্রামের শিক্ষক গঙ্গাধর পাল৷ তবে, নিজের কাজ নিয়ে কিছু নিয়ে বেশি প্রচারও পছন্দ করেন না বর্তমানে ওই স্কুলের হেডস্যর গঙ্গাধর বাবু৷ তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরাই আমার ছেলে মেয়ে৷ তাঁদের কথা ভেবেই জীবন কাঁটিয়ে দিইয়েছি৷ ওদের অসুবিধে হবে বলে বিয়ে করিনি৷ প্রতিটি ছাত্রছাত্রীই আমার সন্তান৷ ওদের জন্যই সব কিছু৷’’ তিনি আরও জানান, সমস্ত মাইনে স্কুলে দিচ্ছি৷ তাই অনেকে জানতে চান আমার চলে কিভাবে? তিনি জানান, কালনা অকালপৌষ গ্রামে তাঁদের পৈতৃক ভিটেতে ৩ বিঘে জমি রয়েছে৷ তাঁতেই চাষ করে যা আসে তাঁতেই চলে যায়৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ